চলন্ত ট্রেনে টিকিট পরীক্ষা করছিলেন দু’জন। পরনে কালো শাড়ি, সাদা ব্লাউজ। ত্রস্ত বিনা টিকিটের যাত্রীরা কেউ জরিমানা দিয়ে, কেউ বা কাকুতি-মিনতি করে হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে রেহাই পাচ্ছিলেন। কিন্তু এক নিত্যযাত্রীর মাসিক টিকিটের সময়সীমা ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে বচসার জেরেই বেরিয়ে এল আসল চিত্র। জানা গেল, ভরা অফিসটাইমে রেলকর্মীর পোশাকে ট্রেনে উঠে যাত্রীদের থেকে জরিমানা আদায়কারী ওই মহিলারা আসলে ভুয়ো টিকিট পরীক্ষক। ওই রকম কোনও মহিলা টিকিট পরীক্ষকই নেই ওই শাখায়। সকলের চোখের সামনেই চলছে প্রতারকদের এই অভিনব চক্র। অথচ, চোখে পড়ছে না রেল-কর্তৃপক্ষের। সোমবার সকালের এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে রেলের নজরদারি ব্যবস্থা নিয়েও।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?
অফিসে যাওয়ার জন্য সকাল আটটা নাগাদ দত্তপুকুর লোকালে ওঠেন বামনগাছির বৈশালীর করুণা দত্ত। বিশরপাড়া-কোদালিয়া স্টেশন থেকে ওই ট্রেনের মহিলা কামরায় উঠে টিকিট পরীক্ষা শুরু করেন মধ্যবয়সী দুই মহিলা। টিকিট না থাকলেই ট্রেন থেকে নামিয়ে গ্রেফতারের হুমকিও দেন তাঁরা। ভয়ে কেউ কেউ দরজার কাছে এসে ওই টিকিট পরীক্ষকদের হাতে টাকা গুঁজে দিচ্ছিলেন। |
দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে নামবেন বলে তখন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন করুণাদেবী। তাঁর কাছে টিকিট চাওয়া হলে করুণাদেবী নিজের মাসিক টিকিট দেখান। কিন্তু দু’দিন আগেই সেই টিকিটের মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছিল। করুণাদেবী বলেন, “ওঁদের বলি, এর মধ্যে শনি ও রবিবার থাকায় খেয়াল করিনি যে, সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। নেমেই ফের তা নবীকরণ করে নিচ্ছি।” কিন্তু তাতেও রাজি হননি ওই দুই ‘কড়া’ টিকিট পরীক্ষক।
করুণাদেবীকে প্রথমে দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে নামান তাঁরা। টিকিট কাউন্টারের সামনে বেশ কিছুক্ষণ বসিয়ে রেখে অনেক টাকা জরিমানা চাওয়া হয়। অত টাকা দিতে রাজি না হলে একটি ফিরতি ট্রেনে করে বারাসত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা তখন প্রায় ১০টা। বারাসত স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের টিকিট কাউন্টারের সামনে নিয়ে গিয়ে এ বার ৫০০ টাকা চান ওই দুই মহিলা। অত টাকা সঙ্গে নেই জানানোয় তাঁর মোবাইলটিও কেড়ে নেওয়া হয়। করুণাদেবী তখন ব্যাগ খুঁজে সর্বসাকুল্যে ২৫০ টাকা জড়ো করে তাঁদের দেন। করুণাদেবী বলেন, “রশিদ চাইলে ওঁরা ধমক দিয়ে বলেন, এখানে চুপ করে বসে থাকুন। অফিস থেকে এনে দিচ্ছি।” কিন্তু বহু ক্ষণ পেরিয়ে গেলেও তাঁদের আর দেখা মেলেনি।
পরে রেল-পুলিশের কাছে গিয়ে করুণাদেবী বুঝতে পারেন, প্রতারিত হয়েছেন তিনি। তখনই খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় তেমন কোনও মহিলা টিকিট পরীক্ষকই নেই। রেল-পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলা। বারাসত রেল-পুলিশের ওসি লোকনাথ ঘোষ বলেন, “ওই ভুয়ো মহিলা টিকিট পরীক্ষকদের খোঁজ শুরু হয়েছে।”
করুণাদেবী বলেন, “টিকিট পরীক্ষকদের মতো পোশাক। ট্রেনে উঠছে, টিকিট দেখছে, ফাইন করছে। স্টেশনে নেমে হন্তদন্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ দিকে, আমার মান্থলি দু’দিন আগে ফুরিয়ে গিয়েছে, ঘাবড়ে তো যাবই।” পূর্ব রেলের এক কর্তা এ দিন বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি। ভিজিল্যান্সকে জানানো হয়েছে। পুলিশকেও জানানো হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কী ভাবে ও কাদের সহযোগিতায় ওই মহিলারা ট্রেনে উঠে টিকিট পরীক্ষা করছিলেন।” |