উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
কাজিয়া
জল আসবে কবে
দ্বোধন হয়েছিল বাম পুরবোর্ডের আমলে, ২০০৭ সালের শেষে। তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে ফের একই প্রকল্পের উদ্বোধন হল গত ১৪ জুলাই। অথচ, জনসাধারণের প্রাপ্তির খাতায় সেই শূন্যই। পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে প্রস্তাবিত সেই প্রকল্পের থেকে এক ফোঁটা জলও জোটেনি এলাকাবাসীর বরাতে। যথারীতি শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বরাহনগর পুরসভার বিরুদ্ধে অনর্থক টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। আর বর্তমান তৃণমূল পুরবোর্ড কাজ আটকে থাকার দায় চাপাচ্ছে গত বাম বোর্ডের উপরেই। সঙ্গে দ্বিতীয় বার একই প্রকল্পের উদ্বোধনের যুক্তি হিসেবে তাদের বক্তব্য, নতুন উদ্যমে কাজ শুরুর কথা জনগণকে জানাতেই এই সিদ্ধান্ত।
যাবতীয় অভিযোগের কেন্দ্রে ২০০৭-এ বরাহনগরে শুরু হওয়া, দৈনিক ১৫ লক্ষ গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন পরিস্রুত পানীয় জলপ্রকল্পটি। বরাহনগরের বাসিন্দাদের জলকষ্ট দীর্ঘ দিনের। এই সমস্যার কথা ভেবেই ২০০৩-এ তৃতীয় জলপ্রকল্প গড়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে পুরসভা। উদ্দেশ্য ছিল, গঙ্গার জল শোধন করে বেশ কিছু ওয়ার্ডে পৌঁছে দেওয়া। প্রকল্পটি হলে উপকৃত হওয়ার কথা ৬, ৭, ১০ (আংশিক), ২৮ (আংশিক), ৩০, ৩১ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।
বরাহনগর জুটমিলের ভিতরে এই প্রকল্প শুরু করতেই লেগে গিয়েছিল প্রায় সাড়ে চার বছর। ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প শেষের সময়সীমা ছিল দু’বছর। ঠিক হয়, পুরসভা এবং কেএমডিএ সমান ভাবে এই প্রকল্পের খরচ বহন করবে। প্রযুক্তিগত দিকটি দেখভাল করার কথা ছিল বরাহনগর পুরসভার। খরচ কমাতে বরাহনগর জুটমিলের জমিতে তাদেরই পরিকাঠামো ব্যবহার করে প্রকল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ, ওই জুটমিলের নিজস্ব বহু পুরনো জলশোধন প্রকল্পের কাঠামো ছিলই। তা আরও উন্নত ও উপযুক্ত করে বিনা খরচে ব্যবহার করার পরিবর্তে জুটমিলকে নিখরচায় পরিশোধিত জল দেওয়ার কথা ছিল পুরসভার।
কেন আটকে যায় প্রকল্পের কাজ? বরাহনগর পুরসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের অশোক রায়ের দাবি, “প্রায় পঁচাত্তর শতাংশ কাজ আমরাই শেষ করে দিয়েছি। ২০০৮-এ কাজ চলাকালীন বড় ধস নামে ওই জায়গায়। তাতে বেশ কিছু দিন কাজ আটকে থাকে। পরে কাজ শুরু হলেও ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের সময়ে ফের থমকে থাকে কাজ। ২০১০-এর পুর-নির্বাচনে আমরা হেরে যাই। বর্তমান বোর্ড আসার পরে একবিন্দু কাজও এগোয়নি কেন, সে ব্যাপারে ওদের প্রশ্ন করুন।”
কিন্তু কাজ এগোক বা না এগোক, একই প্রকল্প দু’বার উদ্বোধনের যৌক্তিকতা কোথায়?
বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন, তৃণমূলের অপর্ণা মৌলিকের বক্তব্য, “আগের বোর্ড হেরে যাওয়ার পরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পদ্ধতিগত কিছু অদলবদলের পরে ফের নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করা হয়েছে। সে কথাটা সাধারণ মানুষের জানা দরকার। সে জন্যই দ্বিতীয় বার উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” টাকা নষ্টের অভিযোগ নিয়ে অবশ্য তাঁর পাল্টা মন্তব্য: “আগের বোর্ডের টাকা নষ্টের অভিযোগ করা সাজে না। তারা তো কাজ শেষ না করেই পুরসভার তরফে প্রায় দু’কোটি টাকার খরচ দেখিয়েছে। অথচ কীসের ভিত্তিতে এই খরচ, তার কোনও হিসেব দেখাতে পারছে না। প্রকল্পের কোনও প্ল্যান পর্যন্ত নেই পুরসভায়।”
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও কেন গত দু’বছরে একচুল কাজ এগোল না?
বরাহনগর পুরসভা সূত্রে খবর, আগের বোর্ড যে সংস্থাকে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছিল, নতুন বোর্ড ক্ষমতায় আসতেই তারা কাজ ঠিকমতো না বুঝিয়ে বাকি পাওনা টাকার দাবি করে। পুরসভা সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে গোল বাধে। অভিযোগ, প্রকল্পের কোনও প্ল্যান পুরসভায় জমা না থাকায় নতুন করে কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হয়নি। অপর্ণাদেবী আরও বলেন, “কয়েক কোটি টাকা দেনার ভার নিয়ে বসার পরে ফের প্রকল্প শুরু করা সম্ভব ছিল না পুরসভার। তাই আমরা রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হই। প্রকল্প হুবহু একই আছে। পরিবর্তন এসেছে তৈরির দায়িত্বে।” বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকল্প শেষ করতে আরও চার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। যার মধ্যে চলতি আর্থিক বছরে রাজ্য পুর দফতর দিয়েছে ২ কোটি টাকা। আগামী আর্থিক বছরে বাকি ২ কোটি টাকা দেবে পুর দফতর। পুরো কাজটাই করবে কেএমডিএ।
কী কী কাজ বাকি?
কেএমডিএ-র ডিজি (জল সরবরাহ) রজত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “৭৫ শতাংশ নয়, আগে ২৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। জুটমিলের তৈরি জেটির উপর দিয়ে ১৪ ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে গঙ্গার জল তোলার কাজ বাকি আছে। বাকি আছে পাম্প হাউসের কাজ, প্লেট সেটেলর ইউনিট ও ফিল্ট্রেশন ইউনিটের পুরো কাজ। রিজার্ভারের কাজও কিছুটা বাকি। সর্বশেষ ধাপে ওয়াটার সাপ্লাই গ্রিডে কানেকশন দেওয়া হবে। এই ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে সময়সীমা ধরা হয়েছে এক বছর।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.