ইটভাটার দাপটে শিকেয় চাষবাস
টভাটার দৌরাত্ম্যে থমকে গিয়েছে চাষ।
জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে এমনটাই অভিযোগ জানিয়েছেন করিমপুর ২ ব্লকের রামনগর ও নারায়ণপুর এলাকার প্রায় শ’খানেক চাষি। প্রশাসনের কাছে তাদের দাবি ‘ক্ষতিকারক’ ওই ইটভাটাগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও দিতে হবে। ওই কৃষকদের অভিযোগ, গত কয়েক মাসে স্থানীয় বেশ কিছু ইটভাটার কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারায়ণপুর ও রামনগর এলাকার প্রায় এক হাজার বিঘার কলা চাষ কলাবাগান। ইটভাটা থেকে নির্গত গরম ছাই এসে পড়ে কলাগাছের পাতায়। ফলে পাতা ঝলসে যাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনও একেবারে তলানিতে।
এলাকায় অন্যতম অর্থকরী ফসল কলা। ফলে সেই কলাচাষ এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রীতিমত ভেঙে পড়েছেন কলা চাষিরা। তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘রামনগর ও নারায়ণপুর এলাকা থেকে অভিযোগ পেয়েছি। প্রশাসনিকভাবে ওই ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে। আইন অনুযায়ী ওই ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ইটভাটার ছাইয়ে ক্ষতির মুখে কলা চাষ। —নিজস্ব চিত্র।
কলা চাষিরা জানান, প্রতিনিয়ত ইটভাটা থেকে নির্গত ছাই এসে পড়ে কলাপাতায়। পুরু হয়ে জমে থাকে সেই ছাই বিশেষ করে বর্ষার আগের দু-মাস তড়িঘড়ি ইট পোড়ানোর কারণে সেই গরম ছাই উড়ে এসে কলার খেত প্রায় তছনছ করে দিচ্ছে। হর্টিকালচার দফতরেরও একই মত। স্থানীয় কলাবাগানের মালিক সিরাজুল গাজি, মনিরুল বিশ্বাস, বরকত আলিরা বলেন, ‘‘কারও ৪০ বিঘে কারও ৩০ বিঘে করে কলাবাগান রয়েছে। ইটভাটার কারণে কলাবাগান পুরো শেষ হয়ে যেতে বসেছে। শুধু কলাচাষেই নয় ইটভাটাগুলোর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে অন্যান্য চাষআবাদেও।’’ বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল ও পরিচর্যা বিভাগের অধ্যাপক ভাগবতচন্দ্র বণিক বলেন, ‘‘ইটভাটা থেকে নির্গত ছাই যে কোন ফলের উপরেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কলাপাতা এমনিতেই বেশ বড়। ফলে সেখানে প্রচুর পরিমাণে ছাই জমে থাকে। ফলে তাদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। প্রতি লিটার জলে ০.২ মিলি থেকে ০.৮ মিলি সোহাগা মিশিয়ে গাছে স্প্রে করে দেখতে পারেন।’’
রাজ্যের উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন,‘‘ ফসলের উপরে বিমা চালু করা হয়েছে ফলে প্রাকৃতিক বা অন্য কোন কারণে চাষআবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা টাকা পাবেন।’’ কিন্তু ইটভাটাগুলি কী বৈধ? উত্তর মেলেনি উজ্জ্বলবাবুর কাছে।
প্রশাসনসূত্রে জানা গিয়েছে শুধু করিমপুর বা তেহট্টে ইটভাটা নিয়ে অভিযোগ এই নতুন নয় নদিয়া জুড়েই একাধিকবার ইটভাটার দৌরাত্ম্য নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তেহট্ট মহকুমা জুনেই রয়েছে প্রায় ১০০ টি ইটভাটা তার মধ্যে প্রায় ৪০ টি ইটভাটাই বেআইনি আর এই বিপুল সংখ্যক ইটভাটাকে মাটির জোগান দিতে তৈরি হয়েছে মাটি মাফিয়াদের একটা বিরাট চক্রও।
তেহট্ট ১ ব্লক কৃষক সভার সম্পাদক ভক্তরাম ঘোষ বলেন, ‘‘কোন নিয়ম নীতির পরোয়া না করেই মাটি মাফিয়াদের অত্যাচারে বদলে যাচ্ছে জমির শ্রেণী। দিনকে দিন কৃষি জমির পরিমাণও কমে যাচ্ছে সবার আগে প্রশাসনের উচি বেআইনি ইটভাটাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তেহট্ট থেকে করিমপুর পর্যন্ত রাস্তার পাশের চাষের জমির মধ্যেই গজিয়ে উঠেছে অজস্র ইটভাটা এগুলো কার অনুমতি নিয়ে চলছে? পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের কোন অনুমতি আদৌ আছে কি?’’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.