ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি গড়ার লক্ষ্যে বার্তা মোদীর
শুধু ‘ভোটব্যাঙ্ক’ না হয়ে স্বপ্ন দেখুন মুসলিমরা
থাকথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাজনীতিতে তিনি এখনও অচ্ছুৎ। উন্নয়নের সিড়ি বেয়ে গুজরাতকে উচ্চস্থানে পৌঁছে দিয়েও সর্বভারতীয় রাজনীতির বলয়ে প্রবেশ করতে পারেননি তিনি। বরং গুজরাত দাঙ্গার ক্ষত এতটাই দগদগে যে, নবীন পট্টনায়ক তাঁর থেকে যোজন দূরত্ব বজায় রাখেন, বিহারে তাঁর প্রবেশে আপত্তি নীতীশ কুমারের। ‘বন্ধু’ বলতে এক জনই, জয়ললিতা। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদী নিজেকে ‘প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ’ হিসেবে ‘প্রমাণ’ করতে উঠে পড়ে লাগলেন।
সেই কৌশলের অঙ্গ হিসেবে গুজরাত দাঙ্গা পর এই প্রথম কোনও উর্দু সংবাদপত্রে মোদীর সাক্ষাৎকার বেরলো। ‘নই দুনিয়া’য় সেই সাক্ষাৎকারে মোদী বলেছেন, “মুসলিম ভাইদের আমার অনুরোধ, নিজেদের শুধু ভোটব্যাঙ্কের পর্যায়ে নামিয়ে আনবেন না। মুসলিমদের উচিত স্বপ্ন দেখা। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়াও দরকার। এ জন্য তাঁরা খোলা মনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। কিন্তু তার আগে তাঁদের মানুষ এবং ভারতীয় হিসেবে গণ্য করতে হবে।” এই কাজে যদি তাঁর কোনও রকম সাহায্য প্রয়োজন হয়, তা হলে তিনি হাত বাড়িয়ে দিতে রাজি বলেও জানিয়েছেন মোদী।
মোদীর এই ‘বার্তা’র লক্ষ্য কারা, তা নিয়ে অবশ্য দল ও সঙ্ঘ পরিবারে দ্বিমত রয়েছে। কারও কারও মতে, সরাসরি মুসলিমদের মন পাওয়াই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য। সেই কারণেই গুজরাত দাঙ্গার ‘মুখ’ কুতুবুদ্দিন আনসারি যে রাজ্যে আশ্রয় পেয়েছিলেন, সেই পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের অবস্থার সঙ্গে গুজরাতের পরিস্থিতির তুলনা টেনেছেন তিনি। বলেছেন, “গুজরাতে ৯ শতাংশ মুসলিম। কিন্তু ১২ থেকে ১৩ শতাংশ চাকরি তাদের হাতে। আর পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমের সংখ্যা ২৫ শতাংশ হলেও তাদের মধ্যে চাকরি পেয়েছেন মাত্র ২ শতাংশ।”
সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি-র শীর্ষ নেতাদের একটা বড় অংশের আবার বক্তব্য, মোদী মোটেই মুসলিম মন পাওয়ার চেষ্টা করছেন না। তাঁদের যুক্তি, মুসলিমদের কাছে মোদীর গ্রহণযোগ্যতা এখনও নেই, অদূর ভবিষ্যতে তা ফিরে পাওয়ার আশাও নেই। সুতরাং মোদীর লক্ষ্য ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা। যাঁরা বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির গড়ার পক্ষপাতী নন। যাঁরা মনে করেন, মোদী রাজধর্ম পালন করলে গুজরাত দাঙ্গা এড়ানো যেত।
এই হিন্দুদের মন জয় করতেই দাঙ্গার সময় নিজের ভূমিকা নিয়ে মোদী সাফাই দিয়েছেন বলে মনে করছেন ওই নেতারা। মোদীর বিরুদ্ধে একটা বড় অভিযোগ হল, গোধরায় ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের দেহ নিয়ে মিছিল করতে দিয়ে তিনি পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ করে তুলেছিলেন। সাক্ষাৎকারে কিন্তু সেই অভিযোগ অস্বীকার করে মোদী বলেছেন, গোধরায় অত দেহ রাখার ব্যবস্থা ছিল না বলে রাতেই সেগুলি আমদাবাদের উপকণ্ঠে শোলার সিভিল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এবং সেখানে দেহগুলি পরিবারবর্গের হাতে তুলে দেওয়ার পর কোনও মিছিল হয়নি।
মোদীর যুক্তি, ২৪ ঘণ্টার খবরের চ্যানেলের আমলে গুজরাতেই সর্বপ্রথম এত বড় মাপের দাঙ্গা হয়েছিল। আগে দাঙ্গার খবর ছড়াতে যত সময় লাগত, তার থেকে অনেক দ্রুত খবর ছড়িয়েছিল গুজরাতে। “টিভির খবরের গতির সঙ্গে তাল রেখে পরিস্থিতি সামলানো পুলিশের পক্ষে সম্ভব ছিল না,” বলেছেন মোদী। অটলবিহারী বাজপেয়ী তাঁকে ‘রাজধর্ম’ পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, এমন প্রচারও ভ্রান্ত বলে দাবি করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, “বাজপেয়ীজি বলেছিলেন, রাজধর্ম পালন করা উচিত। কিন্তু একই সঙ্গে এ-ও বলেছিলেন, যে গুজরাতে সর্বদা রাজধর্ম পালিত হয়েছে। সংবাদমাধ্যম তাঁর বক্তব্যের শুধু একটা অংশই প্রচার করে।”
ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা অবশ্য মোদীর তরফে নতুন নয়। কিছু দিন আগে ‘সদ্ভাবনা’র জন্য অনশন করে একই বার্তা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই কৌশল কতটা কার্যকরী হবে? বিজেপি-র একাংশ মনে করে, মোদীর ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ দু’টি। এক, তিনি উন্নয়নের নয়া মডেল খাড়া করেছেন। দ্বিতীয়ত, একটা বড় অংশের মানুষের কাছে তিনি হিন্দুত্বের পোস্টার বয়। অতএব, তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা আখেরে বিপরীত ফল দেবে বলেই আশঙ্কা তাদের।
মোদী সর্বভারতীয় রাজনীতিতে উঠে আসার যতই চেষ্টা করুন না কেন, কংগ্রেসের মতে, লোকসভা ভোটের আগে তাঁর বড় পরীক্ষা গুজরাতেই। এ বছরের শেষে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সম্প্রতি ১৭ বছর বিজেপি-র দখলে থাকা একটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেস জিতেছে। যাকে শুভ সঙ্কেত বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা।
এই পরীক্ষার কথা মোদীও জানেন। তাই প্রধানমন্ত্রী হলে কী করবেন, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, “আমি গুজরাতের নুন খেয়েছি। সেই নুন আমি গোটা দেশের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।” কিন্তু তাঁর ‘নুনের ভাগ’ নিতে সর্বভারতীয় এবং আঞ্চলিক রাজনীতির নেতারা কতটা রাজি হবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তাই ঠাট্টা করে কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেন, “ইন্টারভিউ তো আচ্ছা হ্যায়, মগর পিকচার অভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.