ভাড়া বাড়ালেই সুরাহা হয়, মানছেন সিএসটিসি-র কর্তারাও়
পেনশন চেয়ে মরিয়া বিক্ষোভ অশক্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের
পেনশন মাসে ১২৫০ টাকা। এর মধ্যে ওষুধ কিনতেই মাসে খরচ হয় প্রায় ৭০০ টাকা। বাকি টাকায় কোনও মতে দিন গুজরান করেন কাশীপুরের ৮২ বছরের জয়দেব ভৌমিক এবং তাঁর স্ত্রী ৭০ বছরের সুধাদেবী। তিন মাস ধরে পেনশনের টাকা না-পেয়ে অকূল পাথারে পড়েছেন সিএসটিসি-র প্রাক্তন কর্মী জয়দেববাবু।
একই অবস্থা নারায়ণপুরের বৃদ্ধা অর্চনা বিশ্বাসের। তাঁর স্বামী মণীন্দ্রনাথ বিশ্বাস কাজ করতেন সিএসটিসি-তে। ১৯৯০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে অর্ধেক পেনশন পেতেন তিনি। সেটুকুও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন অর্চনাদেবী।
সিএসটিসি-র প্রয়াত কর্মী চিন্ময় রক্ষিতের স্ত্রী ছায়াদেবীও সমস্যায় পড়েছেন একই কারণে। তিনিও গত তিন মাস ধরে স্বামীর পেনশন পাচ্ছেন না।
মঙ্গলবার দুপুরে বেলঘরিয়ার নীলগঞ্জ রোডে সিএসটিসি-র দফতরের সামনে হাজির হয়েছিলেন জয়দেববাবু, অর্চনাদেবী, ছায়াদেবীর মতো কয়েকশো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তাঁদের অনেকেই বয়েসের ভারে ভাল করে হাঁটতে পারেন না। অশক্ত শরীরে প্রতিবাদে নেমে অনেককেই মাঝেমধ্যে ব্যাগ থেকে ওষুধের প্যাকেট বার করতে হয়েছে। মোটা ফ্রেমের চশমা খুলে মুছতে হয়েছে চোখের জল। সঙ্গে হরেক পোস্টার। কোনওটায় লেখা ‘অবসরপ্রাপ্ত সব কর্মীকে একই নিয়মে সরকারি হারে পেনশন দাও’। কোনওটায় বা লেখা ‘অবিলম্বে সরকারি নির্দেশনামা পালন করে ও বর্ধিত হারে পেনশন দাও’। কলকাতার মানুষ এ-রকম ‘দুর্বল’ প্রতিবাদ আগে কখনও দেখেছেন কি!
জয়দেববাবুরা অবশ্যই মানেন না, তাঁদের এই প্রতিবাদ ‘দুর্বল’। জয়দেববাবুর হার্টের সমস্যা। বেশি ক্ষণ কথা বলতে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়। তিনি বলেন, ‘‘অশক্ত শরীরেও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছি। কিন্তু প্রতিবাদ দুর্বল হবে কেন? সরকার কেন ভাববে না আমাদের মতো বৃদ্ধদের কথা? আমরা তো দয়া চাইছি না। চাইছি ন্যায্য পাওনা।” সংস্থার পেনশন-প্রাপকের সংখ্যা প্রায় ছ’হাজার। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, “সরকার তো উৎসব-অনুষ্ঠানে কত টাকাই খরচ করছে! কত পুরস্কারও দিচ্ছে! যত টান পেনশনের টাকা দিতে?”
এর জবাবে কী বলছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা?


স্ত্রী আর আমি সত্তরোর্ধ্ব। আয় নেই।
৪২ বছর চাকরি করার এই পুরস্কার!
সত্যব্রত দত্ত

কী এমন দোষ করলাম যে, মাসের
পর মাস হকের টাকা পাচ্ছি না?
অণিমা দত্ত

আমি ৭৫। বোন ৬৯। বিধবা বৌদি ৭৮।
ঘরে তিন বৃদ্ধ। কোনও আয় নেই।
সমরব্রত লাহিড়ি

ঘরে অবিবাহিতা মেয়ে। ছেলে সামান্য
কাজ করে। কী করব, কে জানে!
অর্চনা বিশ্বাস
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এবং পরিবহণসচিব বি পি গোপালিকা, দু’জনেই স্বীকার করেছেন, পেনশন দিতে না-পারার মূল কারণ অর্থাভাব। পরিবহণসচিব বলেন, “অর্থাভাব ছাড়াও পরিবহণ নিগমগুলিকে নিয়মনীতির মধ্যে আনতে সতর্ক ভাবে কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। তার জন্য পেনশন দেওয়ার ব্যাপারে সাময়িক ভাবে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে।” কিছু দিনের মধ্যেই প্রাপকেরা তাঁদের প্রাপ্য পেনশন পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন পরিবহণসচিব।
কিন্তু টাকা আসবে কোথা থেকে?
স্পষ্ট করে তা জানাতে পারেননি পরিবহণ দফতরের কর্তারা। তাঁদের হিসেব অনুযায়ী সিএসটিসি-র কর্মীদের বেতন দিতে বছরে লাগে প্রায় ১০৭ কোটি টাকা। পেনশনের জন্য ফি-বছর দরকার হয় আরও প্রায় ১০ কোটি। অর্থাৎ বেতন ও পেনশন মিলিয়ে বছরে সিএসটিসি-র লাগে মোটামুটি ১১৭ কোটি টাকা।
বেতন, পেনশন এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে সরকারের কাছ থেকে বছরে কত টাকা পাচ্ছে সিএসটিসি?
মহাকরণ সূত্রের খবর, বছরে সিএসটিসি-কে দেওয়া হয় ১৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকারি ভর্তুকির টাকায় বেতন ও পেনশন মিটিয়ে দিলে সিএসটিসি-র হাতে থাকে বছরে ৬৩ কোটির মতো। টিকিট বিক্রি বাবদ বছরে আসে আরও প্রায় ২৩ কোটি টাকা। কিন্তু এই ৮৫ কোটি টাকা দিয়ে সিএসটিসি-র ৪২০টি গাড়ির জ্বালানি, মেরামতি এবং অন্যান্য খরচ মেটানো সম্ভব কি?
সিএসটিসি-র কর্তাদের মতে, সম্ভব নয়। এর জন্য আরও টাকা দরকার। রাজ্য সরকারের পক্ষে যদি এই টাকা দেওয়া সম্ভব না-হয়, বাসের ভাড়া বাড়াতেই হবে।
সংস্থার এক কর্তা জানান, সিএসটিসি-র বাসে গড়ে প্রতিদিন চার লক্ষ যাত্রী ওঠেন। তাঁদের কাছ থেকে বাড়তি দু’টাকা করে আদায় করলে বছরে প্রায় ৩০ কোটি আয় করা সম্ভব। এই টাকা এলে সংস্থা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলেই মনে করেন ওই অফিসারেরা। নিদেনপক্ষে টিকিটের দাম গড়ে এক টাকা করে বাড়ালেও প্রায় ১৫ কোটি আদায় করা সম্ভব বলে পরিবহণকর্তাদের মত। এতেও সংস্থার হাল অনেকটাই ফিরবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কিন্তু রাজ্য পরিবহণের নীতি নির্ধারকেরা
অর্থনীতির এই সূত্র মানতে চাইছেন না। রাজ্যের পরিবহণসচিব বলেন, “ভাড়া না-বাড়িয়ে সংস্থাকে স্বনির্ভর করার চেষ্টা হচ্ছে।”
কী ভাবে? গোপালিকা বলেন, “অনাবশ্যক খরচ কমিয়ে এবং নিগমের পড়ে থাকা সম্পদ ব্যবহার করে বাড়তি আয়ের চেষ্টা চলছে। এই নিয়ে সমীক্ষা হচ্ছে।” সংস্থার কর্তারা বলেন, সার্বিক ভাবে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। টিকিট না-কেটে যাতে কেউ বাস থেকে নেমে যেতে না-পারেন, তার জন্য নজরদারিও বাড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে সংস্থার পড়ে থাকা জমিতে শপিং মল, পেট্রোল পাম্প ইত্যাদি চালু করে বাড়তি আয় করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখছেন সমীক্ষকেরা।
জয়দেববাবু, অর্চনাদেবী, ছায়াদেবীরাও তাকিয়ে আছেন সেই সমীক্ষা রিপোর্টের দিকেই। কিন্তু তত দিন তাঁদের চলবে কী ভাবে? জবাব নেই।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.