নরেন্দ্র মোদীর ধাঁচেই নিজের রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে সক্রিয় হলেন মধ্যপ্রদেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান।
তাঁদের আমলে মধ্যপ্রদেশে পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে কতটা উন্নতি হয়েছে, সেই চিত্র তুলে ধরতে আজ দিল্লিতে বণিকসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিবরাজ। বৈঠকে শিল্পপতিদের তাঁর রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে শিবরাজ বলেন, “শিল্পের বিকাশের জন্য সড়ক, বিদ্যুতের মতো পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রগুলিতে গত কয়েক বছরে অভাবনীয় উন্নতি করেছে মধ্যপ্রদেশ। গড়া হয়েছে একাধিক শিল্পতালুক। ভারী শিল্প স্থাপনের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত সরকারি জমি।” মধ্যপ্রদেশ সরকার শিল্প স্থাপনে কতটা আগ্রহী, তা বোঝাতে আগামী ২৮ থেকে ৩০ অক্টোবর ইনদওরে ‘গ্লোবাল ইনভেস্টর সামিট’ শীর্ষক সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চৌহান সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “কৃষির অগ্রগতির সঙ্গেই শিল্পের বিকাশে জোর দিতে চাই।”
বিনিয়োগ টানতে প্রতি বছর ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ নামে একটি সম্মেলন করে থাকেন নরেন্দ্র মোদী। স্বভাবতই শিবরাজের ঘোষণার পরে প্রশ্ন ওঠে, তা হলে কি মোদীরই মডেল অনুসরণ করে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী? বিজেপির মোদী-বিরোধী কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি অংশ বরাবরই শিবরাজের পক্ষে। ওই নেতারা চান, মোদীর মতোই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে শিবরাজ আরও সক্রিয় হোন। শিবরাজ নিজে অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি কোনও মডেল অনুসরণ করছেন না। তাঁর কথায়, “পরিকাঠামোর দিক থেকে গুজরাত আগেই উন্নত ছিল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশকে কার্যত শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছে। ধীরে ধীরে ওই রাজ্যে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উন্নতি করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের যা পরিকাঠামো, তা শিল্প বিকাশের অনূকুলে। তাই এই সম্মেলন।”
শিবরাজ মুখে স্বীকার না করলেও বিজেপির দুই মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে আজ স্বভাবতই তুলনা উঠে আসে। দু’জনেই নিজেদের রাজ্যে একাধিক বার দলকে জিতিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। প্রশাসক হিসেবে দু’জনেরই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। মোদী বিনিয়োগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজ্য হিসেবে গুজরাতকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। আবার শিবরাজ তাঁর রাজ্যের পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নতিতে এমন কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার সুফল স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র।
এর পাশাপাশিই কিন্তু সংখ্যালঘু সমাজে ‘গ্রহণযোগ্যতা’র প্রশ্নে মোদীকে কয়েক যোজন পিছনে ফেলেছেন শিবরাজ। তাঁর ভাবমূর্তি অনেক ‘উদার’। বিজেপির এক নেতার কথায়, “মধ্যপ্রদেশে সংখ্যালঘু সমাজের একটি অংশের সমর্থন রয়েছে শিবরাজের পিছনে।” এই পরিস্থিতিতে মোদী যখন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে নিজেকে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন, তখন দলীয় নেতৃত্বের একটা বড় অংশ চাইছেন, শিবরাজ আগামী দু’বছর কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিন। রাজনৈতিক সূত্রের একাংশ মনে করছে, ‘ভারসাম্যের’ রাজনীতির এই অস্ত্রেই সম্ভবত মোদীকে আটকাতে চাইছেন তাঁর দলের ওই নেতারা। |