রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা অপ্রতুল, অভাব রয়েছে চিকিৎসকেরও। এই পরিস্থিতিতে একটি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার মতো বিলাসিতার সুযোগ নেই বলেই মনে করে কলকাতা হাইকোর্ট। হলদিয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আইকেয়ার পরিচালিত মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিলকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মামলার শুনানি শুক্রবার শেষ হয়েছে। বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত সোমবার রায় দেবেন।
শুক্রবার ওই মামলার সওয়ালের সময় বিচারপতি বলেন, কল্যাণকামী রাষ্ট্রে সরকারেরই এ-সব করা উচিত। কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে সরকার সব করে উঠতে পারে না। তার জন্য অন্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদি দেখা যায় যে, কোথাও ভুল হয়েছে বা গাফিলতি হয়েছে, তা সংশোধন করা যায়। কিন্তু একটা কলেজ, যেখান থেকে প্রতি বছর কয়েকশো নতুন চিকিৎসক পাওয়া যেতে পারে, তা বন্ধ করে দেওয়া রাজ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।
রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে হলদিয়ার ওই মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল করে দেওয়া হয়। তার পরে রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ও ওই কলেজের অনুমোদন খারিজ করে দেয়। দু’বার পরিদর্শন করে মেডিক্যাল কাউন্সিল (এমসিআই) অনুমোদন দেয়। কিন্তু তথ্য (একই ভবনে মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ চালানো) গোপন করার অভিযোগে তৃতীয় বার পরিদর্শনে এসে মেডিক্যাল কাউন্সিলের প্রতিনিধিরাও ওই অনুমোদন বাতিল করে দেন।
কলেজের পক্ষে আইনজীবী এস কে কপূর আদালতে বলেন, কেন অনুমোদন খারিজ করা হয়েছে, রাজ্য সরকার তার কোনও কারণ দেখায়নি। আর বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। পরিকাঠামো দেখার দায়িত্ব মেডিক্যাল কাউন্সিলের। এমসিআই কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবের কথা বলেনি। বরং পরিকাঠামোর প্রশংসাই করেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অভিযোগ তোলার কোনও এক্তিয়ার নেই।
কলেজটি যারা পরিচালনা করে, তাদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, সোসাইটি যখন রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ‘এসেন্সিয়াল সার্টিফিকেট’ পেয়েছিল, তখন আবেদনে বলেছিল, কলেজ ভবনের এক লক্ষ ৩৩ হাজার বর্গফুটের মধ্যে ১৬ হাজার বর্গফুট সাময়িক ভাবে ডেন্টাল কলেজের জন্য ব্যবহার করা হবে। ডেন্টাল কলেজের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। কিছু দিনের মধ্যেই সেখানে ডেন্টাল কলেজ ভবন তৈরি হয়ে যাবে। তাই তথ্য গোপন করার কোনও অভিযোগ খাটে না। রাজ্য সরকারের পক্ষে সক্ষে সুব্রত তালুকদার বলেন, মেডিক্যাল কাউন্সিলের বক্তব্য সরকার আগেই জানতে পেরেছিল। তাই অনুমোদন খারিজ করে দেয়। বিচারপতি জানতে চান, রাজ্য সরকারের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলার এক্তিয়ার আছে কি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সুপ্রিম কোর্টে মেডিক্যাল কাউন্সিল ও ডেন্টাল কাউন্সিল রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কলেজ-কর্তৃপক্ষ তা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেননি।
সওয়াল-জবাবের সময় বিচারপতি বারবার বলেন, ভুলের সংশোধন হয়, প্রতিকার হয়। কিন্তু যেখানে অনেক কিছু করা যাচ্ছে না, সেখানে একটা তৈরি কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার আগে সকলকেই ভাবতে হবে। তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের কথা বলেন সব পক্ষকেই। |