|
|
|
|
সপ্তম ইউনিট বিকল, ফের বিপাকে ডিপিএল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
চিন থেকে সারিয়ে আনা হয়েছিল যন্ত্রাংশ। শিখিয়ে-পড়িয়ে আনা হয়েছিল ছয় ইঞ্জিনিয়ারকে। পাঁচ দিন হয়ে গেল দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) সেই সপ্তম ইউনিট বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে আর্থিক ভাবে দুর্বল রাজ্য সরকারি সংস্থাটিকে। কবে আবার ইউনিট উৎপাদনক্ষম হবে, তাও হলপ করে বলতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।
তিনশো মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সপ্তম ইউনিট বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু করেছিল ২০০৮ সালের ৩০ এপ্রিল। ডিপিএল সূত্রের খবর, চালু হওয়ার পর থেকেই সেটি মাঝে-মধ্যে বিকল হয়ে পড়ে। মাঝে এক বার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে ইউনিটের রোটার জাহাজে চাপিয়ে চিনে নিয়ে গিয়ে মেরামত করে আনতে হয়। সে সময়ে বেশ কয়েক মাস বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল। এর পরে ফের ইউনিটটি উৎপাদন শুরু করলেও পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। ২৬ জুলাই ফের সেটি বিকল হয়ে পড়েছে।
ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য বার অন্তত ত্রুটি খুঁজে পেতে বিশেষ বেগ পেতে হয় না। কিন্তু এ বার কোথায় ত্রুটি, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। ইউনিট বিকল হয়ে পড়লে বারবার যাতে চিনা সংস্থার শরণাপন্ন হতে না হয় তার জন্য কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারকে চিনে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে এনেছিল ডিপিএল। কিন্তু তাঁদের কেউ আজ আর সংস্থায় নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিপিএলের এক আধিকারিকের অভিযোগ, “সংস্থার খরচে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে তাঁরা অন্যত্র উঁচু পদে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের চলে যাওয়া আটকাতে ডিপিএল কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ করেনি।” তাঁর দাবি, ওই ইঞ্জিনিয়াররা থাকলে ইউনিট ফের চালু করতে এত দেরি হত না।
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানায় বিদ্যুতের জোগান নিশ্চিত করতে ১৯৬০ সালে গড়ে উঠেছিল ডিপিএল। প্রথমে ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি ইউনিট উৎপাদন শুরু করে। ১৯৬৪ সালে ৭৭ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দু’টি ইউনিট যোগ হয়। দু’বছর পরে ৭৭ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি এবং ১৯৮৫ সালে ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আর একটি ইউনিট উৎপাদন শুরু করে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে প্রথম দিকের ইউনিটগুলির কর্মক্ষমতা কমতে থাকায় সংস্থার আর্থিক স্থিতি প্রশ্নের মুখে পড়ে। অন্য দিকে, নতুন নতুন কলকারখানা গড়ে ওঠায় বিদ্যুতের চাহিদাও দিন দিন বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী তথা দুর্গাপুরের বিধায়ক মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ডিপিএল ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সপ্তম ইউনিট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়। চিনের ডং ফ্যাং ইলেকট্রিক কর্পোরেশন তা নির্মাণ করে।
ডিপিএল সূত্রের খবর, সব গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে রোজ অন্তত তিনশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। প্রথম তিনটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সপ্তম ইউনিটও আপাতত বন্ধ। ফলে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ইউনিটই ভরসা। কিন্তু ওই তিন ইউনিট মিলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ মোটে ১৪০ মেগাওয়াট। বাকি বিদ্যুৎ ডিপিএল বাইরে থেকে কিনে আনছে। সপ্তম ইউনিট চালু করে যেখানে সংস্থাটি আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল, সেখানে উল্টে পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। কত দিনে আবার তা চালু হবে বা কত দিন ঠিকঠাক উৎপাদন করবে তা নিয়ে সংশয়ী আধিকারিকেরাই। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃগাঙ্ক মজুমদার অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এই পরিস্থিতিতে আপাতত ‘পাখির চোখ’ নির্মীয়মান অষ্টম ইউনিট। চিনা সংস্থাকে কাজ দিয়ে সংস্থাটি যে সমস্যায় পড়েছে, তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে নতুন ইউনিট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দেশীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভেল-কে। তারা আবার একটি বেসরকারি সংস্থাকে কিছু কাজের দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু বুধবার সেখানেও গোলমাল বাধে। তাদের পছন্দের লোক নেওয়ার দাবি তুলে একটি শ্রমিক গোষ্ঠী সংস্থার এক ইঞ্জিনিয়ার ও ইলেকট্রিশিয়ানকে মারধর করে বলে অভিযোগ। মাথায় চোট নিয়ে দু’জনেই দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সারা দিন কাজও বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে, বিদ্যুতের অনিশ্চয়তা কবে কাটবে তা এখনও ধোঁয়াশাই। |
|
|
|
|
|