মাওবাদীদের ‘শহিদ সপ্তাহ’ পালন কর্মসূচির প্রথম দিন, শনিবার বিনপুরের কুশবনির জঙ্গল এলাকা থেকে উদ্ধার হল একটি ডিরেকশনাল মাইন। গোলাপি পলিথিনে মোড়া অবস্থায় মাইনটি রাখা ছিল দহিজুড়ি-পড়িহাটি পিচরাস্তায়। আশেপাশে ছড়ানো ছিল লালকালিতে হাতে লেখা কিছু পোস্টার। সিপিআই (মাওবাদী)-র নামে ওই সব পোস্টারে ‘শহিদ সপ্তাহ’ পালনের ডাক দেওয়ার পাশাপাশি সারের কালোবাজারি এবং পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিরও প্রতিবাদ করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে এলাকাটি ঘিরে ফেলে। মেদিনীপুর থেকে সিআইডি-র বম্ব-স্কোয়াড এসে মাইনটি নিষ্ক্রিয় করে।
পুলিশের অনুমান, নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতেই পোস্টার-সমেত মাইনটি রেখেছিল মাওবাদীরা। সম্ভবত, নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল না। কারণ, মাইনটিতে তারের সংযোগ ছিল না। এ দিন শালবনির ভীমশোলের জঙ্গল এবং লালগড় লাগোয়া কন্যাবলির জঙ্গল থেকেও মোট ৫টি ডিরেকশনাল মাইন উদ্ধার হয়। তা অনেক দিন ধরেই মাটিতে পোঁতা ছিল বলে পুলিশের বক্তব্য। গত কয়েকদিনে বেলপাহাড়ি, লালগড়, বিনপুর, গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রামের আরও কয়েকটি এলাকাতেও ‘মাওবাদী’ পোস্টার চোখে পড়েছে বাসিন্দাদের। গত মাসেও বিনপুরের দহিজুড়ি থেকে মাওবাদী পোস্টার-ব্যানার উদ্ধার হয়েছিল। সেগুলিতে আবার শাসক তৃণমূল নেতাদের রীতিমতো হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে পুলিশ-প্রশাসন কিছুটা চিন্তিত। গোয়েন্দা সূত্রেও জঙ্গলমহলে ফের মাওবাদী সক্রিয়তা বাড়ার ব্যাপারে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে মাওবাদীরা ফের অশান্তি বাধাতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে শাসক তৃণমূলের অন্দরেও। |
যে কারণে গত মাসে জঙ্গলমহল থেকে মাত্র এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী সরানোর কথা উঠতেই পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আপত্তি জানিয়ে এসেছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। জঙ্গলমহলের তিন জেলা--পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের নিরাপত্তাও আগের থেকে জোরদার করা হয়েছে।
এরই মধ্যে আগামী ৭ ও ৮ অগস্ট ফের জঙ্গলমহলে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৮ অগস্ট বেলপাহাড়িতে তাঁর সভা করারও কথা। এই অবস্থায় তল্লাশি-নজরদারি জোরদার করেছে যৌথ বাহিনী। খড়্গপুর-টাটানগর শাখায় রাতে ট্রেন চলাচলের সময়েও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গিধনি, ঝাড়গ্রাম, সর্ডিহা, গোদাপিয়াশাল, শালবনি ও পিয়ারডোবা স্টেশনে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরাও বসানো হচ্ছে বলে রেল ও প্রশাসনিক সূত্রের খবর। অথচ, গত মে মাসে রাজ্য সরকারের বর্ষপূর্তিতে প্রকাশিত ‘প্রত্যাশা থেকে প্রাপ্তি’ পুস্তকে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র দফতরের ‘সাফল্যের খতিয়ান’ অংশে ‘সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি’ হিসাবে ‘জঙ্গলমহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তনে’র দাবি করা হয়েছিল। ‘মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফেরানো’র কৃতিত্বও দাবি করা হয়েছিল ওই প্রতিবেদনে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বহু জনসভায় জঙ্গলমহলে ‘শান্তি ফিরেছে’ বলেই দাবি করে থাকেন। কিন্তু পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, কিষেণজি-র মৃত্যু, বহু নেতা-কর্মীর ধরা-পড়া বা সুচিত্রা মাহাতো, জাগরী বাস্কে, রাজারাম সোরেনদের মতো নেতা-নেত্রীর আত্মসমর্পণের ‘ধাক্কা’ সামলে জঙ্গলমহলে নতুন করে সংগঠন গড়ার চেষ্টা শুরু করেছে মাওবাদীরা। ‘শহিদ সপ্তাহ’ পালনের ডাক দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মাওবাদীদের পোস্টার ও ব্যানার দেওয়াও সেই নতুন ‘সক্রিয়তা’র ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। |