দমবন্ধ করে রেডিও আর টিভির সামনে অপেক্ষা করে আছেন সবাই। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই নাসার তরফে ঘোষণা হল, অ্যাপোলো-১১ মহাকাশযানে করে চাঁদের মাটিতে পা রেখেছেন নীল আর্মস্ট্রং। প্রমাণ হিসেবে চাঁদের মাটিতে পুঁতে রেখে এসেছিলেন দেশের পতাকা। এর পর একে একে আরও পাঁচ বার চাঁদে নামেন আমেরিকার অভিযাত্রীরা। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৭ করে শেষ বারের মতো চাঁদে মানুষ নেমেছিল। প্রতি বারই একটা করে আমেরিকার পতাকা সেখানে রেখে আসা হয়েছিল। কিন্তু এত বছর ধরে পতাকাগুলো কেমন আছে তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ ছিল না বিজ্ঞানীদের মধ্যে।
অবশেষে নাসার উপগ্রহে থাকা উন্নত প্রযুক্তির দূরবীক্ষণ যন্ত্র (এলআরওসি)-র মাধ্যমে খোঁজ মিলল পতাকাগুলোর। চাঁদের মাটিতে তাদের যে ছায়া পড়েছে তা বিশ্লেষণ করে নাসার তরফে জানানো হয়েছে, ছ’টার মধ্যে পাঁচটা পতাকাই অক্ষত আছে। কিন্তু নীল আর্মস্ট্রংয়ের লাগানো পতাকাটি রকেটের আগুনে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। |
লুনার স্যাটেলাইট প্রোগ্রামের অন্যতম বিজ্ঞানী মার্ক রবিনসন বলেছেন, “আমি তো ভাবতেই পারিনি যে পতাকাগুলো এখনও অক্ষত রয়েছে!” দিন ও রাতে যথাক্রমে চাঁদের তাপমাত্রা থাকে ১২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর -১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই সঙ্গে তীব্র অতিবেগুনি রশ্মি চাঁদের উপরিতলে থাকা যে কোনও বস্তু নষ্ট করে দেয়। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা ছিল, এত রুক্ষ আবহাওয়ায় পতাকাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। রবিনসন জানিয়েছেন, এলআরওসি-র ছবি দেখে পতাকাগুলোর অস্তিত্ব জানা গেলেও সেগুলো কেমন অবস্থায় আছে তা জানা যায়নি। তবে, অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে পতাকাগুলোর কাপড় বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
নাসার এই ঘোষণায় চাঁদে আদৌ মানুষ গিয়েছিল কি না, সেই বিতর্কও সামনে চলে এসেছে। কারণ নাসার প্রকাশিত সব ছবিতে চাঁদের মাটিতে আমেরিকার পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছে। অথচ চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই। তাই পতাকাও ওড়ার কথা নয়। যদিও নাসার তরফে দাবি করে হয়েছে, বিশেষ পাতলা তারের বুনোটে এমন ভাবে ওই পতাকাগুলো তৈরি করা হয়েছিল যে, অভিযাত্রীদের তোলা ছবি দেখে মনে হচ্ছিল সেগুলো উড়ছে। তবে সত্যি সত্যিই তা উড়ছিল না। কিন্তু চাঁদের অভিকর্ষ বলের প্রভাবে এক সময়ে পতাকাগুলো ঝুলে পড়ে বলেও জানিয়েছে নাসা। তাদের দাবি, সেরকম ঝুলে পড়া পতাকার ছায়াই দেখা গিয়েছে এলআরওসিতে। |