মেয়েদের উপরে অত্যাচার প্রতিরোধে পুলিশের তরফে উপযুক্ত নির্দেশিকা তৈরির দাবি তুলল কলকাতার সুশীল সমাজের একাংশ। সোমবার কলকাতায় তাদের আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে নারী নিগ্রহে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারা প্রয়োগ, সংশ্লিষ্ট মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে ক্রমবর্ধমান নারী নিগ্রহ রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে ‘প্রত্যাশিত দৃঢ়তা’ দেখা যাচ্ছে না বলে এ দিন অভিযোগ তুলেছে এসইউসি।
রাজ্যে মহিলাদের উপরে অত্যাচার-খুন-ধর্ষণের পরের পর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা ও স্থবিরতা’র অভিযোগ তুলে এ দিন নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করেছিল সুশীল সমাজের একাংশ। সভাশেষে মহিলাদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে একটি ‘দাবিপত্র’ প্রকাশ করা হয়। তাতে নারী নিগ্রহ ঠেকাতে পুলিশকে নির্দেশিকা বানাতে বলা হয়েছে। জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজুুর পাশাপাশি নিগৃহীতার পক্ষের সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় জোর দেওয়া হয়েছে। রাজ্যপাল, রাজ্য মহিলা কমিশন, ডিজি ও পুলিশ কমিশনারকে দাবিপত্রের প্রতিলিপি দেওয়া হবে বলে সমাবেশে জানানো হয় ।
লেখক, অভিনেতা, নাট্যকার, পরিচালক, বাচিকশিল্পী, গায়ক-গায়িকা থেকে শুরু করে জাতীয় ও রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সনও ছিলেন এ দিনের সমাবেশে। শিক্ষাবিদ সুকুমারী ভট্টাচার্য অসুস্থ থাকায় আসতে না-পারলেও লিখিত বার্তায় বলেছেন, ‘নারীর প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠুর ঘটনাতেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকে। গুন্ডা-মাস্তানের ঘৃণ্য বাহিনী তৈরি হয়েছে। নারীকে রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।” একদা রাজ্য ও জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব সামলেছেন যিনি, সেই মালিনী ভট্টাচার্যের কথায়, “আগেও মেয়েদের উপরে অত্যাচার হতো। কিন্তু ইদানীং খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে হচ্ছে। প্রশাসনের তরফেও এমন কিছু মন্তব্য করা হচ্ছে, যাতে সমাজবিরোধীরা উৎসাহিত হতে পারে।” নাট্যকর্মী উষা গঙ্গোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, “নারীর উপরে অত্যাচারের ঘটনায় তার আচরণ, পোশাককে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। এর চেয়ে মর্মান্তিক আর দুঃখজনক কী হতে পারে?” তবে এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে ‘কঠোরতার অভাব’ দেখলেও এসইউসি কিন্তু মনে করে না যে, পশ্চিমবঙ্গে শাসকদল বদলের পরে নারী নিগ্রহের ঘটনা এবং তা দমনে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা বেড়েছে। বরং তাদের দাবি, চৌত্রিশ বছরের বাম জমানাতেও ছবিটা একই রকম ছিল, যার ধারাবাহিকতা বহন করছে মমতা-প্রশাসন। বারাসতে কিশোরীর নিগ্রহে বাধা দিতে গিয়ে বাবার প্রহৃত হওয়া, জগাছায় পরিচারিকাকে ধর্ষণ, উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘিতে ছাত্রীকে ধর্ষণের ছবি তুলে এমএমএস পাঠানো এই তিনটি ঘটনার উল্লেখ করে এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু এ দিন বলেন, “অন্যান্য ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর যে দৃঢ়তা দেখা যায়, এ ক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না।” মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে এসইউসি-র নারী সংগঠন ২-৩ অক্টোবর শহরে সম্মেলন করবে। |