এ বার পুঁজির জোর বাড়িয়েই প্রতিযোগিতার বাজারে নামতে কোমর বাঁধছে ওয়েবকন। কারণ, বাড়তি মুনাফা ঘরে তুলতে সংস্থার লক্ষ্য শুধুই সরকারি বরাতের দাক্ষিণ্য নয়, বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে বড় মাপের ব্যবসা হাতে পাওয়া।
ওয়েবকনের পুঁজি সর্বসাকুল্যে ৬৫ লক্ষ টাকা। সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে এক লাফে তা ৭ কোটিতে নিয়ে যেতে ‘রাইটস ইস্যু’ আনতে চলেছে সংস্থা। কারণ, বেসরকারি ক্ষেত্রের বড় বরাত পাওয়ার পথে বাধা সংস্থার সামান্য পুঁজি। দরপত্র দেওয়ার আগেই দৌড় থেকে ছিটকে যায় তারা।
পুঁজি বাড়াতে ওয়েবকন নিজের অংশীদারদের কাছেই নতুন শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে অনুমোদিত পুঁজি বা ‘অথরাইজড ক্যাপিট্যাল’ ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকায় পরিণত করতে চায় তারা। আর, ‘পেড আপ ক্যাপিট্যাল’ বা যে শেয়ারের দাম ইতিমধ্যেই চুকিয়ে দিয়েছে অংশীদারেরা, সেই পুুঁজিও ১৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ কোটিতে নিয়ে যেতে চায় তারা। নতুন শেয়ার বিক্রি করেই এই টাকা তুলতে চলেছে সংস্থা। যাদের হাতে এখন সংস্থার শেয়ার আছে, তাদেরই নতুন শেয়ার বিক্রি করা হবে ‘রাইটস ইস্যু’ হিসেবে। সংস্থার প্রধান দেবাঞ্জন দত্ত জানান, অগস্টে সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে এই প্রস্তাবের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা হবে। এ ব্যাপারে অবশ্য আগেই সায় দিয়েছে পর্ষদ।
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয় ওয়েবন। এ ছাড়াও শরিক হিসেবে রয়েছে সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সরকার। মূলত বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রকল্প তৈরির আগে সেই প্রকল্পের সম্ভাবনা ও কার্যকারিতা খতিয়ে দেখার কাজ করে ওয়েবকন। আর্থিক ও প্রযুক্তিগত, প্রকল্পের দু’দিকই খতিয়ে দেখে সংস্থা। কিছু ক্ষেত্রে শুধু রিপোর্ট তৈরিই নয়, প্রকল্প চালু করার পর্যায় পর্যন্ত কাজ করে তারা। এ ব্যাপারে দেবাঞ্জনবাবু উদাহরণ দিয়ে জানান, অরুণাচল প্রদেশ সরকারের এক প্রকল্পে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সক্রিয় থাকছে সংস্থা। ৭৫ কোটি টাকার এই ফুড পার্ক প্রকল্প চালুর চূড়ান্ত ধাপ পর্যন্ত ওই সরকারকে সাহায্য করবে ওয়েবকন।
সংস্থার দাবি ১৯৭৯-এ তৈরি এই সংস্থা কখনও লোকসান করেনি। কিন্তু সেই লাভের অঙ্ক নেহাতই কম। বিশেষ করে অন্যান্য রাজ্যের একই ধরনের সংস্থা যে পরিমাণ ব্যবসা করে, সে তুলনায় ওয়েবকন অনেকটাই পিছিয়ে। মহারাষ্ট্রের এ রকম এক সংস্থা প্রায় ৪০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। কেরলে তা ২৬ কোটির কাছাকাছি।
আর, ২০১১-’১২ অথর্বর্ষে ওয়েবকনের ব্যবসা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭ কোটি টাকা।
নতুন ব্যবসার দিকেও নজর দিচ্ছে সংস্থা। বিভিন্ন সংস্থার হয়ে প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করার পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নের পরিকল্পনাও করে দিচ্ছে ওয়েবকন। ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি’ বা শিল্প সংস্থাগুলির সামাজিক দায়বদ্ধতাও ওয়েবকনের জন্য তৈরি করছে নতুন বাজার। দেবাঞ্জনবাবুর দাবি, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির মোট ব্যবসার ২% এই খাতে খরচ করার কথা। বেসরকারি সংস্থাও পিছিয়ে নেই।
ইতিমধ্যেই পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন, অয়েল ইন্ডিয়া, টাটা কেমিক্যালস-এর জন্য সামাজিক প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরি ও তা কার্যকর করেছে ওয়েবকন। আপাতত ওয়েবকনের মোট ব্যবসার ১০% এ ধরনের প্রকল্প থেকে আসে। কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন পুঁজি এলে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। বর্তমানে জায়গা ভাড়া করে এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। |