কেরল-সঙ্কট সামাল দিতে কি ব্যর্থ কারাট, প্রশ্ন দলে
ছ’বছরে বারবার। সিপিএম-রাজনীতিতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে কেরলে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বসে এক রকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আর দক্ষিণী রাজ্যে ঘটছে অন্য রকম! বিপাকে পড়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশেই এ বার প্রশ্ন উঠছে, দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটই কি দক্ষ হাতে কেরল-সঙ্কট সামাল দিয়ে উঠতে পারছেন না?
বস্তুত, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশের মতে, কেরলের পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাওয়ার ‘দায়’ সাধারণ সম্পাদককেই নিতে হবে। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্তরে আলোচনা করে সিদ্ধান্তের পরে তিরুঅনন্তপুরমে গিয়ে পিনারাই বিজয়নদের কথাই শেষ পর্যন্ত মেনে নিচ্ছেন কারাট। একাধিক বার একই ঘটনা ঘটায় দলের এই অংশ ‘ক্ষুব্ধ’। টি পি চন্দ্রশেখরন হত্যার যে ঘটনায় সিপিএম-রাজনীতি উত্তপ্ত, তাতেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একই ‘ব্যর্থতা’ প্রকট বলে দলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে। পলিটব্যুরোয় কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠিক হয়েছিল, টি পি-হত্যাজনিত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য দলে একটি তদন্ত কমিশন গড়া হবে। তার পরে কারাট নিজে কেরলে রাজ্য কমিটি এবং একাধিক জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন। অথচ কমিশন এখনও গড়া হয়নি!
দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “পলিটব্যুরোয় আলোচনা করে ঠিক হয়েছিল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠিত হবে। যারা অনুসন্ধান করে দেখবে, টি পি-হত্যার সঙ্গে আদৌ দলের কেউ কোনও ভাবে জড়িত কি না। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অথচ সাধারণ সম্পাদক কেরলে গিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে আসার পরেও কমিশন গড়ার সেই সিদ্ধান্তের কথা রাজ্য নেতৃত্বকে দৃঢ় ভাবে বলা হল না!” দলের একাংশের ব্যাখ্যা, তদন্ত কমিশন ‘নিরপেক্ষ ভাবে’ কাজ করলে টি পি-হত্যার সঙ্গে কেরল সিপিএমের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর জড়িত থাকার অভিযোগ দলীয় স্তরেও সামনে আসবে এবং তাতে বিপাকে পড়তে পারেন বিজয়নেরাই। কেন্দ্রীয় কমিটির অন্দরে প্রশ্ন: সে জন্যই কি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মানতে রাজ্য নেতৃত্বকে চাপ দেওয়া হচ্ছে না?
ঘটনাচক্রে, দলের অন্দরে এই সঙ্কটের মধ্যে কেরলে সিপিএমের ‘বিড়ম্বনা’ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বুধবার রাজ্য কমিটির সদস্য তথা কান্নুর জেলা সম্পাদক পি জয়রাজনের গ্রেফতারের ঘটনা। কয়েক মাস আগে মুসলিম লিগের নেতা আব্দুল সুক্কুরের খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে জেরার জন্য ডেকেই জয়রাজনকে গ্রেফতার করেছে কেরল পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। জয়রাজন এবং তাঁর এক সহযোগীর উপরে হামলার বদলা হিসাবে সুক্কুরকে খুন করা হয় এবং তাঁর ষড়যন্ত্রে জয়রাজন লিপ্ত ছিলেন বলে পুলিশের অভিযোগ। গ্রেফতারির প্রতিবাদে কেরলে এ দিন প্রবল বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিপিএম। একের পর এক ‘মিথ্যা মামলা’য় দলীয় নেতাদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ করা হয়েছে পলিটব্যুরোর তরফে। কেরলের এলডিএফ আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যে হরতালেরও ডাক দিয়েছে। টি পি-হত্যায় দলের নেতা-কর্মীরা জড়িয়ে যাওয়ার সময় অন্য একটি খুনের ঘটনায় এক জেলা সম্পাদকের গ্রেফতারি সিপিএমের অভ্যন্তরীণ সমীকরণেও প্রভাব ফেলছে। ধৃত জয়রাজন বিজয়ন-শিবিরের নেতা বলেই পরিচিত।
সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের বক্তব্য, “২০০৬ সালে ভি এস অচ্যুতানন্দনকে প্রার্থী করা নিয়ে বিভ্রাট হয়েছিল। গত বিধানসভা ভোটে তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে ঠিক হয়েছিল, ভি এস-কে সামনে রেখেই ভোটে লড়া হবে। কিন্তু কেরলে ঠিক তার উল্টো ঘটনা ঘটল! তখন আবার দিল্লি থেকে হস্তক্ষেপ করে ভি এস-কে টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা হল। আমরা মাত্র ১১০০ ভোটের জন্য ওই রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরতে পারিনি! কেরলের রাজ্য নেতৃত্বকে ভি এস-প্রশ্নে ওই রকম হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে না-দিলে ভোটে আমরাই জিততাম!”
প্রসঙ্গত, সেই সময়েও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে কেরলের বৈঠকে ছিলেন স্বয়ং কারাট। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের মতে, “ভি এস-কে ছেঁটে ফেলার জন্য বিজয়নেরা যে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন, কারাট-সহ শীর্ষ নেতৃত্ব তা জানেন। অথচ টি পি-প্রশ্নে ভি এস কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তাঁর ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। এর পরেও ভি এস-কে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দিয়ে শাস্তি দিতে গেলে কর্মী এবং সমর্থক মহলে যে প্রবল প্রতিক্রিয়া হবে, বিজয়নদের সেটা বুঝতে বাধ্য করা হবে না?” ইঙ্গিত খোদ সাধারণ সম্পাদকের দিকেই।
কেরল-সঙ্কট নিয়ে কাঠগড়ায়। এই প্রশ্নও উঠছে কারাটের দিকে যে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগর প্রশ্নে প্রতিবাদে ‘ভোলবদলে’ অভ্যস্ত মুলায়ম সিংহ যাদবকে কেন পাশে নেওয়া হচ্ছে? তা হলে কি ঘুরেফিরে সেই বহুচর্চিত তৃতীয় ফ্রন্ট?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.