|
|
|
|
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দের অভিষেকের দিনেই চার বিস্ফোরণ পুণেতে |
নিজস্ব প্রতিবেদন • পুণে |
বিদ্যুৎ মন্ত্রকে তাঁর শেষ দিনে অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল অর্ধেক দেশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে তাঁর প্রথম দিনে পর পর চার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল নিজের রাজ্য মহারাষ্ট্রের শহর পুণে। ‘পদোন্নতি’ হলেও সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না সুশীলকুমার শিন্দের।
পুলিশ সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, আজ সন্ধ্যা ৭টা ২৭ থেকে ৮টা ১৫-এর মধ্যে পুণে শহরের প্রাণকেন্দ্র জংলি মহারাজ রোডের এক কিলোমিটারের ছোট মাপের তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে। চতুর্থ বিস্ফোরণটি হয় কিছু দূরে গারওয়ারে চকে। একটি বহুজাতিক সংস্থার খাবারের দোকানের কাছ থেকে পঞ্চম বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে অ্যান্টি টেরর স্কোয়াড (এটিএস)। কোনও বিস্ফোরণের তীব্রতাই তেমন ছিল না বলে বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আহত হয়েছেন মাত্র এক জন। দয়ানন্দ পাটিল নামে ওই ব্যক্তিই বিস্ফোরণের পিছনে থাকতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশের। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে আজই পুণেতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসার কথা ছিল শিন্দের। জঙ্গলি মহারাজ রোডে যে বালগন্দর্ভ থিয়েটারের কাছে একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানেই আসার কথা ছিল তাঁর। তবে বিস্ফোরণের আগেই সেই সফর বাতিল করে দেন তিনি।
দু’বছর আগে, ২০১০-এর ফেব্রুয়ারিতে জার্মান বেকারিতে বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৭ জন। পুণে শহরের স্মৃতিতে সেই বিভীষিকা এখনও উজ্জ্বল। ফলে আজ একের পর এক বিস্ফোরণে স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়ায়। এমনিতেই জঙ্গলি মহারাজ রোড শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা। বুধবার, কাজের দিন সন্ধ্যায় ভিড়ে ঠাসা ছিল রাস্তার দু’পাশের দোকানপাট, রেস্তোঁরা। কাছেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বেশ কিছু অন্না হজারে-পন্থী। কাছেই শম্ভাজি পার্ক, সপরিবার সন্ধ্যা কাটানোর জায়গা। |
|
জঙ্গলি মহারাজ রোডের ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: পিটিআই |
বিস্ফোরণের তীব্রতা কম থাকায় গোড়ায় মানুষজন ভেবেছিলেন, পটকা জাতীয় কিছু ফেটেছে, কিন্তু অল্প ক্ষণের মধ্যেই ভুল ভাঙে। হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। আসে বম্ব স্কোয়াড, অ্যান্টি টেরর স্কোয়াড।
মিনিট পঞ্চাশের মধ্যে যে ভাবে চারটি বিস্ফোরণ হয়েছে, তাতে এই ঘটনার পিছনে সংগঠিত কোনও গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের একাংশ প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করছেন নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন সিমি-কে। যে হেতু জার্মান বেকারির ঘটনার পিছনে মুসলিম জঙ্গি সংগঠনেরই হাত ছিল। জার্মান বেকারির ছবি তুলে ষড়যন্ত্রে সাহায্যের কথা কবুলও করেছে আমেরিকায় ধৃত লস্কর-ই-তইবার সহযোগী ডেভিড হেডলি।
সরকারি সূত্রে অবশ্য এখনই এই ঘটনার পিছনে কোনও জঙ্গি সংগঠনের জড়িত থাকার দাবি
করা হয়নি। আবার জঙ্গি হামলার তত্ত্ব পুরোপুরি উড়িয়েও দেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহ। তাঁর কথায়, “এটা পরিকল্পিত হামলা বলেই মনে হয়।” যদিও পুণের পুলিশ কমিশনার গুলাব রাও পোলের বক্তব্য, “মনে হয়, এটা কোনও জঙ্গি সংগঠনের কাজ নয়। আতঙ্ক ছড়াতেই অন্য কোনও গোষ্ঠী এই কাজ করেছে।”
আপাতত এই বিস্ফোরণে একমাত্র
আহত দয়ানন্দ পাটিলের কাছ থেকেই রহস্যভেদের আশা করছেন গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দয়ানন্দ কেকের বাক্স নিয়ে একটি সাইকেলে চড়ে যাচ্ছিলেন। ওই বাক্সে বিস্ফোরক ও দু’টি ডিটোনেটর ছিল। তার মধ্যে একটি ফেটে গিয়ে দয়ানন্দ আহত হন।
বড় কিছু না হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে শিন্দের প্রথম দিনে পুণের বিস্ফোরণ যে অস্বস্তির ছাপ রেখে গেল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এমনিতেই শিন্দের ‘পদোন্নতি’তে ঘোরতর অসন্তুষ্ট মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষ শরদ পওয়ার। শিন্দেকে লোকসভার নেতা করার যে ভাবনাচিন্তা চলছে তাতেও আপত্তি রয়েছে ইউপিএ-র শরিক এনসিপি-প্রধানের। তার উপর গত সোম ও মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পরে বিদ্যুৎমন্ত্রী শিন্দেকে কেন স্বরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দেওয়া হল, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সেই দিক থেকে দেখলে তাঁর সামনে যে বিস্তর চ্যালেঞ্জ, আজ পুণের বিস্ফোরণ সেই বার্তা দিয়ে গেল শিন্দেকে। তিনি অবশ্য অন্তত প্রকাশ্যে এই ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। “ছোট মাপের বিস্ফোরণ। তদন্ত চলছে।” এটুকু বলেই প্রসঙ্গ এড়িয়েছেন নয়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। |
|
|
|
|
|