সন্দেহের বশে স্ত্রীকে মারধর করে তাড়িয়ে দুই শিশু সন্তানকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার দুপুরে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পাটছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙারহাট এলাকায় ওই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, মৃত ওই শিশুর নাম কৃষ্ণ বর্মন (৩) ও সুমন বর্মন (৮ মাস)। শিশু দুটিকে খুনের অভিযোগে তাদের বাবা প্রণব বর্মনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘটনার খবর পেয়েই জ্ঞান হারান শিশু দু’টির মা রীতাদেবী। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস জানান, স্ত্রীকে নানা কারণে সন্দেহ করতেন ওই ব্যক্তি। তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই দু’জনের ঝগড়া হত। এ সব নিয়ে অশান্তির জেরে কয়েকদিন আগে স্ত্রী বাচ্চাদের নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই অভিযুক্ত বাচ্চাদের নিজের কাছে নিয়ে আসেন। এ দিন তিনিই ওই শিশু দুটিকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছেন বলে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে অবশ্য মৃত্যুর কারণ পুরোপুরি স্পষ্ট হবে। অভিযুক্তের স্ত্রীও স্বামীর বিরুদ্ধে সন্তানদের খুনের অভিযোগ জানিয়েছেন। ওই ব্যক্তিকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, প্রায় ৮ বছর আগে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার ডাঙারহাটের বাসিন্দা পেশায় মৎস্যজীবী প্রণব বর্মনের সঙ্গে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা রীতাদেবীর সামাজিক বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই দম্পতির মধ্যে মনোমালিন্যের সূত্রপাত। বছর তিনেক আগে রীতাদেবীকে কেরোসিন ঢেলে ওই ব্যক্তি পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে সংসার করার কথা ভেবে ওই ব্যাপারে থানায় কোন অভিযোগ জানাননি রীতাদেবী। সম্প্রতি ওই দম্পতির মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়। মঙ্গলবার প্রণববাবু তার স্ত্রী রীতাদেবীকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন। রীতাদেবী দুই সন্তানকে নিয়ে উত্তর পাটছড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। বুধবার ওই বাড়িতে গিয়ে ছেলেদের জবরদস্তি নিজের কাছে রাখার জন্য নিয়ে যান প্রণববাবু। এদিন দুপুরে ওই ঘটনা ঘটিয়ে প্রণব পালানোর চেষ্টা করেন। এলাকার বাসিন্দা বাসন্তী রায় বলেন, “এ দিন দুপুরে অত ছোট দুই বাচ্চাকে রেখে বাড়িতে রেখে প্রণব সাইকেল নিয়ে পড়িমরি করে ছুটছে দেখে সন্দেহ হয়। বাচ্চাদের খোঁজে বেড়ার ফুটো দিয়ে এলাকার কয়েকজন ঘরের ভেতর উঁকি না দিলে ঘটনা এদিন জানাই যেত না।” খবর পেয়ে ডাঙারহাটে ছুটে যান তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার-১ ব্লক সভাপতি খোকন মিঁয়া। খোকন মিঁয়া বলেন, “অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। খবর পেয়েই দলের কর্মসূচি বাতিল করে ডাঙারহাটে ছুটে যাই। বেড়া খুলে নিশ্চিত হতেই পুলিশকে ওখান থেকে ফোন করে ঘটনার কথা জানাই। আর একটু দেরি হলে হয়ত অভিযুক্ত গ্রামের সীমানার বাইরে পালিয়ে যেত।” এদিন জ্ঞান ফেরার পরে রীতা দেবী বলেন, “আমি ওদের বাঁচাতে চেয়েছিলাম। সে জন্য আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু ওদের বাঁচাতে পারলাম না।” |