শহরের কোনও নলকূপের জলেই বিপজ্জনক মাত্রার উপরে আর্সেনিক নেই বলে দাবি করেছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষার রিপোর্টকেও উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মেয়রের সেই দাবিকে নস্যাৎ করল পুরসভারই নিজস্ব সমীক্ষা।
পুর-সমীক্ষা বলছে, যাদবপুর এলাকার কয়েকটি নলকূপের জলে সহনমাত্রার উপরে আর্সেনিক মিলেছে। শুধু পুরসভাই নয়, রাজ্য দূষণ পর্ষদ ও রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরও আলাদা ভাবে একই নমুনার জল পরীক্ষা করেছিল। তাদের রিপোর্টেও সহনমাত্রার উপরে আর্সেনিকের উপস্থিতি মিলেছে। এ বিষয়ে আগামী ৩ অগস্ট পুরসভায় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা।
গত জুনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ যাদবপুর ও গল্ফগ্রিন এলাকার নলকূপের জল পরীক্ষা করে কয়েকটিতে আর্সেনিক পেয়েছিল। ওই রিপোর্টের কথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে লিখিত ভাবে জানানোও হয়েছিল বলে এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। যদিও ওই রিপোর্টকে আমল দেননি মেয়র। পরে পুরসভার মেয়র পারিষদ (নলকূপ) তারক সিংহ ওই রিপোর্টকে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেছিলেন “ওরা (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) যে যে নলকূপের জল পরীক্ষা করেছে, আমরাও সেখানে সমীক্ষা করব।”
এর মধ্যেই আবার কলকাতার কয়েকটি এলাকার নলকূপের জল পরীক্ষা করে রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতর (সুইড) জানায়, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে পানীয় জলে সহনমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ আর্সেনিক মিলেছে। সেই রিপোর্ট নিয়েও ধন্দে ছিলেন মেয়র। ইতিমধ্যে পুরসভার পক্ষ থেকে ৩৪টি নলকূপের জলের নমুনা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতর ও পুরসভার নিজস্ব পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। শুক্রবার মেয়র পারিষদ তারক সিংহ জানান, রিপোর্ট অনুযায়ী তিনটি নলকূপের ক্ষেত্রে সহনমাত্রার উপরে আর্সেনিক মিলেছে। তবে রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের দেওয়া রিপোর্টে ৩৪টি-র মধ্যে পাঁচটিতে আর্সেনিক মিলেছে। এর মধ্যে চারটি পুরসভার নিজস্ব নলকূপ।
যদিও পুর-কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সহনমাত্রা (প্রতি লিটারে ০.০১ মিলিগ্রাম) ধরেনি। ‘ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড’-এর মাত্রা (প্রতি লিটারে ০.০৫ মিলিগ্রাম) ধরে ওই হিসেব করেছে। সুইডের এক অফিসারের মতে, হু-র সূচক মানা হলে শুধু কলকাতা পুরসভার দেওয়া রিপোর্টেই ১০টি নলকূপে বিপদসীমার উপরে আর্সেনিক মিলেছে। বাকি দু’টির ক্ষেত্রে ৬টি করে নলকূপে সহনমাত্রার উপরে আর্সেনিক মিলেছে।
এ দিন রিপোর্ট জানার পরে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য কয়েকটি নলকূপে আর্সেনিকের উপস্থিতি স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, “যে সব নলকূপে বিপদসীমার উপরে আর্সেনিক মিলেছে, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে।” ওই সব এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা কী হবে, তা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, “পাইপলাইন বা গভীর নলকূপের সাহায্যে ওই সব এলাকায় পানীয় জল দেওয়া হবে।” |
