ব্লাড ব্যাগ অমিল, সঙ্কটে রক্ত সংগ্রহ
গামী ১৫ দিনে পূর্বাঞ্চলের ‘মডেল ব্লাড ব্যাঙ্ক’ হিসেবে স্বীকৃত মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের মোট ৭১টি রক্তদান শিবির রয়েছে। যথেষ্ট পরিমাণ রক্ত সংগৃহীত হবে ভেবে কর্তৃপক্ষের আনন্দিত হওয়ার কথা। কিন্তু ওই সব শিবির থেকে আদৌ রক্ত সংগ্রহ করা যাবে কি না, সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। কারণ, হোলব্লাড সংগ্রহ করার মতো সিঙ্গল ব্লাড ব্যাগের চূড়ান্ত আকাল। কলকাতার সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির ব্ল্যাড ব্যাঙ্কেও সিঙ্গল ব্লাড ব্যাগের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। এ দিকে, সারা বছরের মধ্যে একমাত্র অগস্ট-সেপ্টেম্বরেই কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে সব চেয়ে বেশি রক্তদান শিবির আয়োজিত হয়। তাই রাজ্য এড্স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (স্যাক্স)-র কর্তারা আশঙ্কা করছেন, এই সময়ে দিল্লি থেকে সিঙ্গল ব্যাগ না এলে সারা বছর আর হোলব্লাডের অভাব পূরণ করা যাবে না।
স্বভাবতই দিশাহারা স্বাস্থ্য দফতর। স্যাক্স থেকে সোমবারই জাতীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ন্যাকোকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সিঙ্গল ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ না করলে কলকাতা ও তার আশপাশে সমস্ত স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির বন্ধ করে দিতে হবে। পাশাপাশি, তারা কেরল, পুদুচেরি এবং ওড়িশার স্যাক্স-এর থেকেও সিঙ্গল ব্লাড ব্যাগ ধার চেয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারাই বলছেন, “অন্য সময়ে রক্তদান শিবির থাকে না বলে রক্তের আকাল হয়। আর এখন শিবির আছে, অথচ রক্ত সংগ্রহের ব্যাগ নেই। এটা অভাবনীয়!”
এ দিকে, সিঙ্গল ব্লাড ব্যাগের আকালের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। স্যাক্স আর ন্যাকো দু’পক্ষ দু’রকম ব্যাখ্যা দিয়েছে। স্যাক্সের অভিযোগ, ঠিক সময়ে দরপত্র দেয়নি ন্যাকো। তাই ব্যাগ কেনা ও সরবরাহ করা যায়নি। ন্যাকোর পাল্টা বক্তব্য, স্যাক্সকে সিঙ্গল ব্যাগের ব্যবহার কমিয়ে ডবল-ট্রিপল ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে বলা হয়। তাই ন্যাকো সিঙ্গল ব্যাগের বরাতও কম দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্যের ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির গড়িমসিতে সিঙ্গল ব্যাগের ব্যবহার কমেনি। তাই এই সঙ্কট।
রক্তদান শিবির থেকে হোলব্লাড সংগ্রহ করতে আগামী দু’সপ্তাহে মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে সাড়ে চার হাজার সিঙ্গল ব্লাড ব্যাগ দরকার। কিন্তু তাদের ভাঁড়ারে এই মুহূর্তে সিঙ্গল ব্যাগ রয়েছে সাকুল্যে ৭৫০-৮০০। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি ও ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের প্রধান কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “গত সপ্তাহে ১০০০ সিঙ্গল ব্যাগ এল। কিন্তু আমাদের স্যাটেলাইট ইউনিট তমলুক, কাঁথি আর হলদিয়াকে সে সব ভাগ করে দিয়ে আমাদের হাতে পড়ে রইল মাত্র ১০০টি ব্যাগ। এ দিকে, সপ্তাহে আট-ন’টি শিবির রয়েছে। জানি না কী হবে।”
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের সুপার পার্থজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁদের ব্লাড ব্যাঙ্কে এখন একটিও সিঙ্গল ব্লাড ব্যাগ নেই। রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ প্রায় বন্ধ করে ট্রিপল ব্যাগ কেটে তাঁরা হোলব্লাড রাখছেন। এসএসকেএমে পড়ে আছে মাত্র ২৫টি সিঙ্গল ব্যাগ। তারাও ট্রিপল ব্যাগ কেটে ব্যবহার করছেন। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের স্যাটেলাইট ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা ১১টি। গত সপ্তাহে ১ হাজার সিঙ্গল ব্যাগ কেরল থেকে আসার পরে তার প্রায় পুরোটাই ওই ১১টি কেন্দ্রের মধ্যে বিলি করা হয়েছে। এখন পড়ে রয়েছে ২৩০টি-র মতো ব্যাগ। এ দিকে, ১ অগস্ট থেকে প্রতি দিন তাদের তিন-চারটি করে এবং শনি ও রবিবার ১০-১২টি করে রক্তদান শিবির রয়েছে।
স্যাক্সের অন্তর্গত ব্লাড-সেফটি বিভাগের অফিসারেরা জানিয়েছেন, প্রতি তিন মাস অন্তর ব্লাড ব্যাগ পাঠায় ন্যাকো। গত ফেব্রুয়ারিতে তারা ১ লক্ষ ২২ হাজার সিঙ্গল ব্যাগ পাঠিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে প্রতি মাসে ৪৫-৪৮ হাজার সিঙ্গল ব্লাড ব্যাগ লাগে। ফলে মার্চের পর থেকেই টানাটানি শুরু হয়। বিভাগের এক যুগ্ম অধিকর্তার কথায়, “অগস্টে সব চেয়ে বেশি সিঙ্গল ব্যাগ লাগে। তাই জুন থেকে ন্যাকোকে চিঠি লিখতে শুরু করেছি। ১২টা চিঠি দিয়েছি। ওদের একই উত্তর, দরপত্রে কিছু সমস্যা হয়েছে। এখনও ব্যাগ পাঠানো যাচ্ছে না। তা হলে আমরা কী করব?” তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহে কেরল থেকে ছ’হাজার ৯২০টি সিঙ্গল ব্লাড ব্যাগ ধার করে আনা হয়। কিন্তু তা-ও শেষ হওয়ার মুখে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.