একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকছে। ম্যাটাডর ভ্যান, ছোট লরি, ট্যাক্সিতেও আনা হচ্ছে অসুস্থদের। কেউ পেট চেপে কাতরাচ্ছেন। কারও ক্রমাগত বমি হচ্ছে। ধুম জ্বরে কারও আবার হুঁশ নেই।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকেই প্রায় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। খাদ্যে বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে উত্তর দমদমের বাঁকড়া অঞ্চল থেকে বেশি রাত পর্যন্ত অন্তত ১৬৫ জন আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে আটটি শিশু এবং ২২ জন মহিলাও আছেন। এক মহিলা এবং একটি শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, রবিবার সন্ধ্যায় বাঁকড়ায় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ঘুগনি খেয়েই এই বিপত্তি। গভীর রাত থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন অনেকে। আইডি হাসপাতালে রোগী আসা শুরু হয় সোমবার দুপুরের পরে। সন্ধ্যার পরে রোগী আসার হার প্রায় তিন গুণ হয়ে যায়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সুপার, অধ্যক্ষ ও বাকি সব চিকিৎসককে হাসপাতালে ডেকে পাঠানো হয়। তদারক করতে আসেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন সৎপথী, স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। জরুরি ভিত্তিতে কলকাতা মেডিক্যাল, নীলরতন, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ, বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক পাঠানো হয় আইডি-তে। |
রোগীর ভিড় আইডিতে। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র |
মাসখানেক ধরেই আইডি হাসপাতালে স্যালাইনের আকাল চলছিল। চিকিৎসকদের ভয় ছিল, এই অবস্থায় কোনও জরুরি পরিস্থিতি হলে সামলানো মুশকিল হবে। এ দিন সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়ে দাঁড়ায়। ফলে হাসপাতালে স্যালাইনের অভাবে ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে। তড়িঘড়ি আশপাশের ওষুধের দোকান খুলিয়ে স্যালাইন, ওআরএস এবং ওষুধ কেনার নির্দেশ দেন সুশান্তবাবু। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ থেকেও স্ট্যান্ড-সহ স্যালাইন পাঠানোর ব্যবস্থা হয়।
পরে স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্তবাবু বলেন, “রাজ্যে ডায়েরিয়া ও সংক্রামক রোগের একমাত্র ‘রেফারেল’ হাসপাতালে (আইডিতে) কেন যথেষ্ট স্যালাইন মজুত থাকবে না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এখন ‘লোকাল পারচেজ’ (স্থানীয় ভাবে কিনে নেওয়া) করতে বলেছি। অন্য হাসপাতাল থেকেও স্যালাইন আনাচ্ছি। স্যালাইন নিয়ে তদন্ত হবে।” হাসপাতাল পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমাদেবী অবশ্য বলেন, “আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। অনেকে ভয় পেয়েও চলে আসছেন। যে-ক’জন এসেছেন, সকলকেই ভর্তি করা হয়েছে। পরে যদি প্রয়োজন হয়, অন্য হাসপাতালেও ভর্তির ব্যবস্থা হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় একটি বাড়িতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ঘুগনি খান বহু মানুষ। রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। কয়েক জনকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার দুপুরের পরে অসুস্থের সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাঁদের আনা হয় আইডি-তে। সিরাজুল শেখ নামে এক যুবক জানান, তাঁরা প্রায় ২০টি অ্যাম্বুল্যান্স, ২২টি ট্যাক্সি, ছোট লরিতে অসুস্থদের এনেছেন। আইডি-তে ভর্তি হয়েছেন ৬৫ বছরের রহমত আলি এবং তাঁর দুই ছেলে হাসান ও হামির। তাঁরা জানান, রাতেই পেট কামড়ানো আর জ্বর শুরু হয়েছিল। আব্বাস আলি নামে এক যুবকের দিদি ফতেমা, দাদা কামাল এবং দুই বোনপো-বোনঝি ভর্তি হয়েছেন। আব্বাস বলেন, “আমাদের পাড়ায় এমন লোক পাওয়া মুশকিল, যিনি অসুস্থ হননি। বোনঝি হাবিবা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ওর অবস্থা ভাল নয়।” |