আয় বছরে দু’কোটি টাকা। আর খরচ ২০ কোটি।
প্রায় ১০ হাজার কেআইটি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে সরকারের কোষাগারের এটাই হল বাস্তব ছবি। অবস্থা মোকাবিলায় সরকার কার্যত ‘জলের দরে’ ভাড়াটেদের কাছেই ফ্ল্যাটগুলি বেচে দিতে আরও এক বার উদ্যোগী হয়েছে। প্রায় ৫০ বছর আগে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা বলে যে ফ্ল্যাটগুলি শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবারদের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলিই এখন সরকারের গলার কাঁটা হয়ে উঠছে। বাম আমলে এক বার ওই ফ্ল্যাটগুলি ভাড়াটেদের মধ্যেই বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। রাজ্যের নতুন সরকারও এ বার সেই একই পথে হাঁটতে চলেছে। ৬৬ টাকা প্রতি বর্গফুট দরে ভাড়াটেদের কাছেই ফ্ল্যাটগুলি বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে কেএমডিএ-র পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে। কারণ, দেনার দায়ে এমনিতেই সরকারের এখন হাঁড়ির হাল। তার উপরে বছরে ১৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ওই ফ্ল্যাটগুলির ভাড়াটেদের দাবি মানতে।
রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, ফ্ল্যাটগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আর সরকার রাখতে চায় না। তাই সেগুলি ভাড়াটেদের কাছেই বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার কেএমডিএ-র সভায় সরকারি ভাবে প্রস্তাব ওঠে, ৮৪০ টাকা প্রতি বর্গফুট দরে ভাড়াটেদের ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ দেওয়া হবে। যে সমস্ত ফ্ল্যাট বেআইনি ভাবে হস্তান্তর হয়ে গিয়েছে, সেগুলির বর্তমান মালিকদের ফ্ল্যাটের মোট দামের দ্বিগুণ দাম দিতে হবে। কিন্তু কেএমডিএ-র ওই প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী। তাঁর যুক্তি, ফ্ল্যাটগুলি তৈরি হয়েছিল প্রায় ৫০ বছর আগে। ২০০৪ সালে সরকারের পক্ষ থেকে ৬৬ টাকা প্রতি বর্গফুট দরে ভাড়াটেদের ফ্ল্যাট কিনে নিতে বলা হয়েছিল। তাতে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। সেখানে ৮৪০ টাকা বগর্ফুট দরে কে কিনবে! মন্ত্রী প্রস্তাব দেন, তার চেয়ে ৬৬ টাকা বর্গফুট দরে ফ্ল্যাটগুলি বিক্রি করে দেওয়া হোক। বৈঠকে মন্ত্রীর প্রস্তাবই শেষে অনুমোদন পেয়েছে।
ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কোনও ব্লকের দু-একটি পরিবার ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে, তা বিক্রি করা হবে না। পুরো বাড়িটি কিনে নিতে হবে। যাতে সেই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের কোনও দায় আর সরকারের না থাকে।”
একই কারণে ভুগেছেন রাজ্যের প্রাক্তন নগরোন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “আমাদের আমলেও কেআইটি-র ফ্ল্যাটগুলি বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। সিংহীবাগান এবং ক্রিস্টোফার রোডের ফ্ল্যাট ছাড়া অন্য কোথাও ভাড়াটেরা ফ্ল্যাট কেনার জন্য এগিয়ে আসেনি।”
লিজ জমি হস্তান্তর নিয়ে কেএমডিএ-র বৈঠকে আরও একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। কেআইটি থেকে যাঁরা জমি লিজে নিয়েছেন, সেই জমি হস্তান্তর করতে চাইলে বাজার দরের ২৫ শতাংশ টাকা সরকারকে দিতে হবে। তবেই জমি হস্তান্তর করা যাবে। ২০০৯ সালের কেএমডিএ-র পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ওই ধরনের জমি হস্তান্তর করতে হলে জমির বাজার দরের ৫০ শতাংশ দাম দিতে হবে। কিন্তু ওই সময়েও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই এ বারে ফ্ল্যাটের মতোই জমির ক্ষেত্রেও লিজ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সরকারি-ফি ৫০ শতাংশ থেকে কমে ২৫ শতাংশেই নামিয়ে আনা হয়েছে। |