পারিবারিক বিবাদের পরিণতি
প্রৌঢ়কে কুপিয়ে খুন, অভিযুক্ত স্ত্রী ও ছেলে
ম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদের জেরে এক ব্যক্তিকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে। সোমবার গভীর রাতে বসিরহাটের স্বরূপনগর থানার চরপাড়া গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকালে প্রতিবেশীদের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। নিহতের নাম কালিপদ খাঁ (৫৪)। স্বরূপনগরের আইসি তপন মিশ্র বলেন, “একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। কালিপদবাবুর স্ত্রী ও ছেলেকে খোঁজা হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় কৃষিজীবী কালিপদবাবুর দুই মেয়ে এক ছেলে। ব্যক্তিগত কারণে এবং জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে খাঁ পরিবারে বিবাদ চলছিল। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার গ্রামে সালিশি সভা বসলেও তাতে বিশেষ সুরাহা হয়নি। স্বামী মারধর করেন এই অভিযোগে বেশ কয়েক বছর আগে কালিপদবাবুর স্ত্রী সুষমাদেবী বাপের বাড়ি চলে যান। বছর খানেক আগে তিনি ফের স্বামীর কাছে ফিরে আসেন। ইতিমধ্যে দুই মেয়ে ও ছেলের বিয়ে দেন কালিপদবাবু। কিন্তু মেয়ে-জামাইদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল না। ছেলের বিয়েক পরে সম্পত্তি নিয়ে খাঁ পরিবারে বিবাদ চরম আকার নেয়। বিবাদ এতটাই চরমে ওঠে যে ছেলে দীপঙ্করকে ছেড়ে তাঁর স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যান এবং বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেন। এ নিয়ে খাঁ পরিবারে নতুন করে অশান্তি দেখা দেয়।
ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ। ছবি: নির্মল বসু।
এ দিকে প্রায় রোজই মদ খেয়ে স্ত্রী ও ছেলের উপরে কালিপদবাবুর অত্যাচার বেড়ে যাওয়ায় মা ও ছেলে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এ নিয়ে মঙ্গলবার গ্রামের মাতব্বরদের নিয়ে সালিশি সভার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই সোমবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকালে এক প্রতিবেশী কাজে যাওয়ার সময় কালিপদবাবুর বাড়ির উঠোনে মুখ ঢাকা অবস্থায় একজনকে পড়ে থাকতে দেখেন। এগিয়ে গিয়ে দেখেন চারপাশ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মৃতদেহের পাশে পড়ে রয়েছে একটি রক্তমাখা কুড়ুল, একটি লাঠি এবং এক পাটি রক্তমাখা চটি। একটি লাইটার ও বিডিও পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই ব্যক্তি জানান, অনেক ডাকাডাকি করেও বাড়ির লোকের কোনও সাড়া না পেয়ে তিনি দেখেন বাড়ির দরজায় তালা ঝুলছে। এর পরেই তিনি গ্রামের অন্যদের ডাকেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত কয়েক দিন ধরে জমিজমার ভাগ নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে বিবাদ চরমে পৌঁছয়। ছেলে দীপঙ্কর আলাদা থাকা-খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ছেলেকে সমর্থন করে তাঁর পক্ষ নেন স্ত্রী সুষমাদেবীও। এ নিয়ে স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে বচসা ও হাতাহাতি হয় কালিপদবাবুর। এই ঘটনায় মঙ্গলবার গ্রামে সালিশি সভার ব্যবস্থা হয়। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ পাড়ায় একটি দোকানে বসে টিভি দেখেন কালিপদবাবু। রাতে যখন বাড়ি ফেরেন দীপঙ্কর তখন খাচ্ছিল। সেই সময় স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে ফের ঝগনা বাধে তাঁর। ঝগড়ার পরেই স্ত্রী ও ছেলে আলাদা থাকার জন্য জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়া শুরু করলে কালিপদবাবু তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে ধস্তাধস্তির মধ্যে কালীপদবাবুকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। তিনি মাটিতে পড়ে গেলে তাঁকে কুড়ুল দিয়ে মাথায়, মুখে কোপানো হয়। এর পর রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে ফেলে রেখে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যান মা ও ছেলে।
কালিপদবাবুর বড় মেয়ে কণিকাদেবী পুলিশকে বলেন, “বাবার মাথা প্রচণ্ড গরম ছিল। কারও কথা শুনতেন না। তার উপর মদ খেলে আর জ্ঞান থাকত না। বাবার অত্যাচারেই মা দীর্ঘদিন বাপের বাড়িতে ছিলেন। পারিবারিক অশান্তির জেরে ভাইয়ের বউও চলে যায়। বাবা আমাদের সকলের সবার সঙ্গেই খুব দুর্ব্যবহার করতেন।”
প্রতিবেশী রমেন সর্দার বলেন, “আমরা অনেকবার সালিশি ডেকে ওদের পারিবারিক বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওদের পরিবারের সবারই এত মাথা গরম যে কোনও লাভই হয়নি। সোমবার রাতে আমরা ওদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনেছিলাম। কিন্তু তাই বলে এমন ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটে যাবে ভাবতে পারিনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.