টেমসের তীরে গ্রেটেস্ট শো
আগের রাতেও ক্যামেরায় ডুবে ছিলেন গগন
গের দিন রাত দশটা পর্যন্ত জয়দীপ কর্মকারের নতুন ক্যামেরা নিয়ে তিনি খুটখাট করেছিলেন গেমস ভিলেজে নিজের ঘরে। ক’দিন আগে ওয়েস্ট অন মলে শপিং করতে গেছিলেন একসঙ্গে। ক্যামেরার খোঁজে। টেবল টেনিস, ক্রিকেট বাদে গগন নারঙ্গের অন্যতম শখ, ফোটোগ্রাফি। জীবনের সেরা যুদ্ধের আগের রাতেও ফোটোগ্রাফিই ছিল প্রাণ।
সেই লোককে অলিম্পিকের বিজয়মঞ্চে দেখে নাগেরবাজারের অমরপল্লির ছেলে জয়দীপ উচ্ছ্বসিত। লন্ডনের শুটিং রেঞ্জ থেকে ফোনে বাংলার শ্যুটার বলছিলেন, “গত অলিম্পিকের সময় নাগেরবাজারের বাড়িতে বসে দেখেছিলাম বিন্দ্রার পদক জয়। আর এ বার সামনে থেকে দেখলাম, পদক জয়। ভাবতেই অন্য রকম লাগছে।” গগন তখন ডোপিং সেন্টারের পথে।
অলিম্পিক পদক জয়ের আগের রাতে কেমন চাপে ছিলেন হায়দরাবাদের শ্যুটার? জয়দীপের ঘরের দরজা খুললেই গগন নারঙ্গের ঘর। জয়দীপের জবাব, “একটা নিক্কন ক্যামেরা কিনেছি। রাত দশটা নাগাদ সেটা নিয়ে ঘরে ঢোকার সময় দেখি ওর দরজা খোলা। ওই ডাকল। তার পরে ক্যামেরাটা নিয়ে অনেকক্ষণ কাজ করল। সব দেখল খুঁটিয়ে। কাগজপত্রগুলো পড়ল। ও প্রচণ্ড ঠান্ডা।”
বিজয় মঞ্চে: সোনা ও রুপোজয়ী মলদোভিয়ানু এবং কামপ্রিয়ানির সঙ্গে ভারতের গগন। ছবি: রয়টার্স
এমনিতে অভিনব বিন্দ্রারই বেশি ঘনিষ্ঠ জয়দীপ। তবু দীর্ঘ দিন সার্কিটে থাকার সুত্রে গগনকে ভাল চেনেন জয়দীপ। নারঙ্গ যেখানে পদক পেলেন, সেখানে গত বারের সোনা জয়ী ব্যর্থ হলেন কেন? বাঙালি শু্যটারের ব্যাখ্যা, “লন্ডনে গুলি ছোঁড়া খুব সহজ নয়। সমর্থকরা প্রচণ্ড চেঁচাচ্ছে। অনেক ভারতীয়। একটা দশ মারলেই কী হাততালি। এমন দৃশ্য দেখিনি কোথাও। ভারতে তো দর্শকই হয় না। তার পরে রেঞ্জে লেখা থাকে, সাইলেন্স। মানসিক ভাবে অভিনব একটু চাপে ছিল। প্রথম থেকে স্বচ্ছন্দ ছিল না। উল্টো দিকে গগন কিন্তু নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছে। এমনিতে ও খুব দ্রুত মারে। এ দিন খুব আস্তে আস্তে সময় নিয়ে মেরেছে প্রথম দিকে। ধীরে ধীরে খেলাটা তুলেছে। মাথা ঠান্ডা রেখেছে।”
এয়ার ইন্ডিয়ার এক্সিকিউটিভ, এম বি এ গ্র্যাজুয়েট গগন নারঙ্গের ‘বাংলার যোগাযোগ’ও ফাঁস করে দিলেন তাঁর বাঙালি সতীর্থ ও প্রতিদ্বন্দ্বী। জয়দীপের কাছেই জানা গেল, পদক জয়ী শ্যুটারের বাবা দীর্ঘ দিন ছিলেন কলকাতায়। পড়াশোনার জন্য। বাংলা ভাল জানেন। “আমি তো ওঁর সঙ্গে বাংলায় কথা বলি।” একটা সময় বাড়ি করবেন বলে জমি কিনেছিলেন ভদ্রলোক। গগনের রাইফেল কেনার জন্য বিক্রি করে দেন সেই জমি। ওই স্মৃতি থেকেই নাকি বর্তমান প্রজন্মের জন্য পুণের কাছে গগন তাঁর অ্যাকাডেমি খুলেছেন।

১ পয়েন্টের শাপমুক্তি বেজিং অলিম্পিকেও মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেননি গগন নারঙ্গ। যোগ্যতা অর্জন পর্বে ৫৯৬ তুলে অভিনব বিন্দ্রা চতুর্থ হন। গগন করেছিলেন বিন্দ্রার থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট কম। ৫৯৫। সেই পয়েন্ট তুলেও অন্য চার জন পরের রাউন্ডে যান। টেকনিক্যালি ছিটকে যান গগন। হয়েছিলেন ৯ নম্বর।
টুইটারে সচিন
গগন নারঙ্গ, লন্ডন অলিম্পিকে ভারতের প্রথম পদক জিতে তুমি আমাদের গর্বিত করেছ। প্রার্থনা করছি, আমরা আরও সাফল্য পাব।

অলিম্পিক পদক জয়ীর সেরা তিনটি বৈশিষ্ট্য কী? জয়দীপ বললেন, “গগনের অ্যাটিচ্যুডটাই দারুণ। বিন্দ্রা প্রচণ্ড পরিশ্রমী। ওকে বললে রাত দিন ট্রেনিং করে দিতে পারে। গগন নারঙ্গ কিন্তু হ্যাপি গো লাকি ধরনের। অনেক প্রতিভাবান। কম ট্রেনিং করেও আসল সময়ে তাক লাগিয়ে দিতে পারে। পারফেকশন দারুণ।” যে দু’জন শ্যুটার নারঙ্গের আগে থাকলেন, তাদের মধ্যে সোনা জয়ী রোমানিয়ান মলদোভিয়ানুকে দেখে বিস্মিত জয়দীপ। “যে রুপো পেল, তারই সোনা পাওয়ার কথা ভেবেছিলাম। রোমানিয়ান ছেলেটা আগে দারুণ খেলত। মাঝে হারিয়ে গেছিল। আবার এ দিন চমকে দিল।”
৩ তারিখ প্রোন ইভেন্টে জয়দীপের প্রতিদ্বন্দ্বী গগন। ওখানে কেমন লড়াই হবে? স্পষ্ট বললেন, “অলৌকিক কিছু একটা হতেই পারে। আজ রোমানিয়ার মলদোভিয়ানু যেমন চ্যাম্পিয়ন হল, তেমন তো অঘটন হতেই পারে। এখানে বেশ হাওয়া বইছে। বেশি হাওয়া হলে আমার ভাল। ফেভারিটদের সমস্যা হবে। তবে গগনের দুটো প্রোন ইভেন্টের চেয়ে এই এয়ার রাইফেল ইভেন্টটাই বেশি পছন্দের। ওটাই ওর সেরা ইভেন্ট।” তা হলে শ্যুটিং থেকে পদক জয়ের সম্ভাবনা আর কার থাকল? জয়দীপ নাম করলেন রঞ্জন সোধী আর মানবজিৎ সিংহ সাধুর। সঙ্গে সহাস্য মন্তব্য, “আমাকেও ভুলে যাবেন না।”
ভিলেজের সামনের ঘরে যাঁর সঙ্গে আড্ডা মারতেন, শপিং মলে যেতেন, তাঁর অলিম্পিক পদক জয় দেখে নাগেরবাজারের বাঙালির মনোবল যেন বেড়ে গিয়েছে!

গগন নারঙ্গ
জন্ম: ৬ মে, ১৯৮৩
পানিপথে আদি বাড়ি, চেন্নাইয়ে জন্ম, বসবাস হায়দরাবাদে, অ্যাকাডেমি পুণেতে
সেরা সাফল্য
অলিম্পিক: ব্রোঞ্জ (২০১২)
বিশ্বকাপ: তিনটি সোনা (২০০৯, ২০০৮, ২০০৬)
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ: ব্রোঞ্জ (২০১০)
কমনওয়েলথ: আটটা সোনা (২০০৬, ২০১০)
এশিয়ান গেমস: দুটি রুপো (২০১০)
বিশ্বরেকর্ড: ২০০৮, ২০১১ ছ’শো পয়েন্ট স্কোর করে
বিতর্ক
২০১০ সালে তৃতীয় বারের জন্য মনোনীত হয়েও রাজীব গাঁধী খেলরত্ন না পাওয়ায় কমনওয়েলথ গেমসে খেলতে চাননি।
কেরিয়ারের শুরুতে: বাবা জমি বিক্রি করে শ্যুটিংয়ের সরঞ্জাম কিনে দেন
হবি: ফোটো তোলা, এয়োরো মডেলিং
পছন্দের ফ্যাশন: ব্র্যান্ডেড পোশাক, দামি বিদেশি ঘড়ি
পদক ছাড়া যা পাচ্ছেন
হরিয়ানা সরকার দিচ্ছে ১ কোটি টাকা, স্পনসর দিচ্ছে ২ কেজি সোনা, সাইয়ে কোচের চাকরির প্রস্তাব মাকেনের।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.