বিদ্যুৎহীন দু’জেলা ভুগল দিনভর
কাল থেকেই খবর আসছিল। দুর্ভোগও বাড়ছিল। কিন্তু দুপুরের পর যখন থমকে গেল ট্রেন চলাচলও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আতঙ্ক গ্রাস করল দুই জেলায়।
সেই সঙ্গে ট্রেন-বাস থেকে হাসপাতাল, শুরু হল নাছোড় ভোগান্তি।
কৃষ্ণনগর রেলওয়ে নিত্যযাত্রী সমিতির সদস্য সঞ্জিত দত্ত বলেন, “১২টা ৫০ থেকে ট্রেন বন্ধ। বিভিন্ন ট্রেন রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। যেমন রানাঘাট ও কালীনারায়ণপুর স্টেশনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়েছিল দু’টি ট্রেন। সাতটা নাগাদ একটি ট্রেনকে রানাঘাট স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাঁরা পেরেছেন, তাঁরা হেঁটে চলে গিয়েছেন। কিন্তু বৃদ্ধ ও অসুস্থ কিংবা মহিলাদের বেজায় ভুগতে হয়েছে।” বাসেও প্রচণ্ড ভিড় ছিল। অনেকে উঠতেই পারেননি। গাড়ির ভাড়া হু হু করে নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল। অনেকেই তাই তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি।
ফরাক্কার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জনসংযোগ আধিকারিক শৈবাল ঘোষ বলেন, “এ দিন বেলা ১টা ১০ নাগাদ গ্রিড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছ’টা ইউনিটেরই উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা ২০ নাগাদ গ্রিড সচল হয়। তারপরে আবার উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে।” একই ভাবে সাগরদিঘিতে বন্ধ করে দিতে হয় ৩০০ মেগাওয়াট করে দু’টি ইউনিট। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ ফের তা চালু হয়।
নিজস্ব চিত্র।
আপ লালগোলা প্যাসেঞ্জার, আপ রানাঘাট প্যাসেঞ্জার সবই আটকে পড়ে। হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস বাতিল হয়ে যায়।
বহরমপুর জেলা সদর হাসপাতালের সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, “জল নেই। রোগী ও রোগীর বাড়ির আত্মীয়দের জল সরবরাহ করার জন্য বহরমপুর পুরসভাকে জলের গাড়ি পাঠাতে অনুরোধ করেছি।” তবে পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “এই অবস্থায় হাসপাতালে জলের গাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়। জরুরি পরিষেবা হিসেবে প্রয়োজনে হাসপাতালে জল কিনে সরবরাহ করতে হবে।” কৃষ্ণনগর জেলা সদর হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার দেবব্রত দত্ত বলেন, “জেনারেটর চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বাড়তি জল খরচেও নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে।” কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, “কৃষ্ণনগর পুরসভা তিনটে জেনারেটর ভাড়া নিয়ে পাম্প চালিয়ে জলসঙ্কট দূর করার চেষ্টা করেছে।”
কৃষ্ণনগরে একটি পাঁচ তলা আবাসনের বাসিন্দা শঙ্কর সান্যাল বলেন, “জল যা রয়েছে, তাতে রাত পর্যন্ত চলবে। কিন্তু লিফট বন্ধ। তাই বৃদ্ধদের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।” বহরমপুরের মধুবন আবাসনের সুজিত দে বলেন, “আবাসিকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে জেনারেটর ভাড়া করে পাম্প চালানো সম্ভব হয়েছে।” অভিষিক্তা আবাসনের আবাসিক হিমাদ্রী দাস বলেন, “বাড়তি অর্থ খরচ করে রাতের দিকে জেনারেটর ভাড়া করে পাম্প চালিয়ে জল তোলা হয়েছে।” ‘ইনভার্টার’ কখন বন্ধ হয়ে যায়এই ভয়ে সন্ধ্যার পর মোমবাতির খোঁজ পড়ে।
তবে সন্ধ্যে থেকেই পুলিশ প্রশাসনের তরফে বাড়তি নজরদারি চালানো হয়েছে। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ সম্পাদক অক্ষয় ভট্টাচার্য বলেন, “বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যে। রাস্তায় লোকজন কম ছিল। ছোট দোকান জেনারেটর ভাড়া করতে পারেনি।” বিদ্যুতের অভাবে রঘুনাথগঞ্জে শ্মশানে অচল হয়ে পড়ে বৈদ্যুতিক চুল্লি। মৃতদেহ দাহ বন্ধ হয়ে যায়।
ঝাড়খণ্ড ও বীরভূম থেকে আসা পাঁচটি দেহ নিয়ে শ্মশানযাত্রীরা বিপাকে পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাঠের চুল্লিতে দেহ সৎকার করা হয়েছে। সন্ধ্যায় সারা শহরই ডুবে যায় অন্ধকারে। অচল টেলিভিশনও। বন্ধ টিউশনিও। ম্যাকেঞ্জি ময়দানে বা গঙ্গার ধারে ভিড় বাড়তে থাকে। বৃষ্টি ছিল না। ফলে অনেক দিন পরে শহরের মানুষের এ ভাবে রাস্তায় নেমে পড়তে দেখা গেল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.