শিবিরে আশ্রিতের সংখ্যা ৯৮৪। মহিলা ৫২৫ জন। ঘর মাত্র দু’টি। শৌচালয় সব মিলিয়ে ৪টি। তার মধ্যে দু’টি মহিলাদের। দাঙ্গার কবল থেকে আশ্রয় একটা জুটেছে বটে, তবে খুবই খারাপ অবস্থায় আছেন অসম থেকে আসা শরণার্থীরা।
অসমে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে শামুকতলার মোমিনপুর শিবিরে গাদাগাদি করে রয়েছেন ওই শরণার্থীরা। শিবিরে সুযোগ না-পেয়ে মহিলারা স্নানের জন্য লাগোয়া বাড়িতে ছুটছেন। কেউ সুযোগ পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না। লাইনে দাঁড়িয়ে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। ব্লিচিং পাউডার ও ফিনাইল ঠিকঠাক দেওয়া হচ্ছে না। দু’টি ঘরেই থাকতে হচ্ছে আশ্রিতদের। দরকার আরও ঘর এবং পাখার। প্রয়োজন একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প, চিকিৎসক ও ওষুধের। |
|
|
শামুকতলার যশোডাঙা মোমিনপাড়ার ত্রাণ শিবিরে মন্ত্রী গৌতম দেব।
(ডান দিকে) শিবিরে একই দিনে হাজির বাম প্রতিনিধিদল। —নিজস্ব চিত্র |
|
রাজ্যের তরফে শরণার্থীদের সব সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেই মতো কাজ হচ্ছে বলে ঘোষণাও হয়েছে। বাস্তবে, শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার পাঁচ দিন পরেও দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন শরণার্থীরা। তাই শনিবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব ওই শিবির পরিদর্শনে যেতেই তাঁদের অনেকেই ক্ষোভে-কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, “এখানে খাবারের অসুবিধা নেই। তবে দু’টি ঘরে এতজন থাকা যায় না। শৌচাগার না থাকায় মহিলাদের খুবই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।” পাশাপাশি, প্রশাসনের অফিসার-কর্মীদের তরফে সে ভাবে সাহায্য মিলছে না বলেও তাঁরা অভিযোগ করেন।
শরণার্থীদের ক্ষোভ-অভিযোগের মুখে পড়ে বিব্রত উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী সেখানে দাঁড়িয়েই আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। মন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমি ত্রাণ দিতে এসেছি। এখানে এসে এত অভিযোগ শুনলাম। আপনি শিবিরে আসেননি কেন? আপনার সম্পর্কে অনেক অভিযোগ শুনেছি। তাড়াতাড়ি শরণার্থীদের জন্য যা যা করণীয় করুন। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানাব।”
এর পরেই মন্ত্রী সেখানে দু’টি অস্থায়ী বড় মাপের তাঁবু বানানোর নির্দেশ দেন। মন্ত্রী বলেন, “কয়েকটি অস্থায়ী শৌচাগার বানিয়ে দেওয়া হবে। অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প তৈরির জন্য মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি পুলিশ ক্যাম্পও বসানো হবে।” মন্ত্রীর সঙ্গে বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, অনিল অধিকারী, মৃদুল গোস্বামী, জহর মজুমদারেরা ছিলেন। শিবিরের আশ্রিতদের মধ্যে বিস্কুট, পাউরুটি, কাপড় ‘ওআরএস’, গুড়ো দুধ বিলি করেন মন্ত্রী।
এ দিনই অসম সংলগ্ন ডুয়ার্সের বিভিন্ন গ্রামের আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে রাজ্য বিধানসভার বাম প্রতিনিধিদল। পরে তাঁরাও মোমিনপুর শিবিরে যান। শরণার্থীরা তাঁদের বলেন, “আপনারা আমাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিন।” আনিসুর রহমান বলেন, “অসমের শরণার্থীরা অনেকেই বাড়ি ফিরতে চাইছেন। আমরা ওঁদের নিরাপদে ফেরানোর জন্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হব।”
এ দিন আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে রিপোর্ট দিয়েছি। তিনি ত্রাণ পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।” |