অর্থ মন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই
রাজ্যের অর্থতালুকে সাহায্য নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের
রাজ্যের উন্নয়নের প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ালো মনমোহন সিংহের সরকার।
মুম্বইয়ে বান্দ্রা কুরলা-র পর দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ‘অর্থতালুক’ (ফিনান্সিয়াল হাব) গড়ে তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে রাজারহাট-নিউটাউন এলাকায়। সেই কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। প্রকল্পটি সফল ভাবে রূপায়ণের লক্ষ্যে আগামী ২৩ অগস্ট বিজ্ঞান ভবনে বসছে সম্মেলন। নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের লক্ষ্য, এক দিকে হাব তৈরির মধ্য দিয়ে রাজ্যের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। অন্য দিকে কলকাতা শহরের উপর অতিরিক্ত চাপ কমানো।
সরকারি-বেসরকারি যে সব ব্যাঙ্ক, বিমা সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক সংস্থার অফিস রয়েছে কলকাতায়, তাদের কর্তাদের বিজ্ঞান ভবনের সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে আবেদন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায় নিজে থাকবেন সম্মেলনে। রাজ্যের তরফে থাকবেন নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব এবং হিডকোর সিএমডি দেবাশিস সেন। সৌগতবাবুর কথায়, “ভারতের বড় বড় শহরগুলিকে ভিড়মুক্ত (ডি-কনজেস্টেড) করাই মন্ত্রকের লক্ষ্য। কলকাতার উপরেও চাপ কমানোর চেষ্টা হচ্ছে। বিজ্ঞান ভবনের বৈঠকে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থার আঞ্চলিক অফিসগুলিকে কলকাতা থেকে সরিয়ে অনেক বেশি পরিবেশ বান্ধব এলাকা নিউটাউনে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তাদের অনুরোধ করা হবে।”
কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া অর্থতালুক তৈরির পরিকল্পনা কত দূর বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। বাম আমলের প্রস্তাবিত অর্থতালুকটির কাজ ক্ষমতায় এসেই বাতিল করে দেয় নতুন সরকার। সেই প্রকল্পটি যৌথ উদ্যোগে তৈরি হওয়ার কথা ছিল। গত মার্চে মমতা ঘোষণা করেন, সরকার একাই অর্থতালুক তৈরি করবে। তার পর থেকে তিন বার বিজ্ঞাপন দিয়ে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র চেয়েছে হিডকো। কিন্তু বিশেষ সাড়া মেলেনি।
প্রশাসনের একটি অংশের মতে, কোনও রাজ্যে অর্থতালুক প্রকল্প সফল করতে গেলে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন। এ রাজ্যে বাম আমলের প্রকল্পটিতে অর্থ মন্ত্রকের সেই ভূমিকা দেখা গেলেও এখন তা অনুপস্থিত। ফলে নয়া অর্থতালুকের দিকে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও অর্থ মন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তবে আপাতত নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সাহায্য নিয়ে এই প্রকল্পের পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত ২০ তারিখ কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন সচিব সুধীর কৃষ্ণকে চিঠি লেখেন দেবাশিস সেন। তাতে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘পূবে তাকাও’ নীতির পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতায় আন্তর্জাতিক মানের ‘অর্থতালুক’ তৈরির গুরুত্ব যথেষ্ট। হিডকোর মাধ্যমে এই প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। এ বিষয়ে সহায়তা করুক কেন্দ্র। গোটা প্রকল্পটি গড়ার জন্য একটি সার্বিক ‘ফ্রেম ওয়ার্ক’ গঠন করার কথাও চিঠিতে বলেছেন হিডকোর সিএমডি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে বিশেষ বৈঠক ডাকার আবেদন জানান তিনি। এ ব্যাপারে রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে সৌগতবাবুরও কথা হয়েছে।
রাজ্যের অর্থতালুককে পরিকাঠামোগত ভাবে সাহায্য করার পরিকল্পনা করেছে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। ভারতের সাতটি বড় শহরের সংশ্লিষ্ট উপনগরী গড়ার জন্য ‘আরবান ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইন স্যাটেলাইট টাউনস’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্র। একাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনায় এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় অনুদান হিসেবে ৫০০ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছিল। দ্বাদশ পরিকল্পনায় এই প্রকল্পকে জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে। মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “নতুন অর্থতালুক গঠন হলে সেখানকার জলসরবরাহ, নিকাশি ব্যবস্থা, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি গড়ে তোলার জন্য জেএনএনইউআরএম-এর মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।”
রাজারহাট-নিউটাউন ছাড়াও এই প্রকল্পের মধ্যে আনা হয়েছে সানন্দ (আমদাবাদ), ভাসাই (মুম্বই), ভিখারাবাদ (হায়দরাবাদ), শ্রীপেরামবুদুর (চেন্নাই), সোনেপথ (নয়াদিল্লি), হসকোটে (বেঙ্গালুরু) উপনগরীকে। অর্থতালুকের জন্য নিউটাউনের ‘সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট’ এলাকায় প্রাথমিক ভাবে ২৫ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। পরে জমির পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে বলে হিডকো জানিয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় একটি পৃথক তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনাও রয়েছে হিডকোর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.