|
|
|
|
কেন্দ্রীয় আইনের সংশোধন চাইল রাজ্য |
অনিয়মেই বিদ্যুতে টান, কড়া সাজার দাবি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দিল্লি ও কলকাতা |
পরপর দু’দিন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পরেও শিক্ষা হল না। বুধবার দুপুরে ফের উত্তরাঞ্চল গ্রিড থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ টানা শুরু করেছিল উত্তরের কিছু রাজ্য। তবে এ বার কড়া নজরদারি থাকায় ফ্রিকোয়েন্সি কমার আগেই বিষয়টি ধরা পড়ে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে দেয় পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন।
কিন্তু কোন কোন রাজ্য নিয়ম ভেঙে বিদ্যুৎ টানায় সোম ও মঙ্গলবার অর্ধেক দেশ জুড়ে অন্ধকার নেমেছিল, তা জানা সত্ত্বেও কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক। তাই ওই সব রাজ্যের সাহস বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির। তাদের কেউ কেউ নিয়মভঙ্গকারীদের কড়া শাস্তির জন্য সওয়াল শুরু করেছে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে ৬ অগস্ট উত্তরের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন নতুন বিদ্যুৎমন্ত্রী এম বীরাপ্পা মইলি। ওই রাজ্যগুলির মুখ্যসচিব ও বিদ্যুৎসচিবদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎসচিব পি উমাশঙ্কর।
মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়ে মইলি আজ ঘোষণা করেন, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু তার ঠিক আগেই পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, এমনকী দিল্লিও উত্তরাঞ্চল গ্রিড থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ টেনে নিয়েছে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রক সূত্রের খবর। তা হলে মন্ত্রী কী ভাবে ওই আশ্বাস দিলেন? মইলির বক্তব্য, “রাজ্যগুলিকে নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। নিজেদের স্বার্থেই নিয়ম মেনে চলাটা তাদের দায়িত্ব। নিয়ম না মানার কারণে বিপর্যয় হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী নিয়ম ভেঙে বিদ্যুৎ নিলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের কাছ থেকে প্রতি বার এক লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করার কথা। কিন্তু সোম, মঙ্গল ও বুধবার যে সব রাজ্য বেআইনি ভাবে উত্তরাঞ্চল গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ টেনেছে, তাদের কাছ থেকে সেই জরিমানা আদায় করতে পারেনি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক। শাস্তির বিধান থাকলেও যে তা কার্যকর করা কঠিন তা মেনে নিয়েছেন নতুন বিদ্যুৎমন্ত্রী। রাজ্যগুলিকে তাই বুঝিয়ে নিয়ম মেনে চলতে রাজি করাতে চাইছে কেন্দ্র। কেন বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ নিচ্ছে উত্তরের বিভিন্ন রাজ্য? বিদ্যুৎ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের নয়ডা, পঞ্জাবের লুধিয়ানা, জালন্ধর, অমৃতসর ও মোহালির মতো শিল্প এলাকায় প্রয়োজনীয় পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। সেই কারণেই তাদের বিদ্যুৎ টানতে হচ্ছে। এই রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে। তার দায় কেন্দ্রকেও নিতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ টানলে ফের গ্রিড বিকল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎসচিব পি উমাশঙ্করের অবশ্য বক্তব্য, “শুধু বরাদ্দের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ টানার ফলেই গ্রিড বিকল হয়ে পড়ছে, সেটাই একমাত্র কারণ না-ও হতে পারে। বিষয়টা তার থেকেও জটিল। সেই জন্যই তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।” আজ মইলি নিজেই সেই কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে গোটা ঘটনার পিছনে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে যে কমিটি গঠন হয়েছে, তার সদস্যরা হলেন কেন্দ্রীয় ইলেকট্রিসিটি অথরিটি, পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন ও পাওয়ার অপারেশন সিস্টেম সংস্থার প্রধান। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পিছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এই সংস্থাগুলিরও দায় রয়েছে। তা হলে তাদের প্রধানদের নিয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিরপেক্ষ হবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিদ্যুৎসচিব বলেন, “কমিটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলবে।”
|
বিভ্রাটের পটভূমি |
পূর্বাঞ্চল গ্রিড বসে
যাওয়ার কারণ?
• উত্তরাঞ্চল গ্রিড থেকে সরে আসতে পারেনি।
সমস্যা কী ছিল?
• পূর্বাঞ্চল থেকে
উত্তরাঞ্চলে হু হু করে বিদ্যুৎ যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
কাজে আসেনি।
উত্তরাঞ্চল ডুবল কেন?
• নিয়ম ভেঙে বিদ্যুৎ টানায় ফ্রিকোয়েন্সির আচমকা পতন।
নজরদারির দায়িত্ব কার?
• পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন এবং ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের।
কী ভাবে?
• কোনও রাজ্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত বিদ্যুতের বেশি টানলে ধরে ফেলা।
এ ক্ষেত্রে?
• গাফিলতি হয়েছে।
নিয়ম ভাঙার শাস্তি?
• প্রতি বার লাখ
টাকা জরিমানা।
নেয় কে?
• পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন।
জরিমানা আদায় কত?
• রাজ্যগুলো টাকাই দেয় না! বিদ্যুৎ মন্ত্রকেরও কিছু
করার নেই।
অন্য শাস্তি?
• পশ্চিমবঙ্গ এ জন্যই কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি তুলেছে। |
|
|
|
|
|
|