সম্পাদকীয় ২...
লক্ষ্মণরেখা
গুয়াহাটি হউক কিংবা ম্যাঙ্গালোর, রাতের পার্ক স্ট্রিট হউক কিংবা সন্ধ্যার বারাসত স্টেশন, মহিলারা এ দেশের সর্বত্রই বিপন্ন। মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের সংখ্যা যে দ্রুত গতিতে বাড়িতেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরিসংখ্যান ছাড়াও প্রতিদিনকার সংবাদপত্র ও বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমে তাহার প্রমাণ অজস্র। এই অপবৃদ্ধির একটি কারণ অবশ্যই আইনরক্ষকদের শৈথিল্য। পুলিশের তরফে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করিতে না-চাওয়া, অভিযোগ পাইয়াও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারে টালবাহানা, অকুস্থলে পৌঁছাইতে অহেতুক বিলম্ব করার মধ্যে সেই মনোভাব স্পষ্ট হইয়া ওঠে। গণমাধ্যমে প্রচারিত হইয়া ঘটনা যখন সর্বজনীন ধিক্কার আবাহন করে এবং সরকার তথা প্রশাসনকে বিষম অস্বস্তি ও লজ্জায় ফেলিয়া দেয়, কেবল তখনই রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের চাপে পুলিশ তৎপর হয়। পুলিশ জানিয়া গিয়াছে, রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষও সহসা তাহাকে তৎপর হইতে বলিবে না, যত ক্ষণ না গণমাধ্যম হইচই করিতেছে।
রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ প্রায়শ সমাজেরই মাথাদের লইয়া তৈরি। বারাসতে যেমন শাসক দলের বিধায়ক (যিনি আবার প্রাক্তন সিনেমা-নায়কও) লাঞ্ছিত মেয়েটির পোশাক লইয়া প্রশ্ন তুলিলেন। বিধায়কের ‘যুক্তি’ লাঞ্ছনাকারীদের সমর্থন জানাইবার নামান্তর। একই ধরনের কুযুক্তি গুয়াহাটিতে দ্বাদশ শ্রেণির কিশোরী পড়ুয়ার প্রকাশ্য, সমবেত ও বেসরকারি চ্যানেলে জীবন্ত সম্প্রচারিত যৌন নিগ্রহের প্রসঙ্গেও কাহারও কাহারও মুখে শুনা গিয়াছে। ম্যাঙ্গালোরের জন্মদিনের পার্টিতে জমায়েত কলেজ-পড়ুয়া মেয়েদের উপর হিন্দুত্ববাদী যুব সংগঠনের লাঠিয়ালদের পৌরুষ প্রদর্শনের পিছনেও একই যুক্তি। মেয়েদের পোশাকের দৈর্ঘ্য কতটা হইবে, কত রাত পর্যন্ত তাহারা নিশিনিলয়ে যাতায়াত করিতে পারিবে, পুরুষ-অভিভাবক না লইয়া মহিলাদের রাস্তায়-ঘাটে বাহির হওয়া উচিত কি না, পার্ক-উদ্যানের মতো প্রকাশ্য জনস্থানে কিংবা পাঁচিল-ঘেরা বাড়ির চৌহদ্দিতেও মেয়েরা ছেলেদের সহিত মেলামেশা করিতে পারিবে কি না এ সবই তো ভারতীয় সমাজে বরাবর পুরুষরাই স্থির করিয়াছে। রাজ্যে-রাজ্যে যে সব রাজনৈতিক দল ভোটে জিতিয়া ক্ষমতাসীন, তাহার মন্ত্রী ও বিধায়করাও একই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায় আনখশির আপ্লুত।
তাই মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধই এ দেশে একমাত্র অপরাধ, যাহাতে অপরাধের শিকার যাঁহারা, তাঁহাদের দোষত্রুটি, সম্ভাব্য স্খলনই জনসমাজের, এমনকী প্রশাসনেরও চর্চার বিষয় হয়। কিশোরীটি কেন স্বল্প দৈর্ঘ্যের স্কার্ট পরিয়াছিল, বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলাটি কেন ‘অত রাতে’ নিশিনিলয়ে গিয়াছিলেন, গুয়াহাটির রাস্তা দিয়া কেন দ্বাদশ শ্রেণির মেয়েটি উচ্ছল হইয়া হাঁটিতেছিল, ম্যাঙ্গালোরের পার্টিতে কেন মেয়েরা সন্ধ্যায় বিয়ার পান করিতেছিল মন্ত্রী, বিধায়ক, এমনকী সংবেদনশীল শিল্পী-সাহিত্যিকরাও এমন প্রশ্ন তুলিয়া থাকেন। প্রশ্নগুলি একান্তই পিতৃতন্ত্রের প্রশ্ন, যে-পিতৃতন্ত্র নারীর বর্ধমান ক্ষমতায়নে, লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করার জন্য এ কালের সীতাদের মরিয়া আত্মঘোষণায় ক্রমাগত বিপন্ন, উদ্বিগ্ন। এই বিপন্নতাবোধ হইতেই অপরাধের শিকারদের রক্ষা করার সামাজিক-প্রশাসনিক দায় ঝাড়িয়া ফেলিয়া পিতৃতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা অপরাধীদের হইয়া সাফাই গাহিতেছে, তাহাদের অপকর্মকে ‘স্বাভাবিক’ রায় দিতেছে। লক্ষ্মণদের হাত হইতে সীতাদের মুক্তি নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.