এক দিকে আরামবাগ মহকুমায় বাড়ছে ডায়েরিয়ার প্রকোপ। অন্য দিকে, এই রোগ প্রতিরোধের অন্যতম ওষুধ ওআরএস অপ্রতুল স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে। সব থেকে করুণ অবস্থা আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালেই। রোগীর চাপ সেখানেই সব থেকে বেশি। প্রতি দিন গড়ে ৫০-৬০ জন করে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ওষুধ না পেয়ে অনেককে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে ওআরএস। অন্য ওষুধও অনেক সময়ে কিনতে হচ্ছে এ ভাবেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষার আগে প্রতি বছরই সাধারণত হাজার দ’শেক প্যাকেট ওআরএস মজুত রাখা হয়। গত দেড় মাসে সেই ‘স্টক’ শেষ। গত সপ্তাহে মাত্র হাজার প্যাকেট ওআরএস জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। সেগুলিও প্রায় শেষ হতে চলল। এ ছাড়া, সাধারণ স্যালাইন যদিও বা কিছু প্যাকেট আছে, কিন্তু রিংগার ল্যাকটেড বা কম্পাউন্ড সোডিয়াম ল্যাকটেড (তীব্র ডিহাইড্রেশনে আত্রান্ত রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ) একেবারেই নেই। হাসপাতাল সুপার নির্মাল্য রায় বলেন, “ওষুধের সরবরাহ না থাকায় প্রতি দিনই ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। বহির্বিভাগের রোগীদেরও ওআরএস দেওয়া বন্ধ করতে হয়েছে। অন্তর্বিভাগের রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে দেওয়া হলেও স্যালাইন (রিংগার ল্যাকটেড) তাঁদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। সমস্ত বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতররকে জানানো হয়েছে।”
হুগলি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তনিমা মণ্ডল অবশ্য আশ্বাস দিয়ে বলেন, “ওষুধের সমস্যা কেটে গিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে পৌঁছে যাবে।”
মহকুমার খানাকুলের দু’টি ব্লক, পুড়শুড়া, আরামবাগ এবং গোঘাট ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ডায়েরিয়ার অন্য ওষুধের সরবরাহ থাকলেও ওআরএস অমিল। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের বক্তব্য, চাহিদা অনুযায়ী ওআরএস পাওয়া যাচ্ছে না। বছরে বর্ষার এই সময়ে নূন্যতম ৭ হাজার প্যাকেট করে মজুত রাখা হয়। গ্রামের মানুষের ওআরএস-এর কার্যকারিতা নিয়ে সচেতনতা বাড়ায় চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু মাস খানেক ধরে চাওয়ার পরেও ৫০০-৭০০ প্যাকেটের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। এই নিয়ে গ্রামে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে হ্যালোজেন ট্যাবলেট বা ব্লিচিংয়ের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এ দিকে রবিবারও মহকুমার বেশ কিছু গ্রামে বেশ কয়েক জনের ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। আরামবাগের মায়াপুর, শিমূলতলা, দক্ষিণ রসুলপুর, কাবলে, পুড়শুড়ার মসিনান, সোদপুর, বড়দিগরুই, গোঘাটের বাজুয়া, মদিনা, কুমারগঞ্জ, খানাকুলের পোল, কিশোরপুর প্রভৃতি এলাকা থেকে এ দিন দুপুর পর্যন্ত ৩৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন মহকুমা হাসপাতালে। পুড়শড়ার বিধায়ক পারভেজ রহমানের কাছে রোগীর আত্মীয়েরা অভিযোগ জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে তৃণমূল বিধায়কের বক্তব্য, সরকারকে হেনস্থা করতেই ওষুধের ঘাটতি দেখানো হচ্ছে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনা হবে।”
|
ডায়েরিয়া রুখতে স্বাস্থ্যবিধি
|
• গোড়া-বাঁধানো নলকূপের জল পান করা যেতে পারে। |
• পুকুরের জল খাওয়া যাবে না। |
• বাসনপত্র পুকুরে ধোওয়া যাবে না। |
• জল অন্তত ২০ মিনিট ফুটিয়ে খেলে ভাল। |
• হাতের কাছে ওআরএস না থাকলে মুড়ি-ভেজানো জল, ডাবের জল বা নুন-চিনির জল রোগীকে খাওয়ানো যেতে পারে। |
• বার বার বমি-পায়খানা হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে। |
• সংক্রমণ হলে আশপাশের এলাকার নর্দমা, পুকুরে চুন-ব্লিচিং পাউডার ছড়াতে হবে। |
|