অলিম্পিক আসমানে গগন
বিন্দ্রার বিদায়ের দিনে
আবির্ভাব নতুন নায়কের
তাঁর মনে হচ্ছে, বুক থেকে যেন একটা পাথর নেমে গিয়েছে।
তাঁর মনে হচ্ছে, নিজের কৃতিত্ব খুব সামান্য। বরং এই সাফল্যের পিছনে পরিবার-স্পনসরদের কৃতিত্ব অনেক বেশি।
তাঁর মনে হচ্ছে, বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে মোক্ষম মুহূর্তে। নইলে ব্রোঞ্জ নয়, সোনার পদক গলায় ঝোলানো খুব কঠিন হত না।
কে ইনি? নতুন করে বলার কিছু নেই। সোমবার বিকেল পাঁচটার পর এই পঞ্জাবি যুবকের নাম গোটা ভারতবর্ষের মুখে। ইনিগগন নারঙ্গ। লন্ডন অলিম্পিকে ভারতের প্রথম পদকজয়ী। ১০ মিটার এয়ার রাইফেল শ্যুটিংয়ের যে মঞ্চ থেকে ফাইনাল রাউন্ডের আগেই ছিটকে যেতে হল অভিনব বিন্দ্রাকে, সেই মঞ্চই সোমবার বিকেলে দেখল নতুন ভারতীয় তারকার আবির্ভাব।
রয়্যাল আর্টিলারি ব্যারাকে দাঁড়িয়ে সারি সারি শ্যুটার। পর পর আট জন। হাতে রাইফেল। চোখ আটকে বোর্ডের বিন্দুতে। ভারতীয় ঘড়ি বলছে, বিকেল পৌনে পাঁচটা। ঘণ্টা কয়েক আগে বিশাল ধাক্কা খেয়েছে ভারত। বিন্দ্রা ছিটকে গিয়েছেন। ষোল নম্বর হয়ে যোগ্যতাঅর্জন পর্ব থেকেই বিদায়। সবেধন নীলমনি বলতে শুধু নারঙ্গ। যোগ্যতাঅর্জন পর্বে তিনে শেষ করেছেন। পারবেন তিনি একটা পদক নিয়ে পোডিয়ামে উঠতে? দশ বার শ্যুট করতে পারবেন? বোর্ডের বিন্দুর যত কাছে শট থাকবে, তত উজ্বল হবে পদকের সম্ভাবনা। ব্রোঞ্জ, রুপো, কিংবা...।
হাতের মুঠোয় পদক, আসছে একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা।
লন্ডনে স্টেডিয়ামের বাইরে গগন নারঙ্গ। ছবি: উৎপল সরকার
না, সোনা হয়নি শেষ পর্যন্ত। সেটা জিতলেন রোমানিয়ার মলদোভিয়ানু অ্যালিন জর্জ। রৌপ্য পদকও এল না। সেটা গলায় ঝুলিয়ে নিলেন ইতালির নিকোলো কাম্প্রিয়ানি। আসলে ফাইনাল রাউন্ডে এক-একবারে দশের নীচে পয়েন্ট থাকা মানে ধীরে-ধীরে স্বপ্নের অপমৃত্যু। নারঙ্গ নয়ের আশেপাশে স্কোর করলেন তিন বার। বাকি শটগুলোর কোনওটা থেকে উঠল ১০.৬, কোনওটা থেকে ১০.৭। মুহূর্তের ভুলভ্রান্তি শেষ দিকে তাঁকে পদক থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু পর পর দু’টো কমনওয়েলথ গেমসে দেশকে আটটা সোনার পদক দিয়েছেন যিনি, তিনি আর কতক্ষণ ভুল করবেন? শেষ দু’টো শটের প্রত্যেকটা থেকে উঠল দশের উপর পয়েন্ট। এবং সব মিলিয়ে ফাইনাল রাউন্ডে ১০৩.১ (কোয়ালিফাইং রাউন্ড ধরলে মোট ৭০১.১) স্কোর করে ব্রোঞ্জ জিতে ফেললেন নারঙ্গ! রয়্যাল আর্টিলারি ব্যারাকে তখন বিস্ফোরণ! ভারতীয়দের শব্দব্রহ্মে কান পাতা দায়।
অথচ আগের রাতেও নারঙ্গকে দেখে বোঝা যায়নি যে আর কয়েক ঘণ্টা পরেই অলিম্পিক যুদ্ধে তিনি নামবেন। সতীর্থ জয়দীপ কর্মকারের নতুন কেনা ক্যামেরা নিয়ে দিব্যি খুটখাট করেছেন। টেনশন তো ধাতে নেই। বরং সোজা কথা সোজাসুজি বলতে ভালবাসেন। দু’বছর আগেই পর পর তিন বার রাজীব খেলরত্ন পুরস্কারের জন্য মনোনীত না হওয়ার পর সাফ বলে দিয়েছিলেন, কমনওয়েলথ গেমস খেলতে যাবেন না। আবেগে গা ভাসানোও না-পসন্দ। নইলে পদক পেয়ে আর কে কবে বলেছেন, “বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেল মনে হচ্ছে। তবে নিজের পারফরম্যান্সে খুশি নই। আমার কোচও নন।”

আর অলিম্পিক পদকেও ‘খুশি নই’ বলতে পারেন বলেই হয়তো একটার পর একটা পদক এসেছে। কখনও বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ। কখনও কমনওয়েলথে সোনার পর সোনা। আদতে পঞ্জাবি, কিন্তু নারঙ্গের জন্ম চেন্নাইয়ে। আর হালফিলে তাঁর ঠিকানা হায়দরাবাদ। ছেলেকে শ্যুটার করবেন বলে এক সময় নিজের জমি বিক্রি করে সরঞ্জাম কিনে দিয়েছিলেন বাবা বি এস নারঙ্গ। আর সেই জন্যই বোধহয় নারঙ্গের কাছে তিনি নিজে নন, তাঁর পরিবার আগে। মহাকীর্তির পরেও তো বলেছেন, “আমার কৃতিত্ব আর কতটুকু? আমার পরিবার, স্পনসরদের কৃতিত্ব অনেক বেশি।” ফাইনাল রাউন্ডে চাপ ছিল মারাত্মক, মেনে নিলেন। “কয়েক বার নয়ের বেশি পয়েন্ট উঠল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পদকটা পেয়েছি। আমার চেয়েও যাঁরা এত দিন আমার সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের কাছে এই পদকের গুরুত্ব অনেক।”
নারঙ্গকে ঘিরে যখন আলোর বৃত্ত, তখন আঁধার ঢাকছে অন্য ভারতীয় শু্যটারকে। কে-ই বা ভেবেছিল, বেজিংয়ের সোনাজয়ী বিন্দ্রা ছিটকে যাবেন কোয়ালিফাইং রাউন্ডে? শেষ করবেন ষোল নম্বরে? “আজ আমার দিনই ছিল না। শুরুটা ভাল হয়নি। পরেও আর কিছু করতে পারলাম না। চাপটাও মারাত্মক ছিল। আর এখানে যুদ্ধটা মারাত্মক পর্যায়ের হয়। আমি সেখানে কখনও ভাল করেছি। কখনও খারাপ,” হতাশার সুরে বলে ফেলেছেন বিন্দ্রা।
আর সব দেখেশুনেই হয়তো, ব্রোঞ্জ নিয়ে উৎসবে মাততে নারাজ নারঙ্গ। বুঝতে পারছেন, বিন্দ্রার ব্যর্থতা ঢাকতে হবে তাঁকেই। সামনে আরও দু’টো ইভেন্ট। ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশন এবং ৫০ মিটার রাইফেল প্রোন। সিনিয়র নারঙ্গ ছেলেকে সতর্ক করেছেন। পরামর্শ দিয়েছেন উৎসব ভুলে বাকি দু’টো ইভেন্টে মন দিতে। নায়ক নিজেও বলছেন, “উৎসব পরে হবে। বাড়িতে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সে সব নিয়ে ভাবছিও না। বাকি দু’টো ইভেন্টই এখন মাথায়।”
নারঙ্গের চোখ যে গগনে, এর পর বোধহয় লিখে ফেলা যায়!

আজ
তিরন্দাজি • জয়ন্ত তালুকদার (দুপুর ১টা)
• রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় (সন্ধে ৭-৩০)
• তরুণদীপ রাই (রাত ৮-৪৫)
• সুওরো (দুপুর ৩-১৫)
ব্যাডমিন্টন • পারুপল্লি কাশ্যপ (দুপুর ১টা)
• জ্বালা গাট্টা-অশ্বিনী পোনাপ্পা (রাত ১১টা)
• জ্বালা গাট্টা-ভি দিজু (দুপুর ২-১৫)
বক্সিং • দেবেন্দ্র সিংহ (সন্ধে ৭টা)
• মনোজ কুমার (রাত ২-১৫)
রোয়িং • স্মরণ সিংহ (দুপুর ২-২০)
• সন্দীপ কুমার-মনদীপ সিংহ (দুপুর ৩টে)
ভারোত্তোলন • কাতুলু রবি কুমার (দুপুর ২-৩০)
সোমবার
শ্যুটিং • ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে নারঙ্গের ব্রোঞ্জ। ব্যর্থ বিন্দ্রা।
হকি • নেদারল্যান্ডসের কাছে হার ২-৩
তিরন্দাজি (ব্যক্তিগত ইভেন্টের) প্রি-কোয়ার্টারে হার বোম্বাইলা দেবীর
টেনিস • ভূপতি-বোপান্না ও পেজ-বিষ্ণু বর্ধন জুটি প্রি-কোয়ার্টারে।
• সিঙ্গলসে বিষ্ণুর হার।
বক্সিং • সুমিত সঙ্গওয়ানের বিদায়
ব্যাডমিন্টন • দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ী সাইনা
• মেয়েদের ডাবলসে জয়ী
• জ্বালা গাট্টা-অশ্বিনী পোনাপ্পা




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.