বন্ধ হতে পারে পালস
পোলিওর কেন্দ্রীয় বরাদ্দ

পালস পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচিতে কেন্দ্রের দেওয়া টাকার বিপুল অংশই খরচ করতে পারেনি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কেন টাকা খরচ করা গেল না, তার কোনও নির্দিষ্ট ব্যাখ্যাও কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে পারেননি স্বাস্থ্যকর্তারা। আর এরই জেরে এই খাতে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। পরিস্থিতি এমনই যে, সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন রাজ্যে পোলিওর যে কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, সেখানেও পশ্চিমবঙ্গের অংশগ্রহণ এই মুহূর্তে অনিশ্চিত।
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুন মাস পর্যন্ত এ রাজ্যে পালস পোলিও কর্মসূচিতে খরচ না হওয়া অর্থের পরিমাণ ১১ কোটি ৮২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৬৩৮ টাকা।
কেন খরচ করা গেল না ওই বরাদ্দ অর্থ? রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, এ হল অনেকটাই ‘আত্মপ্রসাদের মাসুল’। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতকে পোলিও-প্রবণ দেশের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ১২ মাসে আর কোনও নতুন পোলিও সংক্রমণের খবর না মেলায় সরকারি প্রচেষ্টার প্রশংসা করে ‘বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এর তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন-পত্রও পাঠানো হয়েছিল। এত প্রশংসার জেরে অতিরিক্ত আত্মপ্রসাদ, আর তা থেকে কাজে ভাটা পড়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। অবিলম্বে খরচ না হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য সমস্ত জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নির্দেশ পাঠিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
রাজ্যের টিকাকরণ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, খরচ না হওয়ার সমস্যা তো রয়েছেই, তার পাশাপাশি খরচ করে তার সার্টিফিকেট না দেওয়াটাও একটা বড় সমস্যা। বিভিন্ন জেলা টাকা খরচের হিসেব দেয় না। তাই রাজ্যও কেন্দ্রের কাছে তা পাঠাতে পারে না। কী ভাবে এর সমাধান সম্ভব, তা নিয়ে ভাবনা চলছে।
কেন দেওয়া হয় না খরচের হিসেব? জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের যুক্তি, জেলায় একের পর এক প্রকল্প চলে। এক খাতে টাকা খরচ হতে না হতেই অন্য খাতে খরচের সময় চলে আসে। সেই সব কাজ শেষ করতে সময় লাগে বলেই দেরি হয়। বহু জায়গায় কম্পিউটার না করায় হিসেব রাখতে সমস্যা হয়। পাশাপাশি, কর্মীদের একাংশের গয়ংগচ্ছ মনোভাবও যে দায়ী, সে কথাও মেনে নিয়েছেন তাঁরা।

পড়ে থাকা অর্থের খতিয়ান
জেলা খরচ হয়নি (টাকা)
বর্ধমান
উত্তর ২৪ পরগনা
দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কলকাতা
পূর্ব মেদিনীপুর
পশ্চিম মেদিনীপুর

২০১১ সালে সারা দেশে এক জন মাত্র পোলিও রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার পাঁচলায়। সেই ঘটনা অস্বস্তিতে ফেলেছিল গোটা রাজ্যকেই। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ওই সময়ে কাজে খানিকটা গতিও আসে। কিন্তু ২০১২-র সাফল্যের পরে সেই গতি অনেকটাই থমকে গিয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, খরচের হিসেব না দেওয়ার অভ্যাস পশ্চিমবঙ্গের বহু কালের। বার বার সতর্ক করেও লাভ হয়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে খরচের হিসেব আমাদের কাছে আসার কথা। কিন্তু কিছুই আসে না। গত মার্চ মাসে শুধু সাব ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন দিবসের জন্য পাঁচ কোটি ২৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল, তার কোনও হিসেব আসেনি। সাধারণ কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ টাকার হিসেবও ওরা পাঠায় না। সুতরাং ধরে নেওয়া হচ্ছে, ওরা টাকা খরচ করে উঠতে পারছে না।”
পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচি নিয়ে এ রাজ্যে সমস্যা চলছে বেশ কয়েক মাস ধরেই। এর আগে টানা তিন মাস রুটিন টিকাকরণের জন্য পোলিও টিকার সরবরাহ ছিল না। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, বিভিন্ন সরকারি কেন্দ্রে পোলিও টিকা নিতে গিয়ে ওই সময়ে অন্তত ১০ হাজার শিশু ফিরে গিয়েছে। অর্থাৎ রুটিন পোলিও টিকাকরণের আওতায় যত শিশুর আসার কথা ছিল, তা আসেনি। এই নিয়ে আশঙ্কা একটা তৈরি হচ্ছিলই। তার মধ্যে কেন্দ্রের এই বার্তা পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের বড় অংশ। এমনকী ২০১৩ সালে এ রাজ্যই ফের দেশের নাম ডোবাবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কিত তাঁরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.