উচ্চ মাধ্যমিকের ফলে সন্তুষ্ট না-হলে এ বার নম্বর বাড়ানোর সুযোগ পাবেন ছাত্রছাত্রীরা। সেই জন্য অবশ্য প্রথম বারের পরীক্ষার মার্কশিট বাতিল করে পরের বছর নতুন করে পুরো পরীক্ষাটাই দিতে হবে তাঁদের। প্রথম পরীক্ষার ফল বেরোনোর এক মাসের মধ্যে মার্কশিট ফেরত দিয়ে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। আর পরের দফায় যে-নম্বর মিলবে, সেটাই মেনে নিতে হবে পরীক্ষার্থীদের। শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বার্ষিক সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এত দিন এক বার উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার পরে দ্বিতীয় বার আর ওই পরীক্ষা দেওয়া যেত না।
এ দিন সংসদ আরও জানিয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা যাতে একাদশ শ্রেণির পঠনপাঠনকে উপেক্ষা না-করে, সেই জন্য স্কুলের ওই পরীক্ষার ফল উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটে ছেপে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। একাদশ-দ্বাদশের প্রশ্নের ধরনও বদলে ফেলছে সংসদ। ৫০ শতাংশ প্রশ্নই হবে ‘অবজেকটিভ’ বা সংক্ষিপ্ত ধরনের। বাকি প্রশ্ন ব্যাখ্যামূলক। সংসদের এ দিনের বার্ষিক সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বলে জানান সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এ বার বিষয়গুলি রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। সরকারি অনুমোদন পেলে এই সব পরিবর্তন কার্যকর হবে ২০১৫ সাল থেকে।
সংসদ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে গত বছরই মুক্তিনাথবাবু জানিয়েছিলেন, তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার নম্বরের প্রতিফলন রাখার পক্ষপাতী। কিন্তু তাতে ছাত্রছাত্রীদের উপরে বাড়তি চাপ তৈরি হবে বলে প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এ দিন সংসদের বার্ষিক সভার পরে মুক্তিনাথবাবু বলেন, “একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার মোট নম্বর ও গ্রেডের উল্লেখ থাকবে উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটে।”
ছাত্রছাত্রীদের চাপ কমানোর জন্য কেবল দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে ২০০৭ থেকে। দেশের প্রায় সব বোর্ডেই এই নিয়ম চালু হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এখন উল্টো পথে হাঁটতে চাইছে কেন? |
সভাপতি বলেন, “অনেক পড়ুয়াই একাদশ শ্রেণির পঠনপাঠনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। গত ২৮ জুন ‘কবসে’ (সব রাজ্যের শিক্ষা বোর্ডগুলির সংগঠন)-র বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়। অন্যান্য রাজ্যের বোর্ডের প্রতিনিধিরাও জানান, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার প্রাসঙ্গিকতা ফেরাতে একটা ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।” যদিও আইএসসি কিংবা সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় একাদশের নম্বরের প্রতিফলন ঘটানোর কোনও পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট বোর্ডের নেই।
মুক্তিনাথবাবু আরও জানান, একাদশ-দ্বাদশের প্রশ্নপত্রের ধরন বদলানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। প্রশ্নপত্রের ৫০ শতাংশই হবে ‘অবজেক্টিভ’। সভাপতি জানান, বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে ৭০ নম্বরের লিখিত এবং ৩০ নম্বরের প্র্যাক্টিক্যাল আর অন্যান্য বিষয়ে ৮০ নম্বরের লিখিত এবং ২০ নম্বরের প্রজেক্ট ওয়ার্ক থাকবে। তিনি বলেন, “লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নে ৩০ শতাংশ ‘মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন’ (এমসিকিউ), ২০ শতাংশ প্রথাগত অবজেক্টিভ এবং বাকি ৫০ শতাংশ বিশ্লেষণাত্মক প্রশ্ন থাকবে।” টোকাটুকি রুখতে এমসিকিউ-এর প্রশ্নগুলির ক্রম প্রতিটি প্রশ্নপত্রে বদলে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
রাজ্যের বোর্ডের ছাত্রছাত্রীরা যাতে আইসিএসই-সিবিএসই বোর্ডের পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না-পড়ে, সেই জন্যই ‘অবজেক্টিভ’ প্রশ্নের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান সভাপতি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আগেই প্রস্তাব দিয়েছেন, প্রশ্নপত্রে ৫০ শতাংশ অবজেক্টিভ ধরনের প্রশ্ন রাখা হোক। কিন্তু তাঁদের এই পরিকল্পনা নিয়েও বিস্তর সমালোচনা হয়েছে। কারণ, আইএসসি, সিবিএসই-তে অবজেক্টিভ ধরনের প্রশ্নের সংখ্যা টেনেটুনে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ওই ধরনের প্রশ্নের সংখ্যা এত বেশি থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষক।
সংসদের এ দিনের সাধারণ সভায় এ ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আলাদা করে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে পরিবেশ আর পড়তে হবে না। বিজ্ঞান শাখার ছাত্রছাত্রীরা পরিবেশবিজ্ঞান পড়তে পারবেন ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে। পরে কলা ও বাণিজ্য শাখার ছাত্রছাত্রীদেরও এই সুযোগ দেওয়া হবে। অলচিকিতেও সব বিষয়ের পরীক্ষা দেওয়া যাবে। |