ঘুমের মধ্যে পুড়ে মারা গেলেন ওঁরা। তামিলনাড়ু এক্সপ্রেসের এস-১১ কামরার অন্তত ৩২ জন যাত্রী। কিন্তু কী ভাবে ঘটল তামিলনাড়ু এক্সপ্রেসের এই অগ্নিকাণ্ড? শুধুই কি সুরক্ষায় গলদ? নাকি এর পিছনে রয়েছে কোনও অন্তর্ঘাতের ঘটনা?
রেল সূত্রের খবর, এ দিন খুব ভোরে যখন ট্রেনে আগুন লাগে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রায় সব যাত্রী ঘুমিয়েছিলেন। ফলে ট্রেনে আগুন ধরেছে, এটা বুঝে ওঠার আগেই যাত্রীরা আটকে পড়েন জতুগৃহে। দেহগুলি এমন ভাবে অগ্নিদদ্ধ হয়েছে, যে সেগুলি শনাক্ত করাই কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কী ভাবে কামরাটিতে আগুন লাগল, তা এ দিন সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তবে সম্ভাব্য কারণের তালিকায় ট্রেনের কামরায় দাহ্য পদার্থ রাখা থেকে শুরু করে শর্ট সার্কিট এবং অন্তর্ঘাত সব কিছুকেই রেখেছেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। কলকাতা থেকে রওনা হওয়ার আগে তিনি বলেন, “কেন আগুন লাগল, তা নিয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। দক্ষিণ-মধ্য রেলের অফিসারেরা ট্রেনে একটি বিস্ফোরণের শব্দও শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। ফলে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।”
অন্ধ্রের পুলিশকর্তারাও এই বিস্ফোরণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। তবে প্রাথমিক ভাবে সেটা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বলেই মনে করছেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, ওই কামরার এক অগ্নিদগ্ধ যাত্রীই হাসপাতালে জানিয়েছেন, আগুন লাগার পরপরই তিনি একটি বিস্ফোরণের আওয়াজ পান। |
২২ নভেম্বর, ২০১১
হাওড়া-দেরাদুন এক্সপ্রেস মৃত ৯
১ অগস্ট
২০০৮গোমতী এক্সপ্রেসমৃত ৩১
১৫ মে, ২০০৩
গোল্ডেন টেম্পল মেলমৃত ৩৬
২৬ অক্টোবর, ১৯৯৪
মুম্বই-হাওড়া মেলমৃত ২৭
১৬ এপ্রিল, ১৯৯০
পটনার কাছে শাটল্ ট্রেন, মৃত ৭০ |
|
পুলিশের একাংশের মতে, শর্ট সার্কিট থেকে কামরায় আগুন লাগার পরে সেখানে রাখা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। এই তত্ত্বকে জোরদার করছে ওই ট্রেনের যাত্রীদের বক্তব্য। তাঁরা জানিয়েছেন, রাতে মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই প্রায় সব কামরারই দরজা-জানলা বন্ধ ছিল। সুতরাং কামরার মধ্যে বেশি হাওয়া না থাকায় আগুন দ্রুত ছড়ানোর কথা নয়। কিন্তু তদন্তকারীরা জেনেছেন, আগুন ছড়িয়েছে হু হু করে। তাই ওই কামরায় গ্যাস সিলিন্ডার বা ওই ধরনের দাহ্য কোনও বস্তু থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। রেল সূত্রের বক্তব্য, গত ২২ মে মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে হাম্পি এক্সপ্রেসের একটি মহিলা কামরার আগুন লেগে যায়। সেই কামরার অর্ধেকটা জুড়ে ‘লাগেজ ভ্যান’ ছিল। সেখানে রাখা ছিল পেট্রোলভর্তি মোটরবাইক। চাকার ঘর্ষণে আগুনের ফুলকি থেকে আগুন ওই মোটারবাইকের পেট্রোলট্যাঙ্কে লেগে হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছিল। যে এলাকাটি দিয়ে ট্রেনটি যাচ্ছিল, সেটি মাওবাদী অধ্যুষিত বলে পরিচিত। এটা অন্ধ্র পুলিশের একটি সূত্রই জানিয়েছে। একই সঙ্গে তারা এ-ও জানিয়েছে, এর আগে কখনও এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনার সঙ্গে মাওবাদীদের যুক্ত থাকার প্রমাণও মেলেনি। মুকুলবাবু জানান, অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী কিরণ রেড্ডিও অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। শর্ট সার্কিটই হোক বা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়া প্রাথমিক ভাবে ঘটনার দায় রেলের উপর বর্তায়। রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, শর্ট সার্কিট হলেও তা রেলের রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির জন্যই হয়েছে। ট্রেনের কামরায় দাহ্য পদার্থ বহন করা হলেও, তার দায়ও রেলের উপরেই বর্তায়।
রেলমন্ত্রী এই দুর্ঘটনার তদন্তে রেলবোর্ডকে তদন্ত কমিটি গড়ার নির্দেশ দেন তিনি। ১৫ দিনের মধ্যে তাঁদের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু আগুনে পুড়ে মৃত্যু হলে সেখানে ফরেন্সিক তদন্ত বাধ্যতামূলক বলে জানাচ্ছেন রেলকর্তারা। আগুন কী করে লাগল, তা ওই তদন্তে স্পষ্ট। তবে ওই রিপোর্ট হাতে পেতে সময় লাগে। রেলকর্তারা জানান, দুন এক্সপ্রেস আর হাম্পি এক্সপ্রেসের ফরেন্সিক রিপোর্ট মেলেনি। এ ক্ষেত্রেও ওই রিপোর্ট না পেলে রেলের সেফটি কমিশনারের তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করাও সম্ভব হবে না। |