গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে অসম থেকে চলে আসা শরণার্থীরা যত দিন প্রয়োজন রাজ্য সরকারের আশ্রয়ে থাকতে পারেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অসমের কোকড়াঝাড়-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে গত কয়েক দিনে প্রচুর মানুষ জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন। শনিবার বর্ধমানে মুখমন্ত্রী বলেন, “ওঁরা আমাদের ভাই-বোন। ওঁদের সমস্ত দায়িত্ব সরকারের। যদি ওঁরা এখনই না ফিরতে চান, যত দিন থাকবেন, আমরা পূর্ণ আশ্রয় দেব।” সেই সঙ্গেই তাঁর হুঁশিয়ারি, “আমরা কোনও দিন দাঙ্গা সমর্থন করিনি। কেউ যদি দাঙ্গা লাগাতে সুড়সুড়ি দেয় তা হলে সে যেই হোক না কেন, যত বড় রাজনীতিক বা প্রশাসনের লোক হোক বা অন্য জগতের মানুষ, তাকে ছেড়ে দেব না।”
সিপিএম গোলমালে উস্কানি দিচ্ছে বলে শুক্রবারই অভিযোগ করেছিলেন মমতা। যদিও বামফ্রন্ট সঙ্গে-সঙ্গে তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ করে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “অসম থেকে যাঁরা এই রাজ্যে আসছেন, তাঁরা আমাদের অতিথি। ভাইবোন। বাড়িতে অতিথি এলে কি কেউ বড় গলা করে বলে? তাই এই ব্যাপারে কিছু বলিনি এত দিন। কিন্তু দেখলাম, এই ঘটনা নিয়ে কেউ-কেউ নোংরা রাজনীতি করছেন। আমি এটার নিন্দা করছি। আমি চাই, অসমে শান্তি ফিরে আসুক।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, শরণার্থীদের মধ্যে থেকে প্রসূতি ও আহতদের হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর কথায়, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে আমি জলপাইগুড়ি পাঠিয়েছিলাম। উনি ওখানে শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় ক্যাম্প ঘুরে দেখেছেন। সেখানে দু’জন গর্ভবতী মহিলা ছিলেন। আমি বলেছি, ওঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কয়েক জনের গায়ে গুলি লেগেছে। তাঁদেরও চিকিৎসা চলছে।” এখন রমজান মাস চলছে তা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “সংখ্যালঘু ভাইবোনেদের রোজা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সকলের চিকিৎসা, খাওয়া-দাওয়ার সমস্ত খরচ রাজ্য সরকারই বহন করবে।” মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের বেশ কয়েক জন মন্ত্রী। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের রূপায়ণের ব্যাপারে তাঁদের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আশ্বাস, বর্ধমানে ১৬ কোটি টাকা
ব্যয়ে মেডিক্যাল হাব ছাড়াও ডেন্টাল কলেজ ও নার্সিং ট্রেনিং কলেজ গড়া হবে। তৈরি হবে কালনা-কাটোয়া রোড ওভারব্রিজ। চুরুলিয়ায় নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় হবে।
এ দিন বর্ধমান থেকেই রিমোটে আসানসোল থেকে চেন্নাই যাওয়ার সেন্ট্রাল উইকলি এক্সপ্রেস-এর সূচনা করেন মমতা। ছিলেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ও। প্রতি বুধবার বিকেল ৪টেয় ওই ট্রেন ছাড়বে, ফিরবে শনিবার রাতে। বর্ধমান থেকে বলগনা পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইনে ট্রেন চলাচলেরও এ দিন সূচনা হয়। কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা মাথায় রেখে কাটোয়া পর্যন্ত তা বাড়ানোর কথা। রেলমন্ত্রী বলেন, “জমি হস্তান্তরে দেরির কারণে বলগনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত লাইন ব্রডগেজ করার কাজ কাজ আটকে রয়েছে। তা খুব দ্রুত শুরু হয়ে যাবে।” আপাতত বর্ধমান থেকে বলগনা পর্যন্ত প্রতি দিন চার জোড়া করে ট্রেন চলবে। |