ডিআইজি বাংলোর অদূরেই চলল গুলি |
রেলশহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। রবিবার রাতে দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে খরিদায় ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ)-র বাংলোর পাশেই খুন হন ব্যবসায়ী রাধেশ্যাম গুপ্ত। মোটর সাইকেলে থাকা ওই ব্যবসায়ী ও তাঁর এক কর্মচারীকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। রাধেশ্যাম ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর গুলিবিদ্ধ হন তাঁর কর্মচারী। এই ঘটনার পর থেকেই উদ্বিগ্ন খড়্গপুরবাসী। এমনিতেই শহরে চুরি-ছিনতাই। তার উপর গুলি করে ব্যবসায়ী খুন, তা-ও আবার খোদ ডিআইজির বাংলোর পাশে!
শঙ্কিত শহরের ব্যবসায়ী-মহলও। খড়্গপুর চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক রাজা রায় বলেন, “শহরবাসীর উদ্বেগ স্বাভাবিক। ডিআইজির বাংলোর সামনে সব সময় রক্ষী মোতায়েন থাকে। অদূরে পুলিশ ফাঁড়ি। এই এলাকাতেই যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে শহরের অন্য এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।” এক সময় খড়্গপুরের খরিদায় দাপিয়ে বেড়াত দুষ্কৃতিরা। হামেশাই চুরি-ছিনতাই হত। দিনেদুপুরে সমাজবিরোধীদের উপদ্রব ছিল প্রায় রোজকার ঘটনা। ক্রমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ইদানীং এলাকায় ফের দুষ্কৃতীদের যাতায়াত বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডাকাতদের গুলিতে খরিদায় সঞ্জয় সাহু নামে এক যুবক খুন হন। ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে ওই যুবককে গুলি করে খুন করে একদল দুষ্কৃতী। তার কয়েক মাস আগে রীতা সাউ নামে এক মহিলাও দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন। |
এক দিকে ডিআইজির বাংলো। অন্যদিকে পুলিশ ফাঁড়ি। তাই এই এলাকায় ‘বাড়তি’ পুলিশি নজরদারি থাকে। তার মধ্যেই কী ভাবে খরিদা ও তার আশপাশের এলাকায় একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে, সে প্রশ্ন উঠছেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানে পর্যাপ্ত পথবাতি নেই। ফলে দুষ্কর্ম করে যে কেউ সহজে চম্পট দিতে পারে। পথবাতির সমস্যা মানছেন পুরপ্রধান জহরলাল পালও। তিনি বলেন, “এটি রেলের এলাকা। এখানে আরও বেশি সংখ্যক পথবাতি থাকলে ভাল হয়। বিষয়টি নিয়ে আমি রেল- কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।” তাঁর কথায়, “যে ঘটনা ঘটেছে, তা পুলিশ-প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতোই। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। খুনে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা জরুরি।” প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পান্ডের কথায়,“ শহরের নিরাপত্তার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। ডিআইজির বাংলোর সামনে এসে দুস্কৃতিরা খুন করে পালিয়ে গেল, এমন ঘটনা শঙ্কার।”
খড়্গপুরে নানা ভাষাভাষি মানুষের বাস। এক সময় এখানে প্রকাশ্য দিবালোকেও দাপিয়ে বেড়াত দুষ্কৃতীরা। রেল-মাফিয়াদের চক্র ছিল সক্রিয়। এখন সেই পরিস্থিতি না থাকলেও কখনও মালঞ্চ, কখনও ইন্দা ও তার আশপাশের এলাকায় চুরি-ছিনতাই হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে মালঞ্চয় এক ব্যবসায়ীর গয়নার ব্যাগ ছিনতাই হয়। শহরবাসীর মতে, শহরে ফের দুষ্কৃতীদের দাপট বাড়ছে। পুলিশ-প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না করলে পরিস্থিতির অবনতি হবে। রবিবার রাতে যেখানে খুন হন ওই ব্যবসায়ী, তার পাশেই হোটেল রয়েছে ভবতোষ দাসের। তিনি বলেন, “এমন ঘটনায় উদ্বেগ হওয়াটাই স্বাভাবিক।” নিহত ব্যবসায়ী রাধেশ্যাম গুপ্তর ছেলে পরশনাথ গুপ্ত বলছিলেন, “যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে সব সময়ই পুলিশি নজরদারি থাকে। তার মধ্যেই খুন করে পালিয়ে গেল। এমন ঘটনা ভাবতে পারছি না।” |