পর্যটনে টান পড়ার আশঙ্কায় বিকল্প পথ খুঁজছে কাজিরাঙা
কাজিরাঙার ‘গেট’ খুলতে আর মাস তিনেক বাকি। গত বারের মতো পর্যটকদের চাপ থাকলে হয়তো পুজোর সময় খুলে দেওয়া হতে পারে দরজা। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আর কি গহিন অরণ্যে হাতি বা জিপ সাফারির সেই অমোঘ আকর্ষণ বেঁচে থাকবে?
কাজিরাঙার বুক চিরে রাস্তা বানাতে না দেওয়ায় সংঘর্ষ, জঙ্গলের ভিতরে পাথরকুচির কারখানা চালানো নিয়ে সংঘর্ষ, কাজিরাঙা চত্বরে থাকা জবরদখলকারীদের গ্রামগুলির উচ্ছেদ নিয়ে সংঘর্ষ— এই সবেরই মূলে ‘ব্যাঘ্র প্রকল্প’-এর জুজু। ২০০৬ সালে কাজিরাঙাকে ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। প্রকল্প এলাকায় কোনও রকম পরিবর্তন, কৃত্রিম নির্মাণ, সড়ক নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ফলে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ থমকে গিয়েছে। সম্প্রসারণের কাজে যুক্ত ঠিকাদাররা ক্ষুব্ধ।
কাজিরাঙা কোহরা রেঞ্জে সাফারির সময় দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি।
দীর্ঘকাল ধরেই কাজিরাঙার নানা অংশ জবরদখল করে বসতি রয়েছে। কিন্তু ব্যাঘ্র প্রকল্পের জমি জবরদখল করা যায় না। তাই গত বছর বেশ কিছু গ্রাম উচ্ছেদের চেষ্টা চালানো হয়। সে ক্ষেত্রেও স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন ও গ্রামবাসীদের চাপে পিছিয়ে আসে রাজ্য। এ বার প্রকল্পের ‘কোর’ অঞ্চলে পর্যটন বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতেই জোট বেঁধেছে পর্যটন সংস্থা, হোটেল মালিক, জিপ চালকদের সংগঠনগুলি। তাদের ক্ষোভের শিকার ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ, শুমারি কর্মীরাও। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এসে গিয়েছে। তবে কি ফের সরকারের সঙ্গে পর্যটন-নির্ভর স্থানীয় বাসিন্দাদের সরাসরি সংঘাত শুরু হবে?
গত ২৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট একটি অন্তর্বর্তী রায়ে জানায়, ব্যাঘ্র প্রকল্পের কোর এলাকায় পর্যটন চলবে না। অথচ কাজিরাঙায় অন্তত ৪৩০ বর্গ কিলোমিটার কোর এলাকা। কাজিরাঙার এই বিস্তীর্ণ এলাকায় রোজ সকাল-বিকেল, অন্তত ১৫০টি জিপ ও ২০টি হাতি পর্যটকদের নিয়ে যায়। কোহরা, বাগোরি, বুড়াপাহাড় ও অগরাতলি রেঞ্জের ভিতরে গড়ে ৩০ কিলোমিটার দূরত্ব অবধি প্রবেশ করতে পারেন পর্যটকরা। জিপ, হাতি পৌঁছে যায় কোর এলাকার গভীরতম অঞ্চলেও, যা পুরোদস্তুর বেআইনি।
এই পরিস্থিতিতে বনবিভাগ ও পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি যৌথ উদ্যোগে চারটি রেঞ্জেই বিকল্প পর্যটনের রাস্তা খুঁজছে। ভাবা হচ্ছে নৌকাবিহারের কথাও। কাজিরাঙার এক কর্তা জানান, হরিণ বা গন্ডার দেখা কোনও সমস্যা নয়। জঙ্গলের চারটি রেঞ্জের পাশ দিয়ে গেলেই গন্ডার দেখা যাবে। সেই ভাবেই বিকল্প ‘রুট’ বানাতে হবে। দেখতে হবে বাঘের ঘোরাফেরার সঙ্গে ওই রুটের সংঘাত যেন না হয়। তবে কাজিরাঙায় বাঘ বৃদ্ধির খবর পেয়ে পর্যটকদের যাতায়াত বেড়েছে। অনেকে বাঘ দেখেওছেন। জিপ চালক ও মাহুতদের কথায়, গন্ডার নয়, পর্যটকদের আজকাল একটাই আকুতি, ‘বাঘ দেখাতে হবে।’ কিন্তু সিংহভাগ পর্যটকই এক ঘণ্টার সফরে বাঘ দেখতে পান না। ফের আসেন তাঁরা। জিপ চালক, হাতির মালিক ও হোটেল মালিকদের আশঙ্কা, যদি প্রচার হয়ে যায় যে কাজিরাঙায় আর বাঘের এলাকায় ঘোরানো হবে না, তা হলেই বিপদ। কেবল গন্ডার ও হরিণ দেখার জন্য গুয়াহাটির অদূরে পবিতরা অভয়ারণ্য ছেড়ে কাজিরাঙা অবধি বহু পর্যটকই পাড়ি দেবেন না।
চাপ বাড়ছে অন্য রাজ্যেও। পর্যটন বন্ধের ওই নির্দেশ ফের বিবেচনা করার আবেদন নিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে এ দিন জানান মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলেও এ দিন জানান শিবরাজ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.