আটক দুই চাষি
জমি নিয়ে ক্ষুব্ধ শিবপুরেই আইটি-হাবের শিলান্যাস
শিল্পের জন্য জমি নেওয়া হয়েছিল। শিল্প এক দশকেও হয়নি। তা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভও রয়েছে বিস্তর। বোলপুরের শিবপুর মৌজার সেই অধিগৃহীত জমিতে শুক্রবার তথ্য-প্রযুক্তি বা আইটি হাবের শিলান্যাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দ্বিতীয়বার বীরভূম সফরে এসে বললেন, “আপনাদের শান্তিনিকেতন, শ্রীনিকেতন রয়েছে। শিবপুর মৌজায় আমি শিল্পনিকেতন করব। আইটি-হাব হবে। হার্ডওয়ার হাব, ইন্ডাস্ট্রিয়াল শপ-সহ নানা পরিকল্পনা রয়েছে এখানে।”
যদিও ঘটনা হল, বাম আমলে অধিগৃহীত ওই জমির জট এখনও কাটেনি। জমির দাম নিয়েও জমিহারারা ক্ষুব্ধ।
এ দিন ‘শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন কৃষিজমি বাঁচাও কমিটি’র সদস্যদের একাংশ শিবপুরের ওই জমির জন্য বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন।
বোলপুর মহকুমাশাসকের দফতরে মমতা প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই তাঁরা সেখানে জড়ো হয়ে দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হন। পুলিশ তাঁদের ব্যারিকেড করে আটকে রাখে। কমিটির সদস্যদের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আর দেখা করা হয়নি। তবে বিকেলে পুলিশ কমিটির দুই সদস্যকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে বোলপুরে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে চাষিদের অবস্থান।
কমিটির দাবি, যাঁরা ইতিমধ্যেই চেক নিয়েছেন, তাঁদের বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা দেওয়া হোক। আর যাঁরা নেননি, তাঁদের প্রাপ্যও বাজারদর অনুযায়ী মেটাতে হবে। বর্গাদার, খেতমজুর, পাট্টাদারদেরও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের শিল্প ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জমি নিয়ে কিছু চাষির ক্ষোভ রয়েছে। পূর্বতন সরকার ওঁদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়নি। আমরা ওঁদের সঙ্গে কথা বলছি। তবে জমির জন্য ওই শিল্পতালুকে শিল্পের সমস্যা হবে না।”
বাম আমলে শিল্পস্থাপনের জন্য ২০০১ সালে শিবপুর মৌজার প্রায় ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রায় ২০৬ একরে শিল্প গড়ার কথা ছিল। রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের ওই জমিতে অবশ্য কেউ শিল্প গড়তে আসেনি। অনেক জমির মালিক ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে নিলেও শ’খানেক চাষি নেননি। শিল্প গড়ার এবং ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে জমিদাতারা ২০০৮-এ তৃণমূলের নেতৃত্বে ‘শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন কৃষিজমি বাঁচাও কমিটি’ গড়েন। পার্থবাবু সেই সময় এখানে এসে আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানিয়েছিলেন। অধিগৃহীত জমির সীমানা খুঁটি উপড়ে জমিদাতাদের একাংশ ধান চাষও শুরু করেন। এ বারও ধান চাষ হয়েছে।

বোলপুরে ডাকবাংলো মাঠের
সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নানুরের বাসাপাড়ায়
‘শহিদ’দের শ্রদ্ধা রেলমন্ত্রীর।
 

আদিবাসীদের মাঝে মুখ্যমন্ত্রী। শান্তিনিকেতনে শুক্রবার।
শিল্পমন্ত্রী এ দিন জানান, পাঁচ একর জমিতে ‘আইটি-হাব’ হবে। সেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে প্রায় ১৫,০০০ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। আরও ১৫ একর জমিতে হবে ‘হার্ডওয়্যার পার্ক’। সেখানে ২০০০ জনের কাজের সুযোগ মিলবে।
জমিদাতাদের অভিযোগ, ‘আইটি-হাব’ হওয়ার তোড়জোড় হতেই তাঁদের জমি ছেড়ে দিতে বলা হচ্ছে। কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক মুজিবর রহমান জানালেন, ফসল তোলার জন্য তাঁরা সরকারের কাছে ৯০ দিন সময় চেয়েছেন। সেই দাবিতেই নিজেদের তৃণমূল সমর্থক হিসেবে দাবি করে এ দিন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আশায় এসডিও অফিস চত্বরে দাঁড়িয়েছিলেন নুরপুর সাবিরগঞ্জ এলাকার জমি মালিক সাইফুল রহমান, জুলফিকার আলি-রা। তাঁদের ক্ষোভ, “সবে আমন চাষ শুরু করেছি। বাড়িতে ফসল তুলতে না পারলে খাব কী?” তাঁদের কথায়, “আমরাও চাই এখানে শিল্প হোক। কর্মসংস্থান হোক। তখন বলা হয়েছিল বিঘাপিছু ৬৮ হাজার টাকা দেওয়া হবে। পেয়েছিলাম ৪৮ হাজার করে। তাতে কি পেট চলে! এখন জমির দাম এখানে আকাশছোঁয়া। আমরা তাই ন্যায্য ক্ষতিপূরণের আর্জি জানাচ্ছি।” এখনকার বাজারদর অনুযায়ী সরকারের কাছে রাস্তার পাশের জমির জন্য বিঘা প্রতি ৬ লক্ষ টাকা এবং ভিতরের জমির জন্য সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দাবি করেছে কমিটি। গত ২৫ মার্চ এই জমি পরিদর্শনে এসেছিলেন শিল্পমন্ত্রী। তখনও জমিদাতাদের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে কমিটির নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে দাবিদাওয়ার ব্যাপারে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন পার্থবাবু।
আদিবাসীদের মাঝে। শান্তিনিকেতনের বনেরপুকুরডাঙায় বাসিন্দাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু, এ বার খোদ মুখ্যমন্ত্রী আইটি-হাবের শিলান্যাস করে যাওয়ার পরে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন জমিহারারা। অনেকেই বলছেন, “উপযুক্ত দাম পেলাম না। এ বার তো চাষও করতে পারব না।” এ দিন দু’জনকে আটক করায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতি তাঁদের ক্ষোভ বেড়েছে। কৃষিজীবীদের একাংশের কটাক্ষ, “আমাদের দিয়ে চুরি করাল। আর এখন ওরা আমাদেরই চোর সাব্যস্ত করছে!” পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা রূপায়ণমন্ত্রী তথা বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “এটা মোটেই ঠিক নয়। শিল্প হয়নি বলে এলাকায় ক্ষোভ ছিল। এখন সেখানে শিল্প হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ আর কর্মসংস্থানের ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে জমির মালিক, চাষি ও খেতমজুরদের আলোচনা চলছে।”
মমতার ঘোষণা
• আমোদপুর-কাটোয়া ন্যারোগেজ থেকে ব্রডগেজ
• বোলপুরে আইটি হাব
• সিউড়ি, রামপুরহাট ও বোলপুরে মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল
• জেলার ১১টি ব্লকে কিষান বাজার ও হিমঘর
• খয়রাশোলে আইটিআই
• মুরারই-১, নলহাটিতে পলিটেকনিক কলেজ
• বোলপুরে লালপুল সম্প্রসারণে রেলের ১৫ কোটি (১৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি)
• বোলপুর, মুরারই, রাজনগরে ছাত্রাবাস
• বোলপুরে একলব্য বিদ্যালয়

ঝাড়খণ্ডের মাওবাদীরা বীরভূমের সীমানাবর্তী গ্রামগুলিতে ঘাঁটি তৈরি করার চেষ্টা করছে।
গাড়ির তেল যতই পুড়ুক, গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রাখুন। বিডিওদের সঙ্গে
যোগাযোগ রেখে সরকারি নানা প্রকল্প ও সামাজিক উন্নয়নে এলাকাবাসীদের যুক্ত করুন। —মুখ্যমন্ত্রী


শুক্রবার ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.