বিএসএনএলের বিরুদ্ধে জিত কর্মীর
মিথ্যা অভিযোগে বরখাস্তের খেসারত ৮২ লক্ষ
ড়াইটা ছিল অপবাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তির অস্তিত্বের সম্মানরক্ষার। মিথ্যা অভিযোগে এক কর্মীকে বরখাস্ত করে তাঁর সম্মানহানি করায় বিএসএনএল-কে ৮২ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
ডাক ও তার বিভাগের ওই কর্মীর নাম মানিকলাল ভৌমিক। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র জাল বলে অভিযোগ তুলে ১৯৯৯ সালে মানিকবাবুকে বরখাস্ত করেছিল ডাক ও তার বিভাগ। নিজের শংসাপত্র যে আসল, তা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেন মানিকবাবু। তিনি যে-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর শংসাপত্র আসল বলে জানিয়ে দিলেও চাকরি ফিরে পাননি ওই কর্মী। এমনকী ইন্টারপোল তদন্ত করে একই রিপোর্ট দেওয়ার পরেও ডাক ও তার বিভাগ মানিকবাবুর চাকরি ফিরিয়ে দেয়নি। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করে শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালে চাকরি ফিরে পান তিনি। বিএসএনএলে চাকরি হয় তাঁর। চাকরি ফিরে পেয়ে ২০০৬ সালে ওই কর্মী বিএসএনএলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মানহানির মামলা করেন।
সোমবার সেই মামলার নিষ্পত্তি হল। মানিকবাবু অবশ্য ২০০৮ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। প্রায় দু’যুগ ধরে যে-ভাবে মিথ্যা অপবাদে মানিকলালবাবুকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি মহারাজা সিংহ। ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর সম্মানহানির খেসারত হিসেবে বিএসএনএল-কর্তৃপক্ষকে ৮২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেন, সামাজিক ক্ষেত্রে, কর্মস্থলে, আত্মীয়স্বজনের কাছে দীর্ঘদিন ধরে মানিকবাবু যে-গ্লানির শিকার হয়েছেন, যে-অপবাদ বয়ে বেড়িয়েছেন, আদালত তা ফিরিয়ে দিতে পারবে না। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা মনে রেখে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সম্মানহানি হলে সাধারণত সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতারাই মামলা করেন। নিজের সম্মান ফিরে পেতে সাধারণ এক কর্মীর এই লড়াই নজিরবিহীন বলে জানাচ্ছেন হাইকোর্টের আইনজীবীদের অনেকেই।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, ১৯৬০ সালে মানিকবাবু তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই স্নাতক ’৭৩ সালে ডাক ও তার বিভাগে চাকরি পান। হঠাৎই এক দিন ডাক ও তার বিভাগ মানিকবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে জানায়, তাঁর জমা দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কিত শংসাপত্রগুলি জাল। বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাঠানো রিপোর্টের কথা উল্লেখ করা হয় তাতে। মানিকবাবু কেন্দ্রীয় সরকারের ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। সত্যতা জানাতে তিনি আবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাক ও তার বিভাগকে জানিয়ে দেয়, মানিকবাবুর সব শংসাপত্র আসল। কোনওটাই জাল নয়। তার পরেও সত্যতা জানতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করে ডাক ও তার বিভাগ।
মানিকবাবুর আইনজীবী কল্লোল গুহঠাকুরতা জানান, ডাক ও তার বিভাগ কিন্তু ইন্টারপোলের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করেনি। ’৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে মানিকবাবুকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে তারা। অথচ পরবর্তী কালে ইন্টারপোলও জানিয়ে দেয়, মানিকবাবুর শংসাপত্রগুলি জাল নয়, আসল। কিন্তু ডাক ও তার বিভাগ তাঁর চাকরি ফিরিয়ে দেয়নি। বিভিন্ন মহলে দরবার করে ফল না-হওয়ায় মানিকবাবু তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণনকে নিজের হেনস্থার বিবরণ লিখে জানান। কল্লোলবাবু বলেন, মানিকবাবুর শংসাপত্রগুলি জাল কি না, তদন্ত করে তা জানানোর নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি। ‘র’ সেই তদন্ত শেষ করে রাষ্ট্রপতিকে জানায়, মানিকবাবুর সব শংসাপত্রই আসল। মানিকবাবু চাকরি ফিরে পান, কাজে যোগও দেন।
এই দীর্ঘ লড়াইয়ের বছরগুলিতে তিনি সর্বত্র যে-ভাবে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হয়েছেন, তার প্রতিকার চেয়ে ২০০৬ সালে হাইকোর্টে বিএসএনএলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন মানিকবাবু। আদালতের ফয়সালার পরে তাঁর আইনজীবীর মন্তব্য, এ দিন হাইকোর্টের রায়ে মানিকবাবু তাঁর হারানো সম্মান হয়তো ফিরে পাবেন না। তবে সব সংস্থাই এ বার নিজেদের কোনও কর্মীর বিরুদ্ধে এ ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে অন্তত দু’বার ভাববে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.