পরিকল্পনার অভাব নিয়ে প্রশ্ন
পর্যটক টানায় এখনও পিছিয়েই রয়েছে রাজ্য
০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন মাত্র ২ লক্ষ বিদেশি পর্যটক। যেখানে দিল্লিতে পর্যটকের সংখ্যা ৩৪ লক্ষ। মুম্বইয়ে ২০ লক্ষেরও বেশি। কেরল, হিমাচল, গুজরাতে পর্যটকের সংখ্যাও এই রাজ্যের চেয়ে অনেক বেশি। পর্যটনের মানচিত্রে নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে তাই উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য।
রাজ্যের দাবি মেনে নভেম্বরে লন্ডনের পর্যটন মেলায় পশ্চিমবঙ্গকে ‘থিম’ করার কথা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। শনিবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়।
কিন্তু, কেবল এই পদক্ষেপ করলেই কি এ রাজ্যে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাবে? ওই অনুষ্ঠানেই রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ জানিয়েছেন, “পর্যটনের জন্য ভিন্ন নীতি নির্ধারণ করেছে নতুন সরকার।” তাঁর কথায়,“ভাবমূর্তি তুলে ধরা, আলাদা লোগো তৈরি, পরিকাঠামো তৈরি, বিপণন পরিকল্পনা তৈরি করাই এখন অগ্রাধিকার।” রচপাল জানান, “আর্থিক বরাদ্দও বেড়েছে।”
ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়।
কী চান বিদেশিরা? সুবোধকান্ত নিজেই জানিয়েছেন, “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ জরুরি। বিদেশিরা স্বাস্থ্য সচেতন। নোংরা শহর, নোংরা স্টেশন দেখলে তাঁরা আসবেন না।” পর্যটন কেন্দ্রে বিনোদন-ক্রীড়ার ব্যবস্থা করা জরুরি। বিদেশিদের অনেকেই বিলাসবহুল হোটেলের সঙ্গে গল্ফ কোর্স চান। বরফে স্কি করতে চান। ওয়াটার-স্পোর্টস চান। পশ্চিমবঙ্গ এখনও এই পরিকাঠামোর নিরিখে অনেক পিছিয়ে। তবে কেবল এই রাজ্য নয়, এই দিকে পিছিয়ে রয়েছে গোটা দেশই।
আর এখানেই এগিয়ে রয়েছে সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, তাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এমনকী চিনের মতো দেশগুলি। শুধু পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার চারপাশে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি গল্ফ-কোর্স। ২০১১ সালে চিনে পা রেখেছেন সাড়ে পাঁচ কোটি বিদেশি পর্যটক, সিঙ্গাপুরে এক কোটি। ভারতের মতো বিশাল দেশে এসেছেন মাত্র ৬২ লক্ষ। পর্যটনে ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের বৃদ্ধির হার যেখানে ৩৯ শতাংশ, সেখানে ভারতে বৃদ্ধির হার মাত্র ৯ শতাংশ।
পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা ছাড়া ভাল হোটেল, বিনোদন ব্যবস্থা নেই। পর্যটকদের জন্য এখনও কোনও আকর্ষণীয় প্যাকেজ নেই। অথচ মুর্শিদাবাদ থেকে বিষ্ণুপুর, দীঘা থেকে দার্জিলিং - এ রাজ্যে পর্যটন ক্ষেত্রে বৃদ্ধির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানতে চান, পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন নিয়ে নতুন প্রকল্প রিপোর্ট পাঠাচ্ছে না কেন। তা হলে কেন্দ্র টাকা পাঠাতে পারে। তাঁর প্রশ্ন, “অন্য রাজ্য রিপোর্ট পাঠাচ্ছে। আপনারা পাঠাচ্ছেন না কেন?” পরে রচপাল বলেন, “বেশ কয়েকটি প্রকল্প রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। সম্ভবত সেগুলি এখনও মন্ত্রীর গোচরে আসেনি।”
পর্যটন সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ট্রিপ-অ্যাডভাইজারের নিখিল গাঞ্জু জানান, বিদেশি এমনকী, ভারতীয়দের কাছে এই রাজ্য এখনও ব্রাত্য। ভারতের প্রথম দশটি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে শুধু কলকাতার নাম। ২৫টি পর্যটন কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে দার্জিলিং। একশোটি গন্তব্যের মধ্যে উঠে এসেছে মন্দারমণির নাম।
সহায়ের কথায়, “রাজ্যের বহু প্রত্যন্ত স্পটে শুধু পূর্ত বা সেচ দফতরের বাংলো ছাড়া থাকার জায়গা নেই।” তাঁর বক্তব্য,“ সে সব বাংলো ভেঙে এখনই ১০০-২০০ ঘরের সস্তার হোটেল বানানো উচিত। অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এই পথে লাভবান হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মতে, পর্যটনকে এখন লাভজনক ব্যবসা হিসেবে দেখতে হবে। উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “ক’দিন আগে আমার কাছে মরিশাস পর্যটনের অফিসারেরা এসেছিলেন। ভারতীয় বহু সিনেমার শু্যটিং হয়েছে সেখানে। এখন তাঁরা চান হিন্দি সিরিয়ালও ওখানে শু্যট করা হোক।” এ ভাবেই আরও বেশি ভারতীয়ের কাছে পৌঁছে যেতে চাইছে মরিশাস।
এই দৃষ্টিভঙ্গিটাই এখন পর্যটন ব্যবসার মডেল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.