এ যেন উঠতে-উঠতে আচমকা মাঝপথে লিফট আটকে যাওয়া।
মঙ্গলবার দুপুরে যখন আচমকা বিদ্যুৎ চলে যায়, কুলটির গভীর কয়লাখনি ডুলিতে থেকে উপরে উঠছিলেন ছয় কর্মী। শ’চারেক ফুট নীচে ডুলি আটকে যায়। ঝুলে থাকেন খনিকর্মীরা।
তবে শুধু ওই ছ’জনই নন। আসানসোল-রানিগঞ্জের খনিতে মোট ২০০ কর্মী এবং ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে ৬৫ জন আটকে পড়েন। দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় তাঁদের সকলকেই উদ্ধার করা হয়েছে। এ রাজ্যে সরকারি কয়লাখনির নিয়ন্ত্রণ ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের (ইসিএল) হাতে। তারা জানায়, সকালের শিফ্টে খনিতে নেমেছিলেন ১৫ হাজার কর্মী। দুপুর ১টা নাগাদ গ্রিড বসে গেলে সোদপুর ও সাতগ্রাম এরিয়ায় অন্তত দু’শো জন খনিতে আটকে পড়েন। জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ আনিয়ে ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
ইসিএলের খনির একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ডিসেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশন (ডিপিএসসি)। তারা জানায়, ইসিএলের বার্তা পেয়ে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছিল। তবে কুলটির যে সোদপুর ৩-এ পিট থেকে উঠতে গিয়ে যে ছ’জন ডুলিতে আটকে পড়েন, তা ডিপিএসসি-র আওতায় পড়ে না। তাঁরা কাজ করছিলেন প্রায় ৬০০ ফুট গভীরে। তবে এ ঘটনা নতুন নয়। বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা অন্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাঝে-মধ্যে ডুলি আটকায়। ফলে, সেই পরিস্থিতিতে কী করতে হয়, তা-ও অজানা নয়।
ইসিএল সিএমডির কারিগরি সচিব তথা মুখপাত্র নীলাদ্রি রায় জানান, আটকে পড়া সব খনিকর্মীর জন্যই জল পাঠানো হয়েছিল। ডুলিতে আটকে থাকা ছ’জনের জন্যও নীচে জল নামানো হয়। জেনারেটর চালিয়ে ডুলি নীচে নামানো হয়। তার পরে সোদপুর মাউথডিহি ‘ইনক্লাইন’ (খনিতে ওঠা-নামার ঢালু রাস্তা) দিয়ে হাঁটিয়ে তাঁদের বের করে আনা হয়। তাঁরা সুস্থই আছেন। অন্য খনিতেও বিভিন্ন ‘ইনক্লাইন’ দিয়েই বেশির ভাগ কর্মী বেরিয়ে এসেছেন। বিকাল ৫টা থেকে নাগাদ একে-একে খনিতে বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করে।
ধানবাদের খনিতে যাঁরা আটকে পড়েছিলেন, তাঁদের বের করতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। সরকারি কয়লা সংস্থা ভারত কোকিং কোল লিমিডের (বিসিসিএল) টেকনিক্যাল ডিরেক্টর অশোক সরকার জানান, সকালে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মী খনিতে নেমেছিলেন। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পরে তাঁদের সিংহভাগই বেরিয়ে চলে আসেন। সংস্থার সিএমডি তাপসকুমার লাহিড়ি জানান, বড়গড় এলাকায় ৪০ জন, জয়রামপুরে ৫, খড়খড়িতে ৭, পুটকি বালিহারি এলাকায় ৬ এবং শিমলা বহালে ৭ জন খনিকর্মী আটকে পড়েছিলেন। ডিভিসি থেকে বিকল্প বিদ্যুৎ আনিয়ে তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা সেন্ট্রাল কোলফিল্ডস (সিসিএল) জানায়, দ্বিতীয় শিফ্টে তাদের প্রায় ৫ হাজার কর্মীকে খনিতে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। |