নিজস্ব সংবাদদাতা • পাড়ুই |
স্কুলটির জন্য নিজের চার বিঘা জমি দান করেছিলেন তিনিই। পরবর্তী সময়ে তিনি সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদও সামলেছেন। কিন্তু মৃত্যুর ৩৪ বছর পার হলেও পেনশন পাচ্ছেন না ওই প্রধান শিক্ষকের অশীতিপর বিধবা স্ত্রী। পাড়ুই থানার কেন্দ্রডাঙাল গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আবুল খালেকের স্ত্রী বিগত বছরগুলিতে বারবার প্রশাসনের কাছে দরবারও করেছেন। কোনও সুরাহা মেলেনি। বৃদ্ধা স্ত্রী সাগিনা বিবি তাই এখন সমাধান চেয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
|
সাগিনা বিবি। |
আবুলবাবুর পরিবারের সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রডাঙাল আংশিক বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করতেন আবুল খালেক। প্রধান শিক্ষক পদে থাকতে থাকতেই অসুস্থ হয়ে ১৯৭৮ সালের ২৯ এপ্রিল মারা যান তিনি। তারপর থেকে প্রাপ্য পেনশনের জন্য সরকারের বিভিন্ন দুয়ারে ঘুরছেন আবুলবাবুর স্ত্রী। তিনি বলেন, “১৯৮০ সাল নাগাদ শিক্ষা দফতরের কাছে স্বামীর পেনশনের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। তারপরে সংশ্লিষ্ট সব মহলকেই পেনশন না পাওয়ার বিষয়টি জানাতে থাকি।” তাঁর অভিযোগ, “স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে রাজ্য সরকার সবাইকে দুরবস্থার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু ৩৪ বছরেও কোনও উত্তর পাইনি। একজন আদর্শ শিক্ষকের বিধবা স্ত্রীকে তাঁর প্রাপ্য থেকে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে?” স্বামীর পেনশন থেকে বঞ্চিত স্ত্রী তাই চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
পরিবার ও জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে জানা গিয়েছে, আবুলবাবু ১৯৫৬ সালের ১ জুলাই কেন্দ্রডাঙাল আংশিক বুনিয়াদী বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। বোলপুর পশ্চিম চক্রের অন্তর্গত এই শিক্ষকের অবসর নেওয়ার কথা ছিল ১৯৭৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। স্বামীর প্রাপ্য পেনশন থেকে বঞ্চিত হয়ে গত ৩৪ বছর ধরে তাঁর ছেলেদের উপরই নির্ভর করে দিন কাটাতে হচ্ছে সাগিনাবিবিকে। তাঁর ছেলে মহম্মদ সাদাক্কাস বলেন, “৩৪ বছরে বাম সরকারের কাছে অন্তত ৬ বার দরবার করা হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তাই মা এ বার মমতাদিকে চিঠি লিখেছেন।” তাঁর আশা এ বার তাঁর মা সুবিচার পাবেন।
বোলপুর পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “বিষয়টি বহু দিন আগের। সাগিনাবিবির আবেদন পেয়ে তাই ‘সার্ভিস রোল’ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়েছি। আশা করছি দ্রুত একটা কিছু সমাধান হবে।” জেলা পরিদর্শক (প্রাথমিক) তপন মজুমদার বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।” অন্য দিকে, ঘটনার কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতি রাজা ঘোষ বলেন, “বিগত বাম সরকারের জমানার এমন অনেক বঞ্চনার ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। ওই শিক্ষকের স্ত্রীর প্রাপ্য পেতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিচ্ছি।” |