ওদের গ্রাম বা ওদের আশপাশের গ্রামে কেউ কস্মিনকালেও স্কুলের গণ্ডি পার করেনি। ওরা সেটাই করে দেখিয়েছে। এমন কী, স্কুল পার হয়ে হাইস্কুলের পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ! উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে কার্বি আংলং-এর জংলি গ্রাম, রাম টেরং ও সার ক্রো-র দুই কিশোর-কিশোরী লিসন টেরাং ও ক্রিস্টিনা টেরাংপি রীতিমতো নায়ক-নায়িকা বনে গিয়েছে। আর সেই সূত্র ধরেই, চিরাচরিত প্রথার বাইরে গিয়ে, বিখ্যাত অভিনেতা বা খেলোয়াড় নয়, এক্কেবারে নাম না জানা গ্রামের ‘অখ্যাত’ দুই ছাত্রছাত্রীকে অসম বন দফতর ও ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ হিসেবে নির্বাচিত করা হল।
কোথায় এই রাম টেরাং বা সার ক্রো গ্রাম?
কাজিরাঙা পার হয়ে হাতির পাল যে অরণ্যপথ ধরে কার্বি আংলং-এর পাহাড়-জঙ্গলে প্রবেশ করে, ঠিক সেইখানেই রয়েছে পাঁচটি গ্রাম। তারই দু’টি গ্রাম হল, রাম টেরাং ও সার ক্রো। চিরকাল জঙ্গল ঘেঁসা জীবনে অভ্যস্ত এখানকার মানুষ। পুঁথিগত লেখাপড়ার ধার বিশেষ ধারেনি তারা। এমন অজ গ্রামের সন্তান হয়েও লিসন ও ক্রিস্টিনা নিজেদের জেদে, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া এই দু’জনের পরবর্তী লেখাপড়ার ভার নিয়েছে। সেই সঙ্গে দু’জনের ‘জনপ্রিয়তা’ দেখে, এলাকা জুড়ে হাতি চলাচলের রাস্তা ও অরণ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে লিসন ও ক্রিস্টিনাকে ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর’ করার কথা ঘোষণা করেছে। দু’জনকে সম্বর্ধনাও দেওয়া হয়। জাপান টাইগার-এলিফ্যান্ট ফান্ড দু’জনের পড়াশোনার ব্যয় বহন করবে।
এই এলাকার মানুষ জীবিকার জন্য সরাসরি অরণ্য নির্ভর। কার্বি আংলং স্বশাসিত পরিষদ, বন বিভাগ ও ডব্লিউটিআই যৌথ ভাবে এখানকার মানুষকে সচেতন করার কাজ চালাচ্ছে। যে এলাকায় লিসন-ক্রিস্টিনার বাস, সেখান দিয়ে নিয়ম করে প্রায় দেড় হাজার হাতি চলাফেরা করে। কাজিরাঙা থেকে কার্বি আংলং যাওয়ার জন্য কালাপাহাড়-দাইগরুংই হাতিদের সবচেয়ে পছন্দের পথ। অথচ মানুষের বসতি বাড়ার জন্য এই এলাকায় হাতি চলার পথে ঘর বানানো হচ্ছে। কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। হাতি ও মানুষের সংঘাতও ক্রমশ বাড়ছে। ডব্লিউটিআই-এর তরফে জানানো হয়, এই সব নিয়েই কার্বি ও অন্যান্য এলাকার জঙ্গল ঘেঁষা গ্রামের মানুষকে সচেতন করবে লিসন-ক্রিস্টিনা। সেই সঙ্গে, শিক্ষার প্রয়োজন নিয়ে অভিভাবকদের ওরা বোঝাবে। তাদের সচেতন করবে। |