কেন্দ্রের টাকা ব্যাঙ্কেই পড়ে, টিকাকরণে চরম গাফিলতি
শিশুদের মারণ রোগ থেকে বাঁচাতে কেন্দ্র কোটি-কোটি টাকা দিয়েছে, অথচ স্বাস্থ্য দফতর সে টাকার সদ্ব্যবহার না-করে ফেলে রেখেছে ব্যাঙ্কে। এ দিকে টিকা থেকে বঞ্চিত হয়ে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য-ঝুঁকির মধ্যে বড় হচ্ছে রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব শিশুরা।
শিশুদের ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস-বি, হুপিং কাশি, হাম, যক্ষ্মা, টিটেনাসের মতো একাধিক প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচাতে রুটিন টিকাকরণের জন্য ওই টাকা পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। এ ছাড়া কয়েক লক্ষ টাকা অগ্রিম হিসাবেও বিভিন্ন ব্লকে পাঠানো হয়েছিল। সেই টাকার ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ না-মেলায় তা খরচ হয়েছে কি না, বোঝা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য দফতরকে ভর্ৎসনা করে তাই এ বার খরচ না-হওয়া সব টাকা ফেরত চেয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের রুটিন টিকাকরণ অফিসার প্রদীপ হালদার জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে রুটিন টিকাকরণের যত টাকা পড়ে আছে, সামনের বছর তাদের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রীয় বরাদ্দ থেকে তা কেটে নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রুটিন টিকাকরণে রাজ্যের খরচ না-হওয়া টাকার পরিমান প্রায় ১২ কোটি। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলায় স্বাস্থ্য দফতরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই পড়ে ৮ কোটি টাকা। অগ্রিম হিসাবে বিভিন্ন ব্লকে পাঠানো হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। গত ১৮ জুলাই প্রত্যেক জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের জরুরি নির্দেশ পাঠিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। ব্যাঙ্কে পড়ে থাকা রুটিন টিকাকরণের টাকা ৭ দিনের মধ্যে রাজ্য স্বাস্থ্য সমিতির অ্যাকাউন্টে পাঠাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্লকগুলিকে টাকা খরচের সব হিসাব পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
রুটিন টিকাকরণের উদ্দেশ্য, ডিপথেরিয়া, পোলিও, হুপিং কাশি, টিটেনাস, হেপাটাইটিস-বি, হাম, যক্ষ্মার মতো রোগের বিরুদ্ধে শিশুর দেহে প্রতিরোধ তৈরি করা। স্বাস্থ্য দফতরই স্বীকার করছে, যে কোনও দেশের অগ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে রুটিন টিকাকরণ থাকার কথা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে উল্টোটাই হয়েছে। ডিস্ট্রিক্ট হাউজহোল্ড সমীক্ষা-৩ অনুযায়ী, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, বীরভূম, বর্ধমানের মতো অনেক জেলায় রুটিন টিকাকরণের হার সাকুল্যে ৫৪-৬৮ শতাংশ। অথচ সেই জেলাগুলির কোথাও ২০ লক্ষ, কোথাও ৭২ লক্ষ, কোথাও বা ২৫ লক্ষ টাকা খরচ না-করে ফেলে রাখা হয়েছে।
টিকার টাকা পড়ে
জেলা ব্যাঙ্কে
হুগলি
উত্তর ২৪ পরগনা
দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বর্ধমান
হাওড়া
পূর্ব মেদিনীপুর
নদিয়া

শিশু চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স’-এর সংক্রমণ রোগ শাখার চেয়ারপার্সন ঋ তব্রত কুণ্ডুর কথায়, “প্রধানত নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের ২০-৩০ শতাংশই রুটিন টিকাকরণের সব টিকা পায়নি। অথচ টিকাকরণের টাকা এসে পড়ে রয়েছে।” শিশু চিকিৎসক জয়দীপ দাসও বলেন, “প্রচুর শিশু পাচ্ছি, যারা রুটিন টিকাকরণের বুস্টার ডোজগুলো পায়নি।”
এত টাকা পেয়েও কেন খরচ করল না স্বাস্থ্য দফতর? রাজ্য পরিবার কল্যাণ অফিসার জ্যোতির্ময় চাকী বলেন, “রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে টিকাকরণের লোকই নিয়োগ করা হয়নি। তাঁদের মাইনে, যাতায়াত খরচ খাতের সব টাকাই পড়ে আছে।” তা হলে ওই প্রত্যন্ত প্রান্তের শিশুদের টিকাকরণের কী হল? টিকা কি তারা পেয়েছে? এই প্রশ্নের জবাব দেননি জ্যোতির্ময়বাবু। পাশাপাশি বেশির ভাগ জেলাই স্বীকার করেছে, টিকা দেওয়া এবং টিকার কোল্ডচেন রক্ষা করা শেখানোর প্রশিক্ষণ শিবির হয়নি বললেই চলে। তা ছাড়া, ব্যবহারের পর সব টিকার ভায়েল সংশ্লিষ্ট সাবসেন্টারের জমিতে গর্ত করে পুঁতে দেওয়ার কথা। সেই খাতেও অনেক টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।
আর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তারা কী বলছেন?
উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সুকান্ত শীল বলেছেন, “এই জেলায় ৫৫ শতাংশ এলাকা পুর এলাকায় পড়ে। পুরসভাকে রুটিন টিকাকরণের টাকা অগ্রিম দিয়েছি। কিন্তু ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট পাইনি। সেটা না পেলে বাকি টাকা ছাড়া যাচ্ছে না।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা শিখা অধিকারীর বক্তব্য, “টিকাকরণের প্রশিক্ষণ এবং নজরদারির কাজে ফাঁক রয়েছে। ওই খাতে অনেক টাকা পড়ে আছে।” হুগলির সহ-মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা (৩) প্রবীর ঘোষদস্তিদার আবার বলেন, “গত বছরের শেষে একসঙ্গে অনেক টাকা এসেছিল। সেটা আর খরচ হয়ে ওঠেনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.