করলা নদীতে মাছ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেও নদীতে দূষণ নিয়ে মৎস্য দফতর উদ্বেগে রয়েছে। বিষ-কাণ্ডের পরে প্রায় আট মাস ধারাবাহিক ভাবে পরীক্ষা চালিয়ে, চলতি মাসে করলা নদীতে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মাছের পোনা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মৎস্য দফতর। গত বছরের ২৮ নভেম্বর জলপাইগুড়ি শহরের বুক চিরে যাওয়া করলা নদীতে বিষক্রিয়ায় প্রচুর মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর পরে প্রায় চার মাস করলা নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সম্প্রতি নদীতে পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু ছোট মাছ ছেড়ে পরীক্ষা চালায় মৎস্য দফতর। গত জুলাই মাসে করলা নদীর একটি অংশে পুটি, পয়া, ট্যাঙরা, খলসে প্রজাতির মাছ ছাড়া হয়। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাছগুলি নদীর জলে সুস্থই রয়েছে। নদীর জলে এখন বিষের কোনও প্রভাব নেই। করলা নদীতে বিষ-কাণ্ডে আমেরিকান রুই, মৃগেল, বোয়াল, কাতলের মত বড় মাছ থেকে শুরু করে রাশি রাশি ছোট মাছ মারা যায়। |
করলা নদীতে প্রচুর মাছের মৃত্যুতে শহরের বাজারগুলিতে মাছের যোগানে প্রভাব পড়ে। নদীতে মাছের সংখ্যাও যথেষ্টই কমে যায় বলে মৎস্য দফতরের রিপোর্টে জানানো হয়। সেই ঘাটতি পূরণ করতেই এবার উদ্যোগী হয়েছে মৎস্য দফতর। তবে এবার যে মাছ ছাড়া হবে তাতে নদীয়ালি প্রজাতির ছোট মাছকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কালবাউস, বাটা, কুর্শা, ট্যাংরা, শিঙ্গি, সোনা ট্যাংরার মত প্রজাতির মাছ ছাড়া হবে। দফতরের অফিসারদের আশা, আগামী তিন মাসে করলা নদীতে মাছেদের ভারসাম্য স্বাভাবিকে ফিরে আসবে। মৎস্য দফতরের জলপাইগুড়ির সহকারি অধিকর্তা পার্থপ্রতিম দাস বলেন, “বিষকাণ্ডের পরে প্রথমবার করলা নদীতে মাছ ছাড়া হবে। গত আট মাসে ক্রমাগত জলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে নদীর জল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। বিষক্রিয়ার প্রভাব আর নেই। সেই কারণে মাছ ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” করলা নদীতে দূষণের প্রবণতা নিয়ে জলপাইগুড়ি পুরসভা ও জেলা প্রশাসনকে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছে মৎস দফতর। দফতর সূত্রের খবর, রিপোর্টে শহরের দিনবাজার এলাকা এবং লাগোয়া বেশ কিছু চা বাগান এলাকা থেকে নদীতে ক্রমাগত দূষিত বর্জ্য মিশে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সহকারি মৎস অধিকর্তা পার্থপ্রতিম বাবু বলেন, “জলে বিষের প্রভাব না থাকলেও এখন নদীর যা পরিস্থিতি তা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়ার নয়। এখনও সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে।. শহরের বিভিন্ন বাজার এলাকা থেকে ক্রমাগত নদীতে দূষণ ছড়াচ্ছে। বিষয়টি আমরা পুরসভাকে জানিয়েছি।” এই বিষয়ে জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “করলায় দূষণ ঠেকাতে পুরসভা নজরদারি চালায়। দিনবাজার বা অন্য বাজার থেকে নদীতে যাতে বর্জ্য না ফেলা হয় তা দেখা হচ্ছে।” |