অসমের সংঘর্ষ বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের পুনর্বাসন ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পুনর্গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ৩০০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করলেন। পাশাপাশি, দুই গোষ্ঠীর মানুষের দু’টি শরণার্থী শিবির ঘুরে প্রধানমন্ত্রী একটি বার্তা দিয়েছেন, “যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখের। আপনাদের অবস্থা বুঝতে নিজেই এখানে এসেছি। ভয় পাবেন না, নিজেদের একাও ভাববেন না। আমরা সবাই আপনাদের সঙ্গে রয়েছি। আমরা সবাই ভারতবাসী। একে অন্যের প্রতি হিংসার আশ্রয় নেবেন না।” তাঁর বক্তব্য, দুর্যোগের মেঘ ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, অসমের এই সংঘর্ষ নিয়ে তদন্ত হবে। |
কোকরাঝাড়ের শরণার্থী শিবিরে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
আশ্রয়হীন মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে অভিযোগ, পাল্টা-অভিযোগ জানান। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কথা শোনেন। রাজনৈতিক স্তরেও মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের নিস্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হলে প্রধানমন্ত্রী সার্বিকভাবে জানান, এখন অভিযোগের সময় নয়। সকলে মিলিত ভাবে পরিস্থিতিকে আগে দ্রুত স্বাভাবিক করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আজ কোকরাঝাড় কমার্স কলেজ ও ভুতগাঁও-কাশীপাড়া ত্রাণ শিবির সফর করেন। সংঘর্ষ-বিপর্যস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর সার্কিট হাউসে রাজ্যপাল জে বি পট্টনায়ক, মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, চারটি জেলার জেলাশাসক, পুলিশ, আধাসেনা, সেনাকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সংঘর্ষকবলিত এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি জেনে নেন। মনমোহন সিংহ ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে, সংঘর্ষ-কবলিত এলাকা পুনর্গঠনের জন্য ১০০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ ও ঘরহারাদের গৃহনির্মাণের জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনায় ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথাও তিনি ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নিহতদের নিকটাত্মীয়দের ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য, গুরুতর জখমদের ৫০ হাজার, অল্প জখমদের জন্য ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া, যাঁদের ঘর পুরো ভেঙেছে তাঁদের জন্য ৩০ হাজার ও যাঁদের আংশিক ক্ষতি হয়েছে তাঁদের ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
গত কাল আধাসেনা ও সেনা আসতে দেরি হওয়ার দায় কেন্দ্রের উপরে চাপিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রথম দিকে পরিস্থিতি সামলাতে কিছু সমস্যা হয়েছিল বটে। কিন্তু এখন সব নিয়ন্ত্রণে। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কোনও মতানৈক্য নেই। উভয়ে মিলেমিশে কাজ করা হচ্ছে। সংঘর্ষ-কবলিত সব ক’টি এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনী পাঠানো হয়েছে।” সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী তৃতীয় শক্তি জড়িত থাকার কথা বলেছেন। বড়োল্যান্ড প্রধান হাগ্রামা প্রথমে বলেছিলেন, এনডিএফবি জঙ্গিরা ঝামেলা বাধাচ্ছে। পরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের জন্যই সংঘর্ষ। এআইইউডিএফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমল সংঘর্ষের পিছনে সরকারি ব্যর্থতা ও বড়ো জঙ্গিদের দায়ী করেন। তাঁর নেতৃত্বে এআইইউডিএফ প্রতিনিধিদল আজ প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রীকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করে হলে তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত জটিল বিষয়। আমি অবশ্যই এই ঘটনার তদন্ত করব। দোষীরা শাস্তিও পাবে। তবে এখন অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের সময় নয়। মানুষকে আগে বাঁচাতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, তারপর সমস্যার উৎস সন্ধানে নামা যাবে।” আজ নতুন করে সংঘর্ষের খবর নেই। তবে আরও চারটি মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ হয়েছে। ২৭০টি শিবিরে মাথা গোঁজা চার লক্ষ মানুষের মধ্যে এখন খাদ্য-পানীয়, ওষুধ ও নিরাপত্তার আর্তিই প্রবল। আর আর্তি নিজের নিজের গ্রামে, নিজের নিজের ঘরে ফেরার। প্রধানমন্ত্রীকেও তাঁরা জানিয়েছেন, দ্রুত তাঁরা ঘরে ফিরতে চান। |