প্রায় দেড় মাস ধরে বেশ কিছু হনুমানের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের মালিরবাগান পাড়ার বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে অন্তত ৫২ জনকে হনুমানে আঁচড়ে-কামড়ে জখম করেছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। আতঙ্কে তাঁদের বেশির ভাগই এখন সকাল-বিকেল বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখছেন। বাইরে বেরোলে মহিলা-পুরুষ, ছাত্রছাত্রী সকলেই হাতে লাঠি নিচ্ছেন। হনুমান ধরার দাবিতে বুধবার সকাল ১০টা থেকে এক ঘণ্টা বনগাঁ-চাকদহ সড়ক অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ গিয়ে বন দফতরের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। |
বনগাঁর মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “জেলা বন দফতরকে চিঠি দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে।” জেলা বনাধিকারিক কৌশিক সরকার বুধবার বলেন, “বন দফতরের কর্মীরা এ দিন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। তাঁরা খাঁচায় তিনটি হনুমান ধরেছেন। গতকালও বন দফতরের ওয়াইন্ড লাইফ বিভাগের লোকজন গিয়ে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে হনুমান ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হননি। বৃহস্পতিবার তাঁরা ফের ওই এলাকায় গিয়ে চেষ্টা করবেন।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপালনগরের ওই এলাকায় গাছপালা, মূলত ফলের গাছ বেশি হওয়ায় সারা বছরই হনুমান দেখা যায়। কিন্তু আগে কখনও হনুমানের এমন হিংস্র আচরণ দেখা যায়নি। দিনে-রাতে এ বার এক একটি দলে ১০-১৫টি করে হনুমান আসছে। কারও বাড়ির জানলা খোলা থাকলে তার ভিতর দিয়ে হাত ঢুকিয়েও বাসিন্দাদের আঁচড়ে দিচ্ছে। |
ইতিমধ্যে হনুমানের আঁচড়-কামড়ে জখম পুকাই বিশ্বাস, খগেন সাধুখাঁ, স্কুল শিক্ষক দিলীপ বিশ্বাস, শ্যামল পাল, রবি সাহারা রীতিমতো আতঙ্কিত। তাঁরা বাড়ি থেকে বেরোতেই ভয় পাচ্ছেন। একই অবস্থা অনেকের। ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই স্কুলে যাচ্ছে না। কেউ কেউ হাতে লাঠির সঙ্গে বিস্কুটও রাখছেন। হনুমান দেখলেই বিস্কুট ছুড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে খুব একটা সুবিধা হচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। বাধ্য হয়ে চার-পাঁচ জন এক সঙ্গে যাতায়াত করছেন। হনুমানের তাণ্ডব প্রতিহত করতে ইতিমধ্যে গ্রামের কিছু যুবককে নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘প্রতিরোধ বাহিনী’। তাঁরা সকাল-রাতে লাঠি হাতে এলাকায় পাহারা দিচ্ছেন। ওই বাহিনীর সদস্য সত্যজিৎ দত্ত বলেন, “১৭ জুন থেকে এখানে হনুমানের তাণ্ডব শুরু হয়েছে। বন দফতরকে জানানো হয়েছে। বন দফতর হনুমান ধরতে খাঁচা দিয়েছে। আমরা তা বিভিন্ন জায়গায় পাতছি। কিন্তু তাতে কিছু লাভ হচ্ছে না।” |
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর জানিয়েছেন, মালিরবাগান পাড়া-সহ গোপালনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গত দেড় মাসে হনুমানের আঁচড়-কামড়ে জখম ৯০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে ওই ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।
|