সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগিণীর মৃত্যুর অভিযোগ ‘অন্য মাত্রা’ পেল সুপারের ‘ব্যবহারে’।
শনিবার সকালে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর হাসপাতালের ঘটনা। হাসপাতালের সুপার দেবাশিস রায় অভিযোগ নেননি। উল্টে নিজের চেম্বারে বসে সিগারেট টানতে টানতে তিনি দুর্ব্যবহার করেছেন অভিযোগে মৃতার আত্মীয়-পরিজনেরা দীর্ঘক্ষণ সুপারের ঘরেই বিক্ষোভ দেখান। পরে সুপারকে গ্রেফতার করার দাবিতে মহকুমাশাসকের (বিষ্ণুপুর) কাছে এবং বিষ্ণুপুর থানায় লিখিত অভিযোগও জানান তাঁরা।
বিষ্ণুপুরের বনমালিপুর গ্রামের বধূ জ্যোৎস্না রায়ের (৩৬) হাতে এ দিন ভোরে বিষধর কিছু কামড়ায়। বধূটিকে ভর্তি করানো হয় বিষ্ণুপুর হাসপাতালে। তাঁর স্বামী দিলীপ রায়ের অভিযোগ, “কোনও পরীক্ষা না করেই আমার স্ত্রী-কে সাপে কাটার প্রতিষেধক (অ্যান্টি-ভেনম) দেওয়া হয়। কিছু ক্ষণ পরেই উনি মারা যান।” চিকিৎসায় এই ‘গাফিলতির’ অভিযোগ জানাতে গেলে হাসপাতাল সুপার তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ দিলীপবাবুর। তাঁর ক্ষোভ, “সুপার নিজের চেম্বারে সিগারেট টানছিলেন। উনি রুক্ষ ভাবে বলেন, আমাদের অভিযোগ নেবেন না। চেম্বার থেকে বেরিয়ে যেতেও বলেন।” ব্যাপারটা জানাজানি হতেই দিলীপবাবুর আত্মীয়-পড়শিরা সুপারের চেম্বারে জ্যোৎস্নাদেবীর দেহটি নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। |
বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিজের চেম্বারে সুপার দেবাশিস রায়। ছবি: শুভ্র মিত্র
|
চিকিৎসায় গাফিলতি বা দুর্ব্যবহারের অভিযোগ কি সত্য? সুপার দেবাশিস রায় জবাব দেননি। সরকারি হাসপাতালে এ ভাবে ধূমপান করা কি উচিত? সুপারের জবাব, “আমি হাসপাতালে সিগারেট খেলে আপনাদের কী? বেরিয়ে যান।” শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
মহকুমাশাসক অদীপ রায় বলেন, “হাসপাতালে সিগারেট খাওয়া বেআইনি। রোগীর পরিবারের অভিযোগপত্র জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে পাঠিয়ে দেব।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ দিন্দা বলেন, “হাসপাতালে ধূমপান নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব খোদ সুপারের। তিনি নিজেই তা লঙ্ঘন করলে, ভুল করেছেন। আর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ পেলে, খতিয়ে দেখা হবে।”
রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বনাথ শতপথী বলেন, “এ সব সত্যি হয়ে থাকলে, যথেষ্ট উদ্বেগজনক। মৃতার আত্মীয়েরা আমাদের কাছে অভিযোগ জানালে তদন্ত করা হবে।” মৃতার পরিবারের করা অভিযোগের তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশও। তবে বিষ্ণুপুর হাসপাতালের সুপার এ দিন বিকেলেও দাবি করেন, “হাসপাতালে নিজের চেম্বারে সিগারেট খেয়ে অন্যায় কিছু করিনি। রোগিণীর পরিবার তো অভিযোগ-গ্রহণ বাক্সেও অভিযোগপত্র দিতে পারতেন!” |