প্রেমদাসার ‘মিথ’ ভেঙে জেতালেন গম্ভীর-রায়না
বিশ্বকাপ ফাইনালে গম্ভীর যখন ৯৭ রানে বোল্ড হয়ে ফিরছেন, উল্টো দিকে দাঁড়ানো ধোনির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গম্ভীরের অধিনায়ক তাঁকে ফিসফিস করে বলেছিলেন, ‘হার্ড লাক!’
মাঝে নয় নয় করে দেড়টা বছর। এর মধ্যে গম্ভীরের সহ-অধিনায়কত্ব খোয়ানো আছে, ফর্ম হারানো ও ফিরে পাওয়া আছে, চেন্নাইয়ে ধোনির ডেরায় গিয়ে আইপিএল ফাইনাল জিতে নেওয়া আছে। নাইট রাইডার্স অধিনায়কের পালকে নবতম সংযোজন হতে পারত প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে ম্যাচ জিতিয়ে ফেরা। সেই রাস্তায় ডাইরেক্ট থ্রো কাঁটা হলেও ভারতের ২-১ এগিয়ে যাওয়ার পিছনে থেকে গেলেন গম্ভীরই। ১০১ বলে ১০২ করে ম্যাচ জিতিয়ে না ফিরলেও প্রেমদাসার ‘মিথ’ ভেঙে দেওয়ার ভিতটা তাঁর ব্যাটেই তৈরি হয়েছিল আর তাতে ‘ফিনিশার’ হিসেবে রঙচঙ দিয়ে ম্যাচ বের করে নিয়ে গেলেন সুরেশ রায়না (৪৫ বলে ৬৫ নট আউট)।
প্রেমদাসার রান করে জেতার সর্বকালীন রেকর্ড ছিল ২৭১। তার চেয়েও মারাত্মক তথ্য, দেশের মাঠে আগে ব্যাট করে ২৫০-এর বেশি তুলে শ্রীলঙ্কা গত ২৮টা ওয়ান ডে ম্যাচে হারেনি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হারলে ধোনির গোঁয়ার্তুমিকেই খলনায়ক হিসেবে শীর্ষবাছাই ধরতে হত, বলতে হত, মালিঙ্গার ইয়র্কারে রোহিত শর্মার ফের শূন্য করাটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। হল না, কারণ শেষমেষ ধোনিকে বৈতরণী পার করে দিল রায়না-ইরফান জুটি। শ্রীলঙ্কার মাটিতে রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডও হয়ে গেল।
সেঞ্চুরির পরে গম্ভীর। শনিবার। ছবি: এএফপি
এর পরেও অবশ্য ধোনির কিছু এসে যাবে না। পরের ম্যাচেও হয়তো সেই রোহিত শর্মাই খেলবেন আর ড্রেসিংরুমে বসে নখ খুঁটতে হবে মনোজ তিওয়ারিকে। দিনের শেষে এটাই তো ভারতীয় ক্রিকেট!
রোহিতকে আড়াল করতেই কি আজ নিজেকে চার নম্বরে তুলে এনেছিলেন ধোনি? তাতেও কি লাভ হল? রোহিতের অবদান সেই গোল্লা! এই সিরিজে তিন ইনিংসে রান ৫, ০ এবং ০। ধোনির নিজের ব্যাটিংয়েও পরিচিত ঔদ্ধত্য নেই, মালিঙ্গার ইয়র্কার জায়গায় পড়তেই ফিরতে হল। আর তার পরের বলে রোহিতের আউটেই খেলা ঘুরল। অথচ তার আগে ম্যাচ ছিল একপেশে, ভারতের দিকে ঝুঁকে।
প্রেমদাসায় ক্রিকেট মানে বরাবরই টানা ড্রাম বেজে যাওয়া, তার সঙ্গে উদ্দাম নৃত্য, পার্সি অভয়শেখরার শ্রীলঙ্কার পতাকা নাড়িয়ে যাওয়া। এ সবের সঙ্গে গত বিশ্বকাপ থেকে দেখছি, যোগ হয়েছে শ্রীলঙ্কান ভুভুজেলা। কানে তালা ধরানো ভেঁপু। কিন্তু ভেঁপু বাজতে হলেও তো ম্যাচে সামান্যতম উত্তেজনা লাগে। গম্ভীর আর ধোনির ব্যাটিংয়ের সময় রাত সোয়া ন’টাতেই যখন মাঠ ফাঁকা হতে শুরু করল, ধরেই নেওয়া হচ্ছিল আশা ছেড়ে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কানরা। এমনিতেই মন্দার বাজারে দেশটা ধুঁকছে, ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ আশা ট্যুরিজম আর সেপ্টেম্বরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই সিরিজে জয় মানে বিশ্বকাপের আগে দেশকে স্বপ্ন দেখানো। এ বার স্বপ্ন অধরা থাকার সম্ভাবনা, কারণ একটা মালিঙ্গাকে দিয়ে এই ভারতকে আটকানো কঠিন।
শ্রীলঙ্কা যে ২০-৩ হয়েও ২৮৬ তুলেছিল, তার পিছনেও কিন্তু ধোনি। ‘ডেথ ওভারস’-এ বোলারদের কী ভাবে ব্যবহার করবেন, তা নিয়ে ভারত অধিনায়কের ‘মগজধোলাই’ প্রয়োজন। সিরিজে প্রথম খেলতে নামা দিন্দাকে কেন দেওয়া হবে ৫০ তম ওভার? আগে ওভারগুলো করিয়ে দেওয়ায় ‘ডেথ ওভারস’-এ সে ভাবে বলই দেওয়া গেল না জাহিরকে। ছয় নম্বর ওভারে ২০-৩, প্রেমদাসার উইকেটে বল দু’দিকে সুইং করাচ্ছিলেন জাহির ও ইরফান। কিন্তু শুরুর কয়েকটা ওভার পার করতে না করতে খেলা ধরেছিলেন সঙ্গকারা ও জয়বর্ধনে। রাহুল শর্মার যে বলটায় জয়বর্ধনেকে এলবিডব্লিউ দেওয়া হল, সেটা না দিলেও কিছু বলার ছিল না। ১৮০-৫ হওয়ার পরে শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার ২৮৬-তে পৌঁছনোর পিছনে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ আর জীবন মেন্ডিস। রাহুল শর্মা কেন খেললেন, তার পিছনে টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাখ্যা খুব পরিষ্কার। বোর্ড থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি আর প্রজ্ঞান ওঝার চোট থাকায় রাহুলকে না খেলিয়ে উপায়ও ছিল না। দিন্দা শুরুটা খারাপ করেননি, সঙ্গকারার দামি উইকেট এসেছে, কিন্তু একটা ওভারে চারটে বল ভাল করে হঠাৎ একটা করে লুজ বল ফেলার খেসারত প্রায়ই দিতে হয়েছে। টিমে নিয়মিত থাকতে হলে ‘ডেথ’-এ বল করার আর্টটাও দিন্দার রপ্ত করা দরকার। নয়তো বিনয় কুমার ফিরলেই প্রথম এগারো থেকে সরতে হবে।
শেষে আবার বিশ্বকাপ ফাইনাল। ওয়াংখেড়েতে ছয় মেরে ম্যাচ জিতিয়ে উঠে ব্যাট নাচিয়েছিলেন ধোনি। গম্ভীর আউট হওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘হার্ড লাক’। বছর ঘুরেছে, বদলেছে সময়। কে না জানে, ‘চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়!’

কলম্বো ম্যাচের স্কোর
শ্রীলঙ্কা:
থরঙ্গা ক ধোনি বো জাহির ৮
দিলশান বো জাহির ৪
সঙ্গকারা ক কোহলি বো দিন্দা ৭৩
চণ্ডীমল এলবিডব্লিউ ইরফান ০
জয়বর্ধনে এলবিডব্লিউ রাহুল ৬৫
ম্যাথেউজ ন:আ: ৭১
মেন্ডিস ন:আ: ৪৫
অতিরিক্ত ২০
মোট ৫০ ওভারে ২৮৬-৫।
পতন: ৯, ১৯, ২০, ১৪১, ১৮২।
বোলিং: জাহির ১০-০-৩৯-২, ইরফান ১০-০-৫৯-১, দিন্দা ১০-০-৭৬-১,
রাহুল ৮-০-৪৫-১, অশ্বিন ১০-০-৫০-০, সহবাগ ১-০-৩-০, রোহিত ১-০-৪-০।

ভারত
গম্ভীর রান আউট ১০২
সহবাগ ক সেনানায়কে বো পেরিরা ৩
কোহলি ক ও বো হেরাথ ৩৮
ধোনি বো মালিঙ্গা ৩১
রোহিত এলবিডব্লিউ মালিঙ্গা ০
রায়না ন.আ. ৬৫
ইরফান ন:আ: ৩৪
অতিরিক্ত ১৫
মোট ৪৯.৪ ওভারে ২৮৮-৫।
পতন: ৮, ১১৩, ১৮০, ১৮০, ১৯৬।
বোলিং: মালিঙ্গা ১০-০-৬০-২, পেরিরা ৯-০-৫৭-১, উদানা ৬-০-৪২-০,
ম্যাথেউজ ৮.৪-০-৪৯-০, হেরথ ৯-০-৩৬-১, দিলশান ৩-০-১৪-০, মেন্ডিস ৪-০-১৯-০।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.