নির্বাচন জিতে ওঠার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নিজের ঘরে বসে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন জগমোহন ডালমিয়া। তখনও ইন্টারভিউয়ের মধ্যে বারবার দাঁড়ি-কমা পড়ার মতো তাঁর ভোটাররা এসে অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছেন। বলছেন সিএবি-তে আপনি সেই অপরাজিতই থাকলেন।
প্রশ্ন: চারপাশে এত অসন্তোষ। ক্ষোভ। আর প্রশ্ন। ফের নির্বাচিত হয়ে বলতে ইচ্ছে করছে না, এটাই সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার শেষ বছর?
ডালমিয়া: এক ঘণ্টাও হয়নি জিতে উঠলাম। এই প্রশ্নটা কি এখন করার সময় (হাসি)?
প্র: এ জন্য বলছি যে আপনার আমলে এই প্রথম ডালমিয়া-অনুগামীরা তাঁর নির্বাচনী সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে ফেটে পড়েছিলেন। আপনার দলের স্পিরিট নিয়ে প্রকাশ্য প্রশ্ন উঠছিল।
ডালমিয়া: হুঁ।
প্র: এমনও শোনা যাচ্ছে আপনার এত বছরের গুরু বিশ্বনাথ দত্ত এই প্রথম নিজে ফোন করে বিভিন্ন ভোটারকে বলেছেন, জগু যখন আমার পরামর্শ শোনেনি, ওর বিরুদ্ধে ভোট দাও।
প্লিজ বলবেন না কথাটা আপনার কানে যায়নি।
ডালমিয়া: হুঁ। শুনেছি। আমায় বলেছে। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়নি। যদি সত্যিই বিশুদা নিজে বা কাউকে দিয়ে ফোন করিয়ে থাকেন, খুব দুর্ভাগ্যজনক।
প্র: সে জন্যই বলছি যে সম্মান নিয়ে এই টার্মের পর সরে যাওয়াই কি ঠিক কাজ নয়?
ডালমিয়া: একটা সময় সত্যিই মনে হচ্ছিল যে আমার নিজের গোষ্ঠীতেই হয়তো ভাঙচুর হয়ে গিয়েছে। ভীষণ শক পেয়েছিলাম। ভোটের ফল বেরনোর পর অবশ্য আশ্বস্ত হচ্ছি যে এক সংসারের ভেতরকার মনোমালিন্যই ছিল। যেই বাড়ির সম্মানের প্রশ্ন এল, সবাই এককাট্টা হয়ে গেল। নইলে ১০৪ ভোট হয় না। |
প্র: সমর পাল হঠাৎ করে দাঁড়ানোর কোনও ব্যাখ্যা পাচ্ছেন? নিশ্চয়ই উনিও ভেবেছিলেন জিতবেন।
ডালমিয়া: এই মানুষটার মনে হয় নির্বাচনে দাঁড়ানোই শখ। মানুষের শখ থাকে না? পাখি পোষা, কুকুর পোষা। নইলে বছরে তিন-চার দিন দেখা যায় কি না সন্দেহ। অথচ ইলেকশনে ঠিক ফেরত চলে আসে।
প্র: আলিপুরের মরসুমী পাখি!
ডালমিয়া: হ্যাঁ, মরসুমী পাখি। হাতের কাছে যে পোস্ট পেল, ইলেকশন সিজনে হাজির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। সমরকে আমি একটাই পরামর্শ দিতে চাই। এই অ্যাসোসিয়েশনের মান-সম্মানটাকে ডুবিয়ে দিও না। ব্যাপারটাকে তুমি বার্ষিক তামাশার পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছ।
প্র: শুধু সমরই তো আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। শোনা যাচ্ছে রাজ্য সরকারও আপনার পরিচালিত সিএবি-র কাজেকর্মে অখুশি। মুখ্যমন্ত্রী আইপিএলের সময় এসে দেখেছেন মাঠে কয়েক ফুট জল জমে রয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থা কাজ করছে না। শোনা যাচ্ছে তাঁর ঘনিষ্ঠরা চান দ্রুত সিএবি প্রশাসনের দখল নিতে। এটাও নিশ্চয়ই শুনেছেন?
ডালমিয়া: অন্তত আমার কোনও ধারণা নেই। সরকার থেকে যখনই আমাদের ক্রিকেট সংক্রান্ত কিছু ব্যাপারে বলা হয়েছে, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় আমাকে সমর্থন করেছেন। আজও ভুলতে পারি না পুরনো সরকারি প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে (প্রাক্তন নগরপাল প্রসূন মুখোপাধ্যায়) জীবনের কঠিনতম লড়াই জিতে উঠে একটা ইম্পর্ট্যান্ট ফোন পেয়েছিলাম। জিতে উঠে প্রথম পাওয়া সেই ফোনটাই ছিল আজকের মুখ্যমন্ত্রীর। সেই গলাটা এত আশ্বস্ত করেছিল যে, ওটা সরে গেছে বিশ্বাস করতে চাই না।
প্র: জিতে উঠে বাংলা ক্রিকেটের জন্য কর্মসূচি কী?
ডালমিয়া: বাংলা টিমটা এখন ভাল খেলছে। সৌরভ অবসর নেওয়ার পর আমাদের একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টিমটা না ধসে যায়। সেটা সামলানো গেছে। এখন নানা প্রোগ্রাম এনে এজ-গ্রুপ ক্রিকেটকে একটা চমকপ্রদ মানে নিয়ে যেতে হবে। আপনারা টি-টোয়েন্টিতে বলেন না পাওয়ার প্লে! আমাদের সরাসরি পাওয়ার প্লে-তে চলে যেতে হবে।
প্র: অনেকেই চান সৌরভ ক্রিকেট প্রশাসনে আসুন। কিন্তু সরকার নাকি সেটা চায় না।
ডালমিয়া: ক্রিকেটের প্রশ্ন যেখানে জড়িয়ে, সেখানে সৌরভ আমাদের সঙ্গে দারুণ ভাবে আছে। আজ তো ভোট দিতেও এসেছিল। মিটিংয়ে নানান প্রস্তাব দেয়। খেলার সঙ্গে অন্য কোনও ব্যাপারের কোনও সম্পর্ক নেই। |