|
|
|
|
লোকসভার নেতা, শিন্দেকে মানা কঠিন পওয়ারের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে সুশীলকুমার শিন্দের উত্থানে নতুন করে ক্ষুব্ধ শরদ পওয়ার। এনসিপি-শিবিরের বক্তব্য, শিন্দেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার অর্থ তিনিই লোকসভার নেতা হতে চলেছেন। মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে পওয়ারের হাত ধরেই কংগ্রেসে এসেছিলেন শিন্দে। সেই শিন্দেই এখন সরকার ও মন্ত্রিসভায় তাঁর থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসবেন, তা পওয়ারের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। এ বিষয়ে ইউপিএ-র শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তিনি ফের ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারেন বলেও পওয়ারের ঘনিষ্ঠ মহল মনে করছে।
কংগ্রেস সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, কিছু দিন আগেই কংগ্রেসের সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্য রাজনীতির সঙ্গে একপ্রস্ত সংঘাতে গিয়েছিলেন পওয়ার। তাঁর দাবি মেনে কেন্দ্রে ও রাজ্যে শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও হয়। এই পরিস্থিতিতে পওয়ার অন্তত প্রকাশ্যে শিন্দেকে নিয়ে আপত্তি জানাবেন না। বরং সংসদের বাদল অধিবেশনের পরে মন্ত্রিসভার রদবদল হলে অগাথা সাংমার জায়গায় তাঁর কন্যা সুপ্রিয়া সুলেকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসতে তিনি বেশি আগ্রহী। তাছাড়া শিন্দে যে গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ, তা-ও ভাল করেই জানেন পওয়ার।
প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার প্রধানমন্ত্রী ও সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লিখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। মরাঠা নেতার ক্ষোভের অন্যতম কারণ ছিল তাঁকে মন্ত্রিসভার দু’নম্বর পদ না দেওয়া। মহারাষ্ট্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন দাবিদাওয়ার পাশাপাশি প্রণবের অনুপস্থিতিতে তাঁকে লোকসভার নেতা করা হোক, এমন ইচ্ছাও ছিল পওয়ারের। তাঁর যুক্তি ছিল, প্রণবের পরে তিনিই মন্ত্রিসভার প্রবীণতম সদস্য। কংগ্রেসের নেতারা অবশ্য মনে করছেন, প্রবীণতম হলেও পওয়ার শরিক দলের নেতা। তাঁকে লোকসভার নেতার পদে বসানো কঠিন। মন্ত্রিসভার দু’নম্বর ব্যক্তির কোনও সরকারি পদ না থাকলেও, পওয়ারকে সেই মর্যাদা দেওয়াও মুশকিল। কারণ এনসিপি-র লোকসভায় সদস্য সংখ্যা মাত্র নয় জন। সেই অনুপাতে বাড়তি গুরুত্ব দিতে গেলে অন্য শরিকরাও আপত্তি তুলতে পারে। তবে পওয়ারের মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাঁকে অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার কথার ভাবা হচ্ছে। |
|
দফতরে প্রথম দিন। নয়াদিল্লিতে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে। বুধবার। ছবি: পি টি আই |
এনসিপি-র নেতারা বলছেন, ১৯৭১ সালে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে পওয়ারই সুশীলকুমার শিন্দেকে দলিত নেতা হিসেবে প্রথম টিকিট দেন। এর পরে ১৯৭৮ সালে শিন্দে পওয়ারের অনুগামী হিসাবে কংগ্রেস তথা মহারাষ্ট্রের বসন্তরাও পাটিল সরকার থেকেও পদত্যাগ করেন। সে সময় পওয়ার প্রগ্রেসিভ ডেমোক্র্যাটিক গভর্নমেন্ট নামে দল করে সরকার গড়েন। কিন্তু দু’বছর পরেই সরকারের পতন হয়। তা সত্ত্বেও শিন্দে পওয়ারের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু এর কয়েক বছরের মধ্যেই পওয়ারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে কংগ্রেসে ফিরে আসেন শিন্দে। ১৯৮৬ সালে পওয়ার যখন কংগ্রেসে ফিরে আসেন, তখনও তার বিরোধিতা করেছিলেন শিন্দে। দু’জনের সম্পর্ক এতটাই তিক্ততায় পৌঁছয় যে পওয়ার যখন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী, তখন বিলাসরাও দেশমুখের সঙ্গে মিলে পওয়ারকে গদিচ্যুত করারও চেষ্টা করেছিলেন শিন্দে।
এরই মধ্যে ধীরে ধীরে গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করার সুবাদেও তিনি সনিয়া গাঁধীর প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। আজও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে শিন্দে বলেছেন, “গাঁধী পরিবার সব সময়ই অনগ্রসরদের উন্নতির দিকে নজর দিয়েছে। এক জন দলিতও যে বড় দায়িত্ব নিতে পারে, তা বুঝেছেন তাঁরা।” এনসিপি-নেতাদের অভিযোগ, যোগ্যতার নয়, গাঁধী পরিবারের প্রতি আনুগত্যই তাঁর উত্থানের কারণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জোট রাজনীতির স্বার্থে এবং একই মন্ত্রিসভায় থাকার সুবাদে পওয়ার ও শিন্দে, দু’জনেই অবশ্য রাজনৈতিক সহাবস্থানে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তা বলে শিন্দেকে লোকসভার দলনেতা হিসেবে পওয়ারের পক্ষে মেনে নেওয়া কতটা সম্ভব হবে, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|