উৎপাদন খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাসুল বাড়াতে না-পেরে দেনায় দায়ে ডুবে রয়েছে অধিকাংশ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ। মাসুল বাড়িয়ে পর্ষদগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য যাতে ফেরানো যায়, সে ব্যাপারে রাজ্যগুলিকে রাজি করাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।
পশ্চিমবঙ্গের মতো অনেক রাজ্যেরই যে বিষয়ে ঘোর আপত্তি রয়েছে। এ নিয়ে আগামী ৬ অগস্ট রাজ্যগুলির মুখ্যসচিব ও বিদ্যুৎসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎসচিব পি উমাশঙ্কর।
সদ্য দায়িত্ব নেওয়া কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী এম বীরাপ্পা মইলি আজ বলেন, “অনেক পর্ষদই বিপুল দেনার মধ্যে রয়েছে। এই ভাবে কোনও ব্যবস্থা চলতে পারে না। রাজ্যগুলি জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে মাসুল বাড়াচ্ছে না। কিন্তু ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারলেও সরকারগুলি জনপ্রিয়তা হারাবে।” বিদ্যুৎ পর্ষদগুলির মোট ঋণের বোঝা বাড়তে বাড়তে এখন দু’লক্ষ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা নির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বলেও জানিয়েছেন মইলি।
পর্ষদগুলি যাতে মাসুল বাড়াতে পারে, সে জন্য সম্প্রতি সব রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিল যোজনা কমিশন। পর্ষদগুলিকে ঋণের হাত থেকে বাঁচানোর গুরুদায়িত্ব এখন পড়েছে যোজনা কমিশনের ঘাড়েই। বিদ্যুৎ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ঋণের সমস্যা মেটাতে তিনটি সম্ভাব্য পদ্ধতির কথা ভেবে একটি ‘বেল আউট’ প্যাকেজের আলোচনা চলছে কমিশনের অন্দরে।
বিদ্যুৎ কর্তারা জানাচ্ছেন, ওই ‘বেল আউট’ প্যাকেজে মাসুল বৃদ্ধির পাশাপাশিই ঋণ পুর্নগঠন, বাজারে বন্ড ছাড়ার কথা থাকতে পারে। যোজনা কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক যৌথ ভাবে তৈরি করবে ওই প্যাকেজটি।
পর্ষদগুলির পুঞ্জীভূত ঋণের অর্ধেক ব্যাঙ্কগুলি পুর্নগঠন করবে, এমনটাই ভাবা হচ্ছে। পর্ষদগুলি যাতে আর্থিক স্বাস্থ্য কিছুটা গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায় সে জন্য তাদের দু’বছরের জন্য সুদ দেওয়া থেকে রেহাই দেওয়াও হতে পারে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, মাসুল না বাড়ানোর ফলে তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্যে ঘাড়ে বিপুল ঋণের বোঝা রয়েছে।
মাঝে এই সমস্যায় পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমও। বাম শাসনের পর তৃণমূল ক্ষমতায় এলে গোড়ার দিকে মাসুল বাড়াতে দিতে তারা রাজি হয়নি। এর ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। শেষে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে, কিছুটা ঘুরপথে হলেও বিদ্যুতের মাসুল বাড়ানোর ছাড়পত্র দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। |