আজ মঙ্গলবার ঋণনীতির পর্যালোচনা করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাই যে প্রশ্নটা এখন সকলের মুখে মুখে ফিরছে তা হল, শীর্ষ ব্যাঙ্ক কি সুদ কমানোর রাস্তায় হাঁটবে? আর এই প্রশ্নকে ঘিরেই শেয়ার বাজার ও শিল্পমহলে সৃষ্টি হয়েছে আশা-নিরাশার দোলাচল।
কিছুটা আশায় ভর করেই সোমবার সেনসেক্স এক ধাক্কায় বেড়ে যায় ৩০৫ পয়েন্ট। এবং তা ফের ঢুকে পড়ে ১৭ হাজারের ঘরে। লেনদেনের শেষে সেনসেক্স এসে দাঁড়ায় ১৭,১৪৩.৬৮ অঙ্কে। অনিশ্চয়তার জেরে পড়েছে ডলারে টাকার দাম।
বিশেষজ্ঞদের দিয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্কেরই করানো আগাম হিসাব চলতি অর্থবর্ষের জন্য আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও কাটছাঁট করে নামিয়ে এনেছে ৬.৫ শতাংশে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিজস্ব পূর্বাভাস ছিল ৭.৩%। বৃষ্টিপাতে ২১% ঘাটতি খরিফ শস্যের ফলনও কমার ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। সতর্ক করে দিয়েছে চড়া মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ে। জুনে যা দাঁড়িয়েছে ৭.২৫ শতাংশে। শিল্পমহল অবশ্য জোরালো দাবি তুলেছে সুদ কমিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির হার চাঙ্গা করার ওপর। পাশাপাশি, বৃদ্ধির হারকে টেনে তুলতে রেন্দ্রীয় সরকারকে আরও সাহসের সঙ্গে আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটার আর্জি জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যেমন, বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে প্যাকেজ, পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানো ইত্যাদি। সোমবার প্রকাশিত ‘ম্যাক্রোইকনমিক অ্যান্ড মানিটারি ডেভেলপমেন্টস’ শীর্ষক রিপোর্টেই এই দাবি তোলা হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আজ সুদ কমানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে শীর্ষ ব্যাঙ্কের ওই সমীক্ষা থেকেই ইঙ্গিত মিলেছে। লগ্নিকারীদের ধারণা আর্থিক অবস্থার হাল ফেরাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হয়ত শেষ পর্যন্ত কিছু একটা ব্যবস্থা নেবে, যা বাজারকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে। আবার সবাইকে অবাক করেই সুদ কমানোর সিদ্ধান্তও নিতে পারে তারা। সে ক্ষেত্রে রেপো ও রিভার্স রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে কমতে পারে। এই আশায় ভর করেই লগ্নিকারীদের মধ্যে অনেকে শেয়ার কিনতে নেমে পড়েন।
আশায় বুক বেঁধেছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাও। মূলত যাদের শেয়ার কেনার জেরেই সোমবার সূচকের পারা উপরের দিকে উঠেছে হু হু করে। তবে সূচক উঠেছে মূলত বড় কিছু সংস্থার শেয়ার দরের উত্থানকে ভিত্তি করেই। সার্বিক ভাবে বাজার এ দিন বাড়েনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। ইউরোপ-আমেরিকার সরকার সেখানকার ঋণ সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য বেশ কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারে বলে অঙ্গীকার করায় এ দিন সেখানকার বাজারও ছিল চাঙ্গা। মোটামুটি চাঙ্গা ছিল এশীয় বাজারও। যার প্রভাব ভারতের বাজারেও পড়েছে।
যদিও সম্ভাবনা খুবই কম, তা সত্ত্বেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি সুদ কমানোর ক্ষেত্রে সামান্য কোনও পদক্ষেপও করে, তার জেরে শেয়ার বাজারে একটা বড় দৌড় শুরু হবে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বাজার বিশেষজ্ঞ এবং বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত খান্ডেলওয়াল বলেন, “বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির যা হাল এবং তেলের দর যে ভাবে বাড়ছে, তাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে সুদ কমানোর রাস্তায় হাঁটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তবে সিআরআর কিছুটা ছেঁটে নগদের জোগান বাড়ানোর পদক্ষেপ করতে পারে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। সেটা হলেও বাজারে ভাল প্রভাব পড়বে বলে আমার ধারণা।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতোই বাজার বিশেষজ্ঞরা যা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত তা হল, বর্ষা কেমন হবে। এ পর্যন্ত দেশের বহু অঞ্চলে বর্ষা ভাল হয়নি। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ না-বাড়লে তার বিরূপ প্রভাব দেশের আর্থিক অবস্থার ওপর পড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। যার জের এসে পড়বে শেয়ার বাজারেও। তবে ভাল বর্ষা না-হওয়া ৩২০টি জেলার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা কেন্দ্র তৈরি করেছে। এই খবরেও উৎসাহিত লগ্নিকারীরা।
|